রাজবাড়ী প্রতিনিধি :: রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের বাজার দর কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছে চাষিরা। এতে পেঁয়াজ আবাদে বিঘা প্রতি যে পরিমাণ খরচ হয় সে টাকাই উঠছে না এবছর চাষিদের। এ বছর পেঁয়াজ আবাদে বীজ সহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় পেয়াজে লোকসান হচ্ছে চাষিদের।
আরো পড়ুণ: এই গরমে সুস্থ এবং প্রানবন্তর রাখবে যেসব ফলমূল!
বিগত বছরগুলোতে পেঁয়াজের বাজার দর সব চেয়ে বেশি হওয়ায় চাষিরা লাভবান বেশি হয়েছে, এ কারণে প্রতি বছরই পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করছেন চাষিরা।
আর কৃষি অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর পেঁয়াজের আবাদ ও ফলন বেড়েছে। অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি ও দাম না কমলে চাষিরা পেঁয়াজে লাভবান হবে।
রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার সদর, বালিয়াকান্দি, কালুখালী, গোয়ালন্দ ও পাংশার বিভিন্ন ফসলী মাঠে প্রচুর পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। দাম ভালো পাওয়ার আশায় এ বছরো পেঁয়াজের আবাদ বেশি হয়েছে। রাজবাড়ীতে লক্ষ মাত্রার চাইতে এবছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর পেঁয়াজের আবাদ বেশি।
২০২০ সালে ২৯ হাজার ৯ শত ৭৬ হেক্টর পেঁয়াজ আবাদ হলেও এ বছর তা বেড়ে ৩১ হাজার ৯ শত ৯ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। পেঁয়াজের ফলন ও উৎপাদন দুই বৃদ্ধি পেয়েছে হেক্টর প্রতি। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেশি এবং বাজার দর কিছুটা কমে যাওয়ায় চাষিরা পেঁয়াজ আবাদ করে লোকসানে পড়েছেন।
বিগত কয়েক বছর পেঁয়াজের বাজার দর বেশি থাকায় প্রতি বছরই চাষিরা পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মান ভেদে বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। আর মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৩ টাকায়। বিঘা প্রতি চাষিরা ৩৫ মণ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ পাচ্ছেন। অথচ চাষিদের প্রতি বিঘায় বীজ, চাষ, মজুরী ও সার ঔষধ, কীটনাশকসহ খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এতে প্রতি বিঘা জমি থেকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি লোকসান হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা।
পেঁয়াজ চাষিরা বলেন, বিগত বছরগুলোতে পেঁয়াজের বাজার দর বেশি থাকায় এ বছরও তারা পেয়াজের আবাদ বেশি করেছেন। কিন্তু এ বছর পেঁয়াজ বীজের বাজার দর ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দিয়ে পেঁয়াজ বীজ কিনে আবাদের খরচ বেড়ে গেছে। সার ঔষধের দামও বেশি থাকায় তাদের এ বছর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয়েছে অনেক বেশি। পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও খরচ বেশির কারণে বাজার দর কম থাকায় তাদের খরচের টাকাই উঠছে পেঁয়াজ আবাদ করে। এ বছর তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করা হলে তারা কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করেন।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম শহীদ নুর আকবর বলেন, রাজবাড়ীতে লক্ষ মাত্রার চাইতে এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর পেঁয়াজের আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর ২৯ হাজার ৯ শত ৭৬ হেক্টর পেঁয়াজ আবাদ হলেও এ বছর তা বেড়ে ৩১ হাজার ৯ শত ৯ হেক্টর অর্থাৎ ১ হাজার ৯ শত ৩৩ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। গত বছর হেক্টর প্রতি সাড়ে ১১ মে. টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিলো। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় হেক্টর প্রতি সাড়ে ১১ মে. টনের বেশি উৎপাদন হবে বলে জানান।এ বছর ৩ লাখ ৪৪ হাজার ১ শত মে. টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলেও জানান তিনি।
তবে পেঁয়াজের বর্তমান দাম যদি থাকে এবং বাইরে থেকে যদি পেঁয়াজ আমদানি না করা হয় এবং পেঁয়াজের বাজার দর যদি না কমে তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করেন তিনি।