জেনে নিন টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে। আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারতি জেনে নেওয়া যাক। শীতকালে টনসিল একটি জটিল সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না, তা কিন্তু নয়।
টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটাকে টনসিলাইটিস বলি। মানবদেহে গলার ভেতরে দুপাশে একজোড়া প্যালাটিন টনসিল থাকে, টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকেই বুঝে থাকি।
- আরো পড়ুন: কোলন ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণের উপায়
- আরো পড়ুন: কোলন সংক্রমণ এড়াতে সবচেয়ে ক্ষতিকারক ৩ খাবার
- আরো পড়ুন: কোলন ক্যান্সার: লক্ষণ ও সমাধান(এটুজেড)
টলসিল ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী।
টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। এ ইনফেকশনের অন্য কারণগুলোর মধ্যে আছে বারবার ঠান্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা; অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়ে আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।
লক্ষণ
১. টনসিলে গলাব্যথা এবং সাথে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে।
২. এ ক্ষেত্রে গলাব্যথার সাথে জ্বর ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সাথে খাবার গ্রহণে অরুচি এবং বমির ভাব থাকতে পারে।
৩. গলার সাথে কানের সম্পর্ক আছে। তাই টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।
৪. শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।
৫. অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে।
এরকম সমস্যাকে তীব্র ইনফেকশন বা একিউট টলসিলাইটিস বলা হয়। চিকিৎসকের দেওয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সাধারণত এন্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের উপদেশের মাধ্যমে টনসিলের ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। তবে কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে বারবার দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে Chronic tonsillitis বলা হয়।
চিকিৎসা শাস্ত্রে Chronic tonsillitis-কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তবে এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে ৪ থেকে ৫ বার করে পরপর ২ বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়াই শ্রেয় এবং স্থায়ী সমাধান।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিন্মুক্ত সমস্যা হতে পারে
১. টনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে।
২. টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
৩. ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।
৪. রক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৫. বয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই এ ধরনের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অস্ত্রোপচার করানো ভালো এবং নিরাপদ। আমাদের দেশে প্রতিদিন নিয়মিত টনসিলের অস্ত্রোপচার হচ্ছে।
- আরো পড়ুন: শিশুর জন্মগত হৃদরোগে চিকিৎসা
- আরো পড়ুন: শিশুর কানে ব্যথা হলে করণীয়
- আরো পড়ুন: শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার
কখন টনসিলের অপারেশন করা যাবে না
১. টনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে অর্থাৎ জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না।
২. তিন বছরের কম শিশুদের।
৩. এছাড়াও কারো রক্তে হিমেগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে/রক্তশূন্যতা থাকলে।
৪. হিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগের ইতিহাস থাকলে।
৫. নারীদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায়।
আশার কথা, তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ওষুধ সেবন, উপদেশমতো ঠান্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং আদা-লেবু রং চা পান করলে অপারেশনের টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।