শিক্ষা প্রতিনিধি :: গত ২৬ এপ্রিল মাঠপর্যায়ে ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম।
নির্দেশ অনুযায়ী গত ১০ মের মধ্যে দেশের সব জেলা উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের এ বেতন গ্রেড বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও একাধিক উপজেলায় দরকষাকষিতে ব্যস্ত শিক্ষা কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে একাধিক শিক্ষক সংবাদকর্মীদের অভিযোগ করে বলেন, অধিদপ্তর থেকে ১০ তারিখ সময় বেধে দেওয়ার পরও কাজ হচ্ছে না। এজি অফিসে কাগজ পড়ে আছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও এজি অফিস সবারই আন্তরিকতার অভাব আছে। এরফলে এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বহুল প্রতিক্ষিত ১৩তম বেতন গ্রেড।
একাধিক শিক্ষক সংগঠনের নেতা ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও বাগেরহাটের শরণখোলায় ১৩তম গ্রেড নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা রীতিমত দরকষাকষিতে ব্যস্ত আছে।
কবিরহাট উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ৫’শ টাকা করে দাবি করেছে। দীর্ঘসময় টাকার পরিমাণ নিয়ে দরাদরি চললেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় এই উপজেলার কোনো শিক্ষকের ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন হয়নি।
অপরদিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার শিক্ষকরাও একই অভিযোগ করে জানান, এসব উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা ৪০০-৫০০ টাকা দাবি করছেন। শিক্ষকরা টাকা পরিশোধ না করায় ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়নও থেমে আছে।
জানতে চাইলে ফরিদপুর বোয়ালমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আহাদ মিয়া সংবাদকর্মীদের বলেন, আমার উপজেলায় ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়নের পথে। আমরা ২৮ তারিখে একাউন্ট অফিসে কাগজপত্র দিয়েছি। আশা করছি এই মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে।
টাকা নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো টাকা পয়সা লেনদেন করা হচ্ছে না। এছাড়াও ডিজির নির্দেশের পরও কেনো কাজ শেষ হলোনা এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এছাড়াও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এর আগে ২৬ এপ্রিল মাঠপর্যায়ের সব প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন হয়নি এবং অনেক শিক্ষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলম।
নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের কর্মবণ্টন প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দেয়া তথ্য সংকলন করে জেলা ভিত্তিক প্রতিবেদন ৯ মের মধ্যে স্ব স্ব বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
এরপর জেলা ভিত্তিক বিস্তারিত প্রতিবেদন ১০ মে’র মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের (অর্থ) কাছে পাঠাতে হবে। এরপর ১৩তম গ্রেড নির্ধারণ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে পরিচালক অর্থ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঠিকানায় হার্ডকপি বা সফটকপি বা ইমেইল করে ১০ মের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
এরপরও কেনো ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন হলোনা এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষকসহ শিক্ষক সংগঠনের নেতারাও প্রশ্ন তুলেন। শিক্ষক নেতা মাহবুবর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একই সমস্যা। কিছু শিক্ষক নামের দালাল সাধারণ শিক্ষকদের থেকে চাঁদা তুলে নিজেদের পকেটে ভরছেন ও শিক্ষা অফিসে দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনসুরুল আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) খালিদ আহম্মেদ সংবাদকর্মীদের বলেন, এ বিষয়ে আমরা টপ ম্যানেজমেন্ট এর সাথে কথা বলছি, চিঠিপত্র লেখালেখি হচ্ছে। অর্থ সচিবের সাথেও কথা বলবো। দেখি মাঠপর্যায়ে কড়া কোনো নির্দেশনা দেয়া যায় কি না অথবা টেকনিক্যালি সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও চলছে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।