তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (অঙ্গ প্রতঙ্গের রোযা) নিয়ে আজকের আলোচনা করবেন, ফিরোজ মাহমুদ॥ দেখতে দেখতে কেটে গেল এই বরকতময় মাসের আট আটটি দিন। বরফের মত গলে যাচ্ছে এ পবিত্র মাস। কিন্তু আমাদের ভাগে কতটুকু জমা হয়েছে মহান আল্লাহর রহমত? এতো কষ্ট করে পালন করা রোযাগুলো রাসূল (স:) এর পদ্ধতি অনুযায়ী হচ্ছে তো? আমার হৃদয়, চোখ, কান, মুখ সব অঙ্গ প্রতঙ্গ রোযাদার তো? আসুন আজ জেনে নেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোযা সম্পর্কে।
চোখের রোযা: মহান আল্লাহর হারামকৃত জিনিস দেখা হতে বিরত থেকে রোযাদারের চোখ রোযা রাখে। হারাম কিছু চোখে পড়লে সে তার চক্ষুকে অবনত করে নেয়, অশ্লীল কিছু দেখা হতে দৃষ্টিকে ঝুকিয়ে রাখে। যেমন, সে নোংরা ফিল্ম এবং শ্লীলনতাহীন টিভি সিরিজ ইত্যাদি হতে বিরত থাকে মহান আল্লাহ মুমিন পুরুষদেরকে সম্মোধন করে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে বলেন, “মুমিন পুরুষদের কে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হিফাযত করে; এটিই তাদের জন্য উত্তম”। আর মুমিন নারীদের সম্মোধন করে উক্ত সূরার ৩১নং আয়াতে মহান আল্লাহ “মুমিন পুরুষদের কে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হিফাযত করে;” অতএব সর্বাবস্থায় আমাদের দৃষ্টিকে হেফাযত করতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমীন।
কানের রোযা: রোযাদারের কানেরও রয়েছে রোযা। কারণ রোযাদারের কানও রোযা রাখে ; রোযা রাখে নোংরা ও অশ্লীল কথা শোনা থেকে। রোযা রাখে অবৈধ প্রেম ও ব্যভিচারের দিকে আহবানকারী গান-বাজনা শোনা থেকে। রোযা রাখে আল্লাহর হারামকৃত এবং কথা তাকে ক্রোধান্বিত ও অসন্তুষ্ট করে সে কথা থেকে। আর তিনি তার সম্পর্কে সেদিন কৈফয়ত নেবেন। যেদিন মানব-দানবকে একত্রিত করবেন।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন সূরা বানী ইসরাঈলের ৩৬ নং আয়াতে বলেন, “কর্ন, চক্ষু, হৃদয়- ওদের প্রত্যেকের বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
পেটের রোযা ঃ রোযাদারের পেটও রোযা রাখে ; রোযা রাখে হারাম খাদ্য দ্বারা তা পরিপূর্ন করা থেকে। সুতরাং; সে হারাম খাবার সাহরীতে খায় না এবং ইফতারীতেও না। সে কোন প্রকার সুদ খায় না। খায় না ঘুস, এতীমের মাল এবং হারাম উপায়ে উপার্জিত কোন অর্থ। কেননা, হারাম খেলে দু’আ কবুল হয় না।
উভয় হাত ও পায়ের রোযা ঃ রোযাদারের উচিত। তার হাতও যেন হারাম নেওয়া, ধরা ও স্পর্শ করা থেকে রোযা রাখে। সুতরাং তার হাত যেন রোযা রাখে মানুষের উপর অত্যাচার করা থেকে, কাউকে ধোকা দেওয়া থেকে, অন্যায়ভাবে কাউকে মারা থেকে, সুদ, ঘুস, চুরি, ভেজাল বা অন্য হারাম কারবারের মাধ্যমে অর্থ গ্রহন করা থেকে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এখানে
যেমন তার ‘পা’ যেন রোযা রাখে। আর তার রোযা হবে যে পথে গেলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন সে পথে তথা সকল প্রকার পাপাচারনের পথে চলা হতে বিরত থাকে। আর প্রিয় নবী (স:) বলেন “ যে ব্যাক্তি রোযা রেখে হারাম কথা ও তার উপর আমল ত্যাগ করতে পারল না, সে ব্যাক্তির পানাহার ত্যাগ করার মাঝে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (বুখারী, ইবনে মাজাহ)
আমাদের উচিত, যাবতীয় পাপাচার সমস্ত রকম কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা তবেই ইনশাআল্লাহ আমাদের কষ্টের রোযাগুলো হবে সার্থক। আর তার বিনিময়ে পাওয়া যাবে স্বয়ং রব্বুল আলামীনের হাত থেকে পুরষ্কার। আল্লাহ তাওফীক দিন-আমীন।
চলবে…..
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব
আরো পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (হৃদয়ের রোযা)
পূর্বে প্রকাশিত: তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (রোযার আদব সমূহ)
আরো পড়ুন:-তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (রোযার আদব সমূহ)
আরো পড়ুন: ফজিলতে রমযান পর্ব:-২