ফজিলতে রমযান

ফিরোজ মাহমুদ :: রমযান…. এটি আরবী বার মাসগুলোর একটি। আর এটি দ্বীন ইসলামের একটি সম্মানিত মাস। রহমত, বরকত ও মুক্তির

মাস। তাই কিছু করার জন্য এবং নিজের ভাগের রহমত পাওয়ার জন্য কোমর কষে নিন এবং নবী করীম স. এর সতর্কবানীটিকে ভালোভাবে স্বরন রাখুন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “অনেক রোযাদার এমন আছেন, যাঁরা নিজেদের রোযা থেকে ক্ষুৎ-পিপাসায় কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পান না। অনেকে রাতের নামায পড়ে থাকেন। কিন্তু তাদের নামায রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না’’ (দারেমী)

রমযান মাসের মহত্ম ও বরকতের রহস্য কোন জিনিসটির মধ্যে লুকায়িত আছে সর্ব প্রথম এটা জানা দরকার। আসুন জেনে নেই সম্মানিত এ মাসের কিছু মহত্ব ও ফজিলত-

১। আল্লাহ তা’আলা সাওমকে (রোযাকে) ইসলামের আরকানের মধ্যে চতুর্থ রুকন হিসেবে সম্মান দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তা’আলা বলেন, “রমযান মাস যে মাসে আল কুরআন নাযিল করা হয়েছে, মানুষের জন্য হিদায়াতের উৎস, হিদায়াত ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন; সুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই মাস পায় সে যেন সাওম পালন করে” (আল বাকারাহ : ১৮৫)

২। আল্লাহ তা’আলা এই মাসে আল কুরআন নাযিল করেছেন, যেমনটি আল্লাহ তা’আলা সূরা বাকারার ১৮৫ নং ও সূরা ক্বদরে বলেছেন, “নিশ্চই আমি একে লাইলাতুল ক্বদরে নাযিল করেছি। (আল কুরআন) (ক্বদর-১)

৩। আল্লাহ এই মাসে লাইলাতুল ক্বদর রেখেছেন যে মাস হাজার মাস থেকে উত্তম, আল্লাহ তা’আলা সূরা আল-ক্বদরে বলেছেন (ক্বদরের রাতের ফজিলত বিস্তারিত সামনে আলোচনা করা হবে ইনশা-আল্লাহ)।

“আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে রমযান, এক মুবারক (বরকতময়) মাস। এ মাসে সিয়াম পালন করা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর ফরয করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়। আর এ মাসে রয়েছে আল্লাহর এক রাত যা হাজার মাস থেকে উত্তম, যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত হল” (নাসাঈ)

৪। আল্লাহ তা’আলা এই মাসে ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় সিয়াম পালন ও ক্বিয়াম (রাতের সালাত, তারাবীহ) করাকে গুনাহ মাফের কারণ করেছেন, যেমন দুই সহীহ হাদিস গ্রন্থ বুখারী (২০১৪) ও মুসলিম (৭৬০) এ বর্নিত হয়েছে। উক্ত হাদিসদ্বয়ে রাসূল স. বলেছেন; “যে রমযান মাসে ঈমান সহকারে সাওয়াবের আশায় সাওম পালন করবে তাকে অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি রমযান মাসে ঈমান সহকারে সাওয়াবের আশায়‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। সুবহান-আল্লাহ!

হাদীসটিতে “ঈমান সহকারে সাওয়াবের আশায়” শর্ত জুরে দেয়া হয়েছে। তাই আসুন আমরা আরো একবার নবায়ণ করে নেই আমাদের ঈমান। আর আশা করি সাওয়াবের। এবার ক্বিয়াম শব্দটির অর্থ বুঝে নেই, মুসলিমদের মাঝে রমযানের রাতে ক্বিয়াম করা সুন্নাহ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে। ইমাম আল-নাওয়াউয়ী (রাহি:) বলেন: “রমযানে ক্বিয়াম করার অর্থ হল তারাবীহের সালাত আদায় করা ও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা। অর্থাৎ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের মাধ্যমে ক্বিয়াম করার উদ্দেশ্য সাধিত হয়”।

৫। আল্লাহ ত’আলা এই মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন, এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন এবং শয়তানদের শেকলবদ্ধ করেন। (মিশকাত: ১৯৬২)

৬। এ মাসের প্রতিরাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে তার বান্দাদের মুক্ত করেন। ইমাম আহমাদ (৫/২৫৬) আবু উমমাহ এর হাদীস থেকে বর্ননা করেছেন যে নবী স. বলেছেন: “আল্লাহর রয়েছে প্রতি ফিত্বরে (ইফত্বারের সময় জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দারা”।

অপর হাদিসে রাসূল স. বলেছেন “নিশ্চই আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার রয়েছে (রমযান মাসে) প্রতি দিনে ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দাগন আর নিশ্চয়ই একজন মুসলিমের রয়েছে প্রতিদিনে ও রাতে কবুল যোগ্য দুআ,” তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দুআ করা, কারণ হাদিসে দুয়াকে ইবাদতের অংশ বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন-আমীন।

চলবে…..

লেখক ঃ মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত

এগুলো দেখুন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

জেনে নিন রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *