যাদের উপর কোরাবানি ওয়াজিব

যাদের উপর কোরাবানি ওয়াজিব ফিরোজ মাহমুদ :: কুরবানী শব্দটি ‘কুর্ব’ ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ নৈকট্য। কুরবান হল, প্রত্যেক সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আর সেখান থেকেই ফারসী বা উর্দু-বাংলাতে গৃহীত হয়েছে ‘কুরবানী’ শব্দটি। আত্মত্যাগের দুরূহ ও কঠিন পথ পেরিয়েই মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব।

এ কোরবানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতি। হজরত ইবরাহিম (আ.) ত্যাগের পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে নিজের সন্তানের গলায় তীক্ষ খঞ্জর চালিয়েছিলেন। তাঁর কাজ আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় হয়ে উঠেছিল যে কিয়ামত পর্যন্ত সব সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর সেই ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতির অনুশীলনে কোরবানি করা ওয়াজিব। তাই কোরবানি শুধু মোটাতাজা জন্তু জবাইয়ের মহড়া দেওয়া নয়। কোরবানি শুধু উৎসব-আনন্দে, ভোগ-বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেওয়া নয়। কোরবানি হলো, আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বিনম্র প্রকাশ।

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব

কোরবানি মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকী বিধানাবলির অন্যতম। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছর কোরবানি করতেন। যাদের ওপর জাকাত ওয়াজিব, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এতে গরিব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়।

কোরবানিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে। এতে আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের সব চাহিদা ও যুক্তি কোরবানি (ত্যাগ) করার শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত: ১৬২)

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী, যে কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা ওই পরিমাণ রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৬৫)

আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা—এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজনাতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যেমন কারো কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সমান, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার: ৫/২১৯)

কোরবানির নিসাব পূর্ণ হওয়ার জন্য জাকাতের মতো সম্পদের বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, শুধু কোরবানির তিন দিন নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াই যথেষ্ট। এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলে কোরবানি দিতে হবে,এটাই জমহুর ওলামাদের মত। (বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৬২)

অনেকের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়, কিন্তু তারা ঋণ করে হলেও কোরবানি করে থাকেন, এমনটি অনুচিত।

এ ধরনের কারো কারো মনের অভিব্যক্তি হলো, ‘কোরবানির দিন আমার সন্তান কার মুখের দিকে চেয়ে থাকবে। ’ এমন চিন্তা থেকে কোরবানি করলে কোরবানি হবে না, গোশত খাওয়া হবে।

কোরবানি মূলত ধনীদের ইবাদত, যেভাবে জাকাত ও হজ ধনীদের ইবাদত। ধনীদের মধ্যে পাপাচারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। হতে পারে, এজন্য তাদের বিশেষ ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে, যাতে তারাও পাপমুক্ত জীবনে ফিরে আসতে পারে।


আরো পড়ুন: যেমন ছিল মহানবী (সঃ) -এর কুরবানি


একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব। (কিফায়াতুল মুফতি: ৮/১৭৮)

শরিকে কোরবানি করলে গোশত ওজন করে বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নেই। তবে হাড্ডি-মাথা ইত্যাদি যেসব অংশ সাধারণত সমানভাবে ভাগ করা যায় না, সেগুলো অনুমান করে ভাগ করা যাবে। এতে সামান্য কমবেশি হলে সমস্যা নেই। (ফাতাওয়া কাজিখান: ৩/৩৫১)

লেখক: ইসলামি গবেষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।

এগুলো দেখুন

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম

ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে?

জেনে নিন ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে? আসুন এ বিষয়ে কোরআনে কি বলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *