ফজিলতে রমযান পর্ব:-২

ফিরোজ মাহমুদ॥ ফজিলতে রমযান এটি আরবী বার মাসগুলোর একটি। আর এটি দ্বীন ইসলামের একটি সম্মানিত মাস। রহমত, বরকত ও মুক্তির।

“অনেক রোযাদার এমন আছেন, যাঁরা নিজেদের রোযা থেকে ক্ষুৎ-পিপাসায় কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পান না। অনেকে রাতের নামায পড়ে থাকেন। কিন্তু তাদের নামায রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না’’ (দারেমী),

আসুন জেনে নেই সম্মানিত এ মাসের কিছু মহত্ব ও ফজিলত- সম্পর্কের বাকি অংশ

৭। রমযান মাসে সাওম পালন করা পূর্ববর্তী রমযান থেকে কৃত গুনসমূহের কাফফারাহ লাভের কারণ। আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা:) হতে বলেন যদি কাবীরাহ গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয় আর পাঁচ ওয়াক্তের পাঁচবার সালাত, এক জুমু’আহ থেকে অপর জুমু’আহ, এক রমযান থেকে অপর রমযান এর মাঝে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ করে। (মুসলিম)

৮। এই মাসে যে ইমামের সাথে, শেষ পর্যন্ত ক্বিয়াম করে, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে হিসাব করা হবে। আবূ দাউদের হাদীসে নবী করীম (সা:) বলেছেন: “যে ইমাম চলে যাওয়া পর্যন্ত ইমামের সাথে ক্বিয়াম করল (রাতের সালাত তারাবীহ) আদায় করল সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে ধরে নেয়া হবে।” অতএব আমাদের উচিত প্রতিরাতেই ক্বিয়ামুল লাইল ধীর স্থিরভাবে ইমামের সাথে সম্পন্ন করা। আল্লাহ তাওফিক দিন আমীন।

৯। রমযানে সাওম পালনকারীকে ইফতার করানো মুস্তাহাব, খালিদ আল-জুহাদী হতে বর্নিত হাদিসে যাতে তিনি বলেছেন যে, রাসূল (সা:) বলেছেন “যে কোন সাওম পালনকারীকে ইফত্বার করায়, তার (যে ইফত্বার করালো) তাঁর (সাওম পালনকারীর) সমান সওয়াব হবে, অথচ সেই সাওমপালনকারীর সাওয়াব কোন অংশে কমে না।”

আর যে কোন রোযাদারকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবে, মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আমার হাউস থেকে এমন শরবত পান করাবেন যে জান্নাতের প্রবেশের আগে তার আর পিপাসা লাগবে না। (সহীহ ইবনে খুজাইমা,বায়হাকি, সুআবুল ইমান) তাই আপনাকে এখন থেকেই প্রতিদিন অন্তত একজন রোযাদারকে ইফতারি করানোর নিয়্যাত করতে হবে। আবার আপনি স্থানীয় মসজিদেও ইফতারি দিয়ে এ সওয়াব হাসিল করতে পারেন।

১০। রমযান মাসে কুরআন অধ্যয়ন ও তা বেশি বেশি তিলাওয়াত করা, খুবই তাগিদের সাথে করণীয় ও মুস্তাহাব কাজ কারণ রমযানের সঙ্গে কুরআন শব্দগত ও মর্মগত বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত অসাধারণ মিল ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কুরআন হলো রমযানের নিগূঢ় তত্ত্ব: রমযানের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক ও সু-গভীর। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “রমযান মাস এমন যে, তাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে; মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে”। (বাকারা-১৮৫)

তাই রাসূল (স:) এ ব্যাপারে যোর তাগিদ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে “জিবরাঈল (আ:) রমযান মাসে প্রতি রাতে নবী (স:) এর সাথে সাক্ষাত করতেন এবং কুরআন অধ্যায়ন করতেন। (মুসলিম ) রমযানের অন্যতম সুন্নত হচ্ছে কুরআন তেলাওয়াত , সাহাবায়ে কিরাম প্রায় সারা বছর প্রতি মাসের প্রতি সপ্তাহে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। প্রতি সাত দিনে এক খতম পড়তেন বলেই কুরআন মাজিদ সাত মন্জিলে বিভক্ত হয়েছে।

তারা রমযান মাসে আরো বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। রাসূলুল্লাহ (স:) এর জীবনের শেষ রমযানে দশম হিজরীর রমযান মাসে মহানবী স. জিবরাইল (আঃ) কে পূর্ন কুরআন মাজিদ দুবার শোনান এবং জিবরাইল (আঃ) ও মহানবীকে পূর্ন কুরআন মাজিদ দুবার শোনান। এতে বোঝা গেল রমযান শুধু কুরআন নাজিলের মাস নয়; বরং রমযান মাস হলো কুরআন শিক্ষন, প্রশিক্ষণ, কুরআন পঠন-পাঠন ও কুরআন চর্চার মাস এবং সর্বোপরি রমযান মাস হলো জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআন অনুশীলন ও বাস্তবায়নের মাস।

রমযান মাসে যেসব আমলের মাধ্যম আপনি মহান আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারবেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই কুরআন মাজিদের তিলাওয়াত, ও অর্থসহ অধ্যায়ন করা।

১১। সাহরী গ্রহণ করা : মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে রোযার জন্য সাহরী খাওয়ার উম্মাহার এবং যে ব্যক্তি তা ইচ্ছাকৃত খায় না সে গোনাহগার নয় তবে খাওয়া সুন্নত। আর এ কারনেই যদি কেউ ফজরের পর জাগে এবং সেহরী খাওয়ার সময় না পায়, তাহলে তার জন্য জরুরী রোযা রেখে নেওয়া। এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। বরং ক্ষতি হবে তখন, যখন সে কিছু খেতে হয় মনে করে তখনই (ফজরের পর) কিছু খেয়ে ফেলবে। সে ক্ষেত্রে মাসয়ালা হলো রমযানের পরে তাকে ঐ দিনের রোযা কাযা করতে হবে। সাহরী খাওয়া যে উত্তম তা প্রকাশ করার জন্য মহানবী স. উম্মতকে বিভিন্নভাবে বলে গেছেন এবং উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি সাহরীকে উত্তম খাদ্য বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন,“তোমরা সাহরী খাও। কারণ, সাহরীতে বরকত আছে। (বুখারী ১৮২৩) তোমরা সাহরী খেতে অভ্যাসি হও। কারণ সেহরী হলো বরকতময় খাদ্য।“(আহমদ)” ইরবায় বিন সারিয়াহ বলেন, একদা রমযানে আল্লাহর রসূল (স:) আমাকে সাহরী খেতে ডাকলেন; বললেন, “বরকত খানার দিকে এসো।” (আবু দাউদ) সাহরীতে বরকত থাকার মানে হল, সাহরী রোযাদারকে সবল রাখে এবং রোযার কষ্ট হালকা করে। আর এটা হল, শারীরিক বরকত। পক্ষান্তরে শরয়ী বরকত , হল রাসূল (স:) এর আদেশ পালন এবং তার অনুসরণ।

মহানবী (স:) এই সাহরীর গুরুত্ব বর্ননা করতে গিয়ে তা দিয়ে মুসলিম ও আহলে কিতাব (ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানদের) রোযার মাঝে পার্থক্য চিহ্নিত করেছেন। তিনি অন্যান্য ব্যাপারে তাদের বিরোধীতা করার মত তাতেও বিরোধীতা করতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের মাঝে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া।” (মুসলিম)

কি খেলে সাহরী খাওয়া হবে? অল্প-বিস্তর যে কোন খাবার খেলেই সাহরী খাওয়ার বিধি পালিত হয়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুপরী (রা:) থেকে বর্নিত, আল্লাহর রসূল (স:) বলেন, ” সাহরী খাওয়াতে বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা ছেড়ো না; যদিও তাতে তোমরা এক ঢোক পানিও খাও। কেননা যারা সাহরী খায় তাদের জন্য আল্লাহ রহমত ও বরকত বর্ষন করেন এবং ফিরিশতা দু’আ করতে থাকেন। (আহমদ, সহীহুল জামেইস সগীর)

চলবে…..

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব

 

পূর্বে প্রকাশিত পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন

 

ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

এগুলো দেখুন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

জেনে নিন রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *