সার্বজনীন অার্থিক সহযোগীতা প্যাকেজ ঘোষনা লকডাউন সফলে ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘ প্রায় একবছরের বেশী সময় ধরে চলমান করোনা মহামারির ধাক্কায় সমগ্র বিশ্বের মানুষের জীবনমান এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
শুরুর দিকে করোনার জন্য লকডাউন বা জনস্বার্থে আরোপিত নানাবিধ বিধি নিষেধের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র সীমিত করার বিষয়টি সাধারন মানুষের সহনশীলতার মধ্যে ছিল কিন্তু সেই সময়কাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় আস্তে আস্তে তা অনেক মানুষের সহনশীলতার মধ্যে না থেকে কষ্টের পর্যায়ে রূপ নিয়েছে।
করোনা যেহেতু প্রাকৃতিক সৃষ্ট একটি দূর্যোগ বা মহামারি তাই এটি যাতে মারাত্মক আকার ধারন না করে বা নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন ও সচেতনতার বিকল্প নেই।কিন্তু আমরা অনেকেই সচেতন নই এবং সচেতন থাকলেও ঘনবসতি ও অধিক
জনসংখ্যার জন্য সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকলে করোনা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিধায় সবার মঙ্গলের জন্য লকডাউন ও কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা জরুরী হয়ে পড়ে।করোনার ব্যপকতা রোধ করার জন্য বর্তমান সময়ে লকডাউন জনস্বার্থে আরোপিত একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।পাশাপাশি লকডাউনের জন্য আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদরা যাতে অর্থাভাবে অনাহারে না থাকে বা জীবন জীবিকা নিয়ে অনিশ্চিয়তার না ভোগে সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত,কারন এগুলো মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যুস্ত করে ফেলে।
এবং এমন পরিস্থিতিতে মানুষ যখন ভাবে বাহিরে বের হয়ে নিজের পেশা বা কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারলে অন্তত নিজ পরিবার অনাহারে থাকবে না বা নিজে মানসিক অশান্তি থকে মুক্তি পাব তখন অনেকে লকডাউন মানতে চায়না,লকডাউনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,মিটিং মিছিল করে অথবা নীরবে লকডাউন অমান্য করে কাজে যোগদান করতে যায় যার ফলে সরকারের নানামূখী উদ্দ্যোগ ও প্রচেষ্টা থাকার ফলেও লকডাউন হয় ঢিলেঢালা বা লকডাউনের সফলতা পূরোপূরি পাওয়া যায় না।সরকার সকল জনগনের প্রতিনিধি,
সরকারকে সকল জনগনের কল্যান ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই সকল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে হবে।করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে পর্যায়ে গেছে তা মহামারি আকার ধারন করা রোধ করার জন্য বর্তমান সময়ে জনগনের কল্যানে সরকার ঘোষিত লকডাউনই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত,পাশাপাশি সত্যিকার অর্থে করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য জনগনকে ঘরে রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করাও অতীব জরুরী।
সাধারন জনগনকে ঘরে রাখতে হলে সার্বজনীন অর্থনৈতিক সহযোগীতা প্যাকেজ ঘোষনা করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।তাতে যদি সাময়িক সময়ের জন্য কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের(যেগুলো সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখলে কোন ক্ষতি হবে না)কাজ সীমিত সময়ের জন্য বন্ধ রাখতেও হয় তারপরেও জনগনের বৃহৎ স্বার্থে তা করা উচিত।
সার্বজনীন অর্থনৈতিক সহযোগীতা প্যাকেজ হতে পারে দেশের সকল পরিবারের জন্য প্রতিমাসে অন্তত ১০০০০ টাকা বা মানসম্মত পরিমান টাকা প্রদান করা যা দিয়ে একটি পরিবার প্রতিদিন তিনবেলা খেয়ে জীবন ধারন করতে পারে,যেসকল পরিবার স্বচ্ছল তারা উক্ত সহযোগীতা গ্রহনে স্বেচ্ছায় অস্বীকৃতি জানাতে পারবে বা বিনিময়ে তারা পরবর্তি বছর সমপরিমান টাকার ট্যাক্স বা ভ্যাট মওকূফ বা অন্য কোন সরকারী সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এরফলে সবার মধ্যে লকডাউন মানার নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং সরকারও লকডাউন মানতে সবাইকে কঠোরভাবে বাধ্য করতে পারবে যাতে লকডাউনের সফলতা অতিসহজে ও দ্রুত অর্জিত হবে।পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগীতা প্যাকেজটি সার্বজনীন হওয়ায় তা বন্টনে অনিয়ম বা দুর্নীতি হওয়ায় সুযোগ থাকবে না।
এটা আমার নিজস্ব মতামত মাত্র,আলোচনার মাধ্যমে এরচেয়েও ভাল কোন মতামত বা পন্থা খুজে বের করতে পারলে তা বাস্তবায়ন করে হলেও করোনা নিয়ন্ত্রন এবং সাধারন মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়ন লাঘব হোক এই প্রত্যাশা রইল। লেখকঃ এডভোকেট মোঃকাওসার হোসাইন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি,আইনগ্রন্থ প্রনেতা ও কলামিষ্ট