রোযা অবস্থায় আমরা যা করতে পারবো এই সম্পর্কে আজকের আলোচনা করবেন ফিরোজ মাহমুদ॥ আজকে আমরা আলোচনা করবো রোযা অবস্থায় এমন কিছু কাজ আছে যা আমরা করতে পারবো না বলে জানি। অথচ রোযা অবস্থায় আমরা তা করতে পারি তাতে রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
১। রোযাদারের জন্য পানিতে নামা, ডুব দেওয়া ও সাঁতার কাটা, এসির হাওয়াতে বসা এবং কাপড় ভিজিয়ে গায়ে-মাথায় পানি ঢালা, বরফ বা আইচক্রিম চাপানো বৈধ, তাতে রোযার কোন অসুবিধা নেই। (সাবউনা মাসআলাহ ফিস-সিয়াম)
আবু কাকর বিন আব্দুর রহমান নবী (স:) এর সাহাবী থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলে, “আমি রাসূল (স:) কে দেখেছি তিনি রোযা রেখে পিপাসা অথবা গরমের কারনে নিজ মাথায় পানি ঢেলেছেন। (আবু দাউদ)
অবশ্য সাঁতার কেটে খেলা করা মাকরূহ। কারণ, তাতে রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । কিন্তু যার কাজই হল ডুবরীর অথবা প্রয়োজনের তাকীদে পানিতে বারবার ডুব দিতে হয়, সে ব্যাক্তি পেটে পানি পৌছানো থেকে সাবধান থাকতে পারলে তার রোযার কোন ক্ষতি হবে না। (মাসয়ালা ফিস-সিয়াম)
২। মিসওয়াক বা দাঁতন করা ঃ দাঁতন করা রোযাদার-অরোযাদার সকলের জন্য এবং দিনের শুরু ও শেষ শেষ ভাগে সব সময়কার জন্য সুন্নত। আব্দুর রহমান বিন গুনম বলেন, আমি মুআয বিন জাবাল (রা:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি রোযা অবস্থায় দাঁতন করব? উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যা’! আমি বললাম, ‘দিনের কোন ভাগে’? তিনি বললেন, ‘সকালে অথবা বিকালে’। আমি বললাম, ‘লোকেরা তো রোযার বিকালে দাঁতন করাকে অপছন্দনীয় মনে করে।
তারা বলে, আল্লাহর রাসূল (স:) বলেছেন, “নিশ্চই রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্তুরীর সুবাস অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধময়,” মুআয (রা:) বলেন, ‘সুবাহানাল্লাহ’ ! তিনি তাদেরকে দাঁতন করতে আদেশ দিয়েছেন। আর যে জিনিস তিনি পরিষ্কার করতে আদেশ দিয়েছেন, সে জিনিষকে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্গন্ধময় করা উত্তম হতে পারে না। তাতে কোন প্রকারের মঙ্গল নেই; বরং তাতে অমঙ্গলই আছে”।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এখানে
কিন্তু যদি কোন দাঁতনে বিশেষ স্বাদ থাকে এবং তার থুথুকে প্রভাবান্বিত করে, তাহলে তার স্বাধ বা থুথু গিলে নেওয়া উচিত নয়। পেষ্ট বা মাজন দিয়ে দাত মাজার মাসয়ালা হচ্ছে, রোযার দিনে দাঁতের মাজন (টুথ পেষ্ট বা পাউডার ) ব্যবহার না করাই উত্তম। বরং তা রাত্রে এবং ফজরের আগে ব্যবহার করা উচিত।
কারণ, মাজনের এমন প্রতিক্রিয়া ও সঞ্চার ক্ষমতা আছে, যার ফলে তা গলা ও পাকস্থলীতে নেমে যাওযার আশংকা থাকে। অনূরূপ আশঙ্কার ফলেই মহানবী (স:) লাকীত্ব বিন সাবরাহকে বলেছিলেন, “(ওযূ করা সময়) তুমি নাকে খুব অতিরঞ্জিত ভাবে পানি টেনে নিও। কিন্তু তোমরা রোযা থাকলে নয়। (আবূ দাউদ) তাই রোযাদারের জন্য মাজন ব্যবহার না করাই উত্তম। পক্ষান্তরে নেশাদার ও দেহে অবসন্ন আনেয়নকারী মাজন; যেমন গুল-গুরাকু প্রভৃতি; যা ব্যবহারের ফলে মাথা ঘোরে অথবা ব্যবহারকারী জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। তা ব্যবহার করা বৈধ নয়; না রোযা অবস্থায় এবং না অন্য সময়। (বুখারী ও মুসলিম)
আর যদি, দাঁতের মাড়িতে ক্ষত থাকার ফলে অথবা দাঁতন করতে গিয়ে রক্ত বের হয়, তাহলে তা গিলে ফেলা বৈধ নয় ; বরং তা বের করে ফেলা জরুরী। অবশ্য যদি তা নিজের ইচ্ছা ও ইখতিয়ার ছাড়াই গলায় নেমে যায়, তাহলে তাতে ক্ষতি হবে না। (ইবনে উষাইমীন)
চলবে…..
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব
আরো পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (হৃদয়ের রোযা)
পূর্বে প্রকাশিত: তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (রোযার আদব সমূহ)
আরো পড়ুন:-তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমযান (রোযার আদব সমূহ)
আরো পড়ুন: ফজিলতে রমযান পর্ব:-২