কতটুকু অর্জিত হয়েছে তাকওয়া !

পূর্ব প্রকাশের পর…

ফিরোজ মাহমুদ :: বিষয়টি অপর একটি দৃষ্টভঙ্গিতে দেখুন। দৃশ্যত রোযার কোনো চেহারা বা অবয়ব নেই।। নফস ও পেটের গভীরে উথিত ক্ষুদা, পিপাসা এবং যৌন চাহিদাকে অন্য কেউ দেখতে পারে না অথবা কেউ এ অনুভূতিতে অংশীদারও হতে পারে না। এ চাহিদাগুলোকে কুরবান করারও দৃশ্যত কোন কাঠামো নেই। অতএব এ চাহিদাগুলোকে ত্যাগ করার বিষয়টি কোনো সুনির্দিষ্ট মানদন্ড দিয়ে মাপা যাবে না।

রোযা তো শুধু প্রভুর উপস্থিতির সুদৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তা এটাকেই মজবুত করে। এটাই এর জীবন। আল্লাহ সবসময় সাথে আছেন, যেখানেই থাকুন না কেন তিনি সর্বত্র উপস্থিত থাকেন। দু ব্যাক্তি এক স্থানে থাকলে সেখানে তৃতীয় জন থাকেন আল্লাহ। কেউ একা থাকলে দ্বিতীয় জন থাকেন তিনি। তিনি শাহরগের চেয়েও বেশি নিকটে। এটা সেই ঈমান, প্রতিটি মুহুর্ত নিজের প্রভুর সামনে উপস্থিত থাকার ঈমান, যা রোযার প্রকৃত ফল। এজন্য হাদীসে কুদসীতে বলা যে, রোযা শুধু আমার জন্য, তাই একমাত্র আমিই এর বিনিময় দিব। (বুখারী ও মুসলিম)

তাকওয়া ঈমানের এ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ঈমান থেকেই তাকওয়া খাদ্য গ্রহন করে। এর উপরই দৃঢ়তা লাভ করে। আর এ পরিবেশই ফুলে- ফলে সুশোভিত হয়। শেষে এবার আপনাদেরকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই। বে-হিসেব লাভবান হবার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র ব্যবহার থেকে বিরত করার চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে শয়তান নতুন প্রচেষ্টা শুরু করে। যাতে করে অন্ততপক্ষে সীমাহীন লাভটাকে কমিয়ে সীমিত করে দেয়া যায়।

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা:) বলেছেন: হে ‘ আয়িশাহ্! তুমি ঐ সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাক যেগুলোকে ছোট বলে ধারণা করা হবে। কেননা এ সমস্ত ছোট ছোট গুনাহগুলোর খোঁজ রাখার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে (ফেরেশতা) নিয়োজিত রয়েছে। (ইবনু মাজাহ, দারিমী, বায়হাক্বীর শুআবূল ঈমান)। এ জন্য আমাদেও উচিত পাপ যতই ছোট হোক না কেন তা পরিত্যাগ করা।

রোযা ও কেয়ামে লাইলের মাধ্যমে সেই তাকওয়া ও অর্জিত হতে পারে যা আপনারা দেখছেন এবং এর দ্বারা এমন তাকওয়া অর্জিত হতে পারে, যার মাধ্যমে কিছু ছোট নেকীর কাজ করে আমাদেরকে সন্তুষ্টি করে দিতে পারে। এতে মোস্তাহাবের চিন্তা নফলের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয় করা হয়। নফলের চিন্তা সুন্নাত থেকে বেশী করা হয়।

সুন্নাতের গুরুত্ব ফরজের চেয়ে বেশী করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা পবিত্র রমযান মাসে রোযা ফরয করে যে তাকওয়া অর্জন করার শিক্ষা দিয়েছেন তা এর চেয়ে অনেক বড় জিনিস। এটা সেই তাকওয়া যার মাধ্যমে আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সমষ্টিক পর্যায়ে এ রমযানে নাজিল হওয়া কুরআন মাজীদের মিশনকে পূর্ণ করার এর হক আদায়কারী উত্তরসূরী হতে পারি। এ কথা এজন্য জানা দরকার যে, এমনটি হয়েছে এবং হতে থাকে যে, রোযাদার রোযা রাখতে থাকে, রাত্রি জাগরণকারী রাত্রি জেগে থাকে কিন্তু এক কদমও সেই পথে অগ্রসর হয় না, যে পথে রমযানের রোযা এবং তেলাওয়াতে কুরআন তাদেরকে নিয়ে যেতে চায়।

এ ফরযকে আদায় করার চিন্তা আমরা তখন করতে পারি, যখন আমরা কুরআন মাজীদ, রমযানের রোযা এবং তাকওয়ার পারস্পারিক সম্পর্ককে ভালোভাবে বুঝতে পারবো। এ পর্যন্তকার আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্যে এটাই ছিল। এ মাসে রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা নিজেদের মধ্যে সেই তাকওয়া (আল্লাহ ভিতী) সৃষ্টি করি, যার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার দেয়া পথনির্দেশকে কিতাবের হক আদায় করার শক্তি ও যোগ্যতা অর্জিত হয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন- আমীন।

চলবে…..
লেখকঃ মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব

 

 

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুণ।

এগুলো দেখুন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

জেনে নিন রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *