যাকাতের বিধি বিধান! পর্ব-১

ফিরোজ মাহমুদ :: ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভই হচ্ছে যাকাত। মুসলমানের জন্য ঈমান আনার পর নামায রোযা ফরজ ঠিক যাকাতও তেমনি ফরজ। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য যাকাতের গুরুত্ব অত্যাধিক। ইসলামের আর্থিক ফরজ ইবাদতের মধ্যে জাকাত একটি।

তাইতো ইসলামী অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে যাকাত। আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমের অনেক জায়গায় জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। যারা যাকাত আদায় করে না তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সংবাদ।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে ইমরানের ১৮০ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে।

যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।

সুরা তাওবার ৩৪ ও ৩৫ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন- আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে কোন স্বর্ণ বা রুপার মালিক যদি আপন সম্পদের মালের যাকাত আদায় না করে, তার এ সম্পদকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে কিয়ামতের দিন তা দ্বারা পিঠ, পার্শ্ব এবং কপালে ছ্যাকা দিবেন।

আর যখনই তা ঠান্ডা হবে সাথে সাথে আগুনে পুণরায় উত্তপ্ত করা হবে। এমন দিনে তাকে শাস্তি দেয়া হবে যে দিনটি হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। আর বান্দার বিচারকার্য শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। অত:পর সে দেখতে পাবে তার গন্তব্য হয় জান্নাতের দিকে নয় তা জাহান্নামের দিকে।’

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন,‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দিয়েছেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার সম্পদকে দুই মুখ বিশিষ্ট বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। তারপর সাপটিকে কিয়ামতের সে দিবসে তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে। সাপ তার দুই মুখে দংশন করতে করতে বলতে থাকবে, আমি তোমার বিত্ত, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ।’ আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।

কুরআন, হাদিস ও ইজমার আলোকে যাকাত ইসলামের অন্যতম অপরিহার্য ফরজ দায়িত্ব বলে প্রমাণিত। যার অস্বীকার করা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যকারী কাফের বলে গন্য; আর অনাদায়কারী ফাসেক এবং কঠিন শাস্তির যোগ্য।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা যেন একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করবে। আর এটাই হলো দ্বীন,” (সূরা আল-ব্যায়্যিনাহ-৫) যাকাত প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন আর সালাত আদায় করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋন দাও। (সূরা মুজ্জাম্মিল ২০)

এ ছাড়া পবিত্র কুরআনে অসংখ্যবার ও হাদিসের কিতাবে জাকাতের আলাদা অধ্যয় রচনা হয়েছে। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তির অন্যতম হচ্ছে এই যাকাত। সুতরাং বোঝা গেল, যাকাত ইসলামের একটি রুকন ও মৌলিক ভিত্তিগুলোর একটি। ইজমায়ে উম্মত তথা সকল মুসলিম স্কলাররা অকাট্যভাবে একমত যে, যাকাত মুসলিম উম্মাহর সামরর্থবানদের জন্য একটি ফরজ বিধান।
চলবে…..
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব

 

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুণ।

এগুলো দেখুন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন

জেনে নিন রোজার আগে যে দোয়া বেশি পড়বেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *