বিনোদন ডেস্ক :: ২০২০ সালে শুরুর দিকে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলো মাশরুর ইনান। যদিও এ নামের চেয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি পরিচিত ‘কিটো ভাই’ নামে। আদনান আল রাজীব পরিচালিত সেই বিজ্ঞাপনটি আর প্রচারের মুখ দেখেনি।
ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ানো সেই ছেলেটি হতাশ হলেও থেমে থাকেননি। একই বছরে যখন দেশে কোভিড-১৯ হানা দেয় সেসময় উকুলেলে বাজিয়ে বরিশালের ভাষায় গেয়েছিলো ঘরে থাকার সচেতনতামূলক গান, ‘এ গেদু, সমেস্যা কী’। এক গানেই হয়ে গেলেন ভাইরাল, রাতারাতি পান জনপ্রিয়তা।
এরপর থেকেই নিজের চ্যানেলের জন্য তৈরি করতে থাকেন বিভিন্ন রকমের কন্টেন্ট। কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হলেও ‘কিটো ভাই’ গান গাইতে বেশ পছন্দ করেন। বলা যায়, এটাই তার স্বপ্ন। এরপর নাম লেখান অভিনয়ে। টিভি পর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমি পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক ‘হাউজ নং ৯৬’ এ।
সেখানে ‘পাপ্পু ভাই’ চরিত্রে হাজির হয়ে অল্প সময়েই তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পান। এরপর বহু নাটক ও বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব পান। গড়পড়তা কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাননি বলেই বেশিরভাগ কাজই ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে কাজ করেছেন ২টি বিজ্ঞাপনে।
এছাড়াও কাজ করেছেন মাহমুদুর রহমান হিমি পরিচালিত একক নাটক ‘ভুলবশত’ ও কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এ। শুধু তাই নয়, ‘হাউজ নং ৯৬’ নাটকের টাইটেল গানটা তারই গাওয়া। মারুফ হাসানের সাথে যৌথভাবে গানের কথা ও সুর করেছেন তিনি। সংগীত প্রযোজনা করেছে স্টুডিও ফিফটি এইট।
মাশরুর ইনান বলেন, ‘প্রথম ক্যামেরার সামনে দাড়িয়েছিলাম গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনে, কিন্তু সেটি আর প্রচার হয়নি কোনো একটি কারণে। এরপর করনাকালীন সময়ে গতবছর একটি গান করেছিলাম ‘এ গেদু, সমেস্যা কী’। এই একটি গানই যেন বদলে দিলো অনেক কিছু। তারপর ২টি নাটক নাটক করেছি বিশেষ অতিথি হিসেবে।
কিন্তু ‘হাউজ নং ৯৬’ নাটকে যুক্ত হওয়ার পর দর্শকরা আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছেন, সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। টের পেয়েছি তারা আমাকে কতো পছন্দ করেন। এরজন্য হিমি ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। অভিনয় নিয়ে আমার তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
তারপরও হিমি ভাই আমার উপর ভরসা করেছেন, নিজ হাতে ধরে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই কাজটার পর দর্শকদের বেশিরভাগই আমাকে ‘পাপ্পু ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। এটাই বিশাল প্রাপ্তি যে দর্শকরা নাটকের চরিত্রটিকে এভাবে ভালোবেসেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নাটকটির পর আমি অনেকগুলো নাটকের প্রস্তাব পেয়েছি। একটু একটু করে সামনে এগুতে চাই বলে ‘যা পাবো তাই করবো’ থিওরিতে যাচ্ছি না। প্রথমত আমি একদম নতুন এই জায়গাটাতে। অভিনয়ের অনেক কিছুই জানিনা। নতুন হিসেবে আমি শিখছি। অনেকে যখন কাজের প্রস্তাব দেন, তখন সেটা ফিরিয়ে দিলে মনে করেন যে, ভাব দেখাচ্ছি! আসলেও কিন্তু তা না। একদম নতুন হিসেবে কোনো কাজ ফিরিয়ে দেয়াটা খুবই কষ্টের। এটা অনেকেই বুঝতে চান না।’
‘মূলত আমি কিন্তু অভিনেতা না, গায়ক। আমি নিজেকে মিউজিশিয়ান পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। গান নিয়েই আমার সব স্বপ্ন। ওটাকেই নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমার স্বপ্ন ছিলো গায়ক হবো। এখন গান চালিয়ে যাবো, আর পাশাপাশি বেছে বেছে অভিনয় করবো। দুটি নতুন গানের কাজ শেষ করে রেখেছি। শিগগিরই সেগুলো প্রকাশ করবো।’- যোগ করেন ‘কিটো ভাই’
চলতি বছরের নভেম্বরের দিকে স্কলারশীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবেন মাশরুর। সেখানে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়ে পড়াশোনা করতে যাবে। বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তর ধারণা নেয়া এবং ভবিষ্যতে মিডিয়ায় নিজেকে মেলে ধরার প্রত্যাশায় এক বুক আশা বেঁধে দেশ ছাড়বেন তিনি।
‘হাউজ নং ৯৬’ নাটকের নাটকের গল্পে দেখা যায়, রাজধানীর কোনো এক সড়কের ৯৬ নম্বর বাসা ঘিরে। বাসার নিচতলায় থাকে পাপ্পু ও তার মা, বাবা প্রবাসী। ভার্সিটি পড়ুয়া পাপ্পুর পড়াশোনায় তেমন মন নেই। তার কোনো প্রেমিকাও নেই। কেউ বাসা ভাড়া নিতে এলে তার চেষ্টা থাকে, যেন কম বয়সী মেয়ে আছে এ রকম পরিবার সেটা ভাড়া নেয়।
৯৬ নম্বরের এ বাড়িতে থাকেন নানা রকমের মানুষ। টিকটক তারকা, আন্ডারগ্রাউন্ড মাফিয়া, প্রতারক কোম্পানির প্রতিনিধি, স্বাধীন একাকী নারীসহ বিচিত্র সব ভাড়াটিয়া চারতলার ফ্ল্যাটটিতে ওঠেন। নানা কারণে কেউই সেখানে বেশি দিন স্থায়ী হন না। এ ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ও অন্যতলার বাসিন্দাদের নানা ঝামেলা ও খুনসুটি নিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের গল্প। বিভিন্ন সময়ে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে হাজির হচ্ছেন দেশের জনপ্রিয় সব তারকারা।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।