জেনে নিন ৫জন স্বনামধন্য খেলোয়াড়দের ৫টি ভাল গুণ। আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ক্রিকেটাররা সব সময়ই শিশু-কিশোরদের কাছে রোল মডেল। কারণ, ক্রিকেটারদের ভাল গুণ সবাইকেই আকৃষ্ট করে। এটা কেবল ক্রিকেটারদের ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ের জন্যই নয়। বরং, খেলার মাঠে এবং মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের মানসিকতা শিশুদেরকে তাঁদের মত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। ক্রিকেট বছরের পর বছর ধরে অনেক আইকনিক খেলোয়াড়দের দেখেছে যাদের অনবদ্য গুণগুলো ক্রিকেটপ্রেমিদেরকে প্ররোচিত করে।
- আরো পড়ুন: কিভাবে ভালো ফিল্ডার হবেন – ক্রিকেট ফিল্ডিং টিপস
- আরো পড়ুন: ওয়ানডে ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন
- আরো পড়ুন: ক্যাচ ধরার ১০টি কৌশল
চলুন ৫জন স্বনামধন্য খেলোয়াড়দের ৫টি ভাল গুণ জেনে নিই, যা একজন মানুষকে ভালো মানুষ হিসেবে এবং তার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করে।
ক্রিকেটারদের ৫টি ভাল গুণ!
নিচে বিশ্ব বিখ্যাত ৫ জন ক্রিকেটারের এমন ৫টি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে যেগুলো শুধু শিশু-কিশোরদের জন্যেই নয়, বরং সব শ্রেণীর মানুষেরই থাকা প্রয়োজন। যারা ক্রিকেট খেলেন কিংবা খেলবেন, আর যারা শুধু ক্রিকেট লাভার, সবার জন্যেই জীবনে সফল হতে হলে এই গুণগুলো থাকা প্রয়োজন। আসুন, ক্রিকেটারদের ব্যক্তিত্বে লুকিয়ে থাকা সেই বিশেষ গুণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
১. রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে শিখুন ফোকাস বা লক্ষ্য স্থির করা
রাহুল দ্রাবিড়, যাকে এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্যা ওয়াল’ নামে ডাকা হত। রাহুল দ্রাবিড়ের মাঝে অন্যরকম একটি গুণ ছিলো, আর তা হলো ফোকাস ঠিক রাখা, অর্থাৎ লক্ষ্য স্থির করা। তিনি যে সময় ব্যাটিংয়ে নামতেন বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে, সে সময়ে তাঁকে লম্বা সময় ধরে উইকেটে টিকে থাকার প্রয়োজন হত।
কিন্তু, এই কাজটি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের সত্যিকার অর্থে অনেক বড় একটি কাজ। আর সেটি ঠিকঠাকভাবে করার জন্য প্রয়োজন ছিলো নিজের ফোকাস ঠিক রাখা। আর এই কাজটিই রাহুল দ্রাবিড় খুব ভালভাবেই করতেন। তিনি তার দলের জন্য সব সময়েই রান করার লক্ষ্য ঠিক রাখতেন এবং দলকে ম্যাচ জয়ে সাহায্য করতেন।
ক্রিকেটে স্লেজিং একটি কমন শব্দ হয়ে গেছে। এটি এখন হর-হামেশাই হয়ে থাকে। রাহুল দ্রাবিড়কেও কম স্লেজিং সহ্য করতে হয়নি। তবে, বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা তার মনোযোগ ভাঙ্গার জন্য স্লেজিং করার চেষ্টা করতো। কিন্তু এসব কোনো কিছুই তাঁকে তার লক্ষ্য থেকে আলাদা করতে পারতো না। এ বিষয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সম্পর্কে বলছি।
২০০১ সালে ভারতের মুম্বাইতে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির একটি ম্যাচে রাহুল দ্রাবিড়ের একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন মাইকেল স্লেটার। তবে, ক্যাচটি স্পষ্ট ছিল না। আর তাই সেটি থার্ড আম্পায়ারের কাছে সিদ্ধান্ত চলে গেল। থার্ড আম্পায়ার (টিভি আম্পায়ার) জানিয়ে দিলেন এটি নট আউট।
তবে, আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মাইকেল স্লেটার। তার কাছে মনে হয়েছিল তিনি সত্যি ক্যাচটি নিয়েছিলেন। এরপর, এই সিদ্ধান্তে বিরক্ত হয়ে স্লেটার বেশ অনেকবার রাহুল দ্রাবিড়কে স্লেজিং করেছিলেন, ব্যাটিংয়ে তার মনোযোগ ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় স্লেটারের স্লেজিংকে পাত্তা না দিয়ে বরং আরও বেশি মনোযোগী হলেন ব্যাটিংয়ে।
এ বিষয়ে খেলা শেষে মাইকেল স্লেটার বলেন, “রাহুল দ্রাবিড়কে স্লেজিং করাটা ছিল আমার জীবনের একটি ভুল। সে তার মেজাজ একবারও হারায়নি, আমি এতবার স্লেজিং করার পরেও। আমি এটা না বলে পারছি না যে, সে একাই বিশ্বের সেরা টিমকে হারিয়ে দিলো। আমার ভেতরে যখন ক্রোধ ভর করছিল, আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমি ছিলাম একটি পশু, কিন্তু সে (রাহুল) ছিলো একজন ভদ্রলোক। সে ঐমূহুর্তে আমার হৃদয় জয় করে নিয়েছিল।”
তাই, রাহুল দ্রাবিড়ের মত করে, যেকোনো কাজে আপনার ফোকাস বা লক্ষ্য স্থির রাখতে শিখুন। আর যদি রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ভাল ব্যাটসম্যান হতে চান, তবে বিশ্ব বিখ্যাত কোচ রিচার্ড পাইবাসের দেওয়া ১০টি ব্যাটিং টিপস মেনে চলুন।
২. বিরাট কোহলির কাছ থেকে শিখে নিন জয়ের স্পৃহা
বর্তমান সময়ে ভারত তথা সারা বিশ্বেই বিরাট কোহলি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ক্রিকেটার। বিরাট কোহলিকে লোকে কেবল তার ব্যাটিংয়ের জন্যই নয়, বরং তার আগ্রাসী ব্যক্তিত্বের জন্যেও চিনে থাকে। এটা ঠিক যে, বিরাট কোহলি তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তার এই আগ্রাসী মনোভাবটি খেলার মাঠে নেতিবাচক ছিলো। বিশেষ করে একটি ঘটনা বলা যায়।
এটি ২০১২ সালের ঘটনা। সে সময় তিনি সিডনিতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একটি টেস্ট খেলায় অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের উদ্দেশ্যে মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছিলেন। তবে, ধীরে ধীরে তিনি তার নেতিবাচক স্বভাবগুলো পরিবর্তন করে ফেলেছেন। কিন্তু খেলার প্রতি তার যে আগ্রাসী মনোভাব সেটি এখনও বজায় আছে। আর এর কারণেই তিনি কখনই কোন ম্যাচে হারতে চান না।
আর তাই জয়ের জন্য যে স্পৃহাটা দরকার সেটি তিনি পান তার আগ্রাসী ব্যক্তিত্বের কারণেই। খেলার যেকোনো পরিস্থিতিতে বিরাট কোহলি ভয় না পেয়ে বরং আরও আগ্রাসী মনোভাব ও খেলার প্রতি তার পরিশ্রমটাই তাঁকে আজকের বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনে করা হয়। ক্রিকেটারদের ভালো গুণ হিসেবে জয়ের স্পৃহা তার মাঝে ভালো করেই প্রোথিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বিরাট কোহলির সম্পর্কে বলেন, “বিরাটের আগ্রাসন মনোভাবটাই তার অন্যতম শক্তি। এভাবেই সে খেলতে পছন্দ করে আর এভাবেই সে সাফল্য পায় এবং এভাবেই সেই খেলা চালিয়ে যাতে চায়।”
৩. স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের কাছ থেকে শিখুন ধৈর্য-সহিষ্ণুতা
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক লেগ স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলকে মনে করা হয় সব থেকে হতভাগ্য ক্রিকেটার। তার কারণ, তিনি যে সময় লেগ স্পিনার হয়ে খেলতেন, সে সময়ই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সারা বিশ্বে রাজত্ব করে বেড়াতো বিশ্বের অন্যতম লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। আর তাই, জাতীয় দলে স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল সুযোগ পেয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সে। যে সময়টা একজন ক্রিকেটারের জীবনের অর্ধেক পথ বলা চলে।
শেন ওয়ার্ন ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলেছিলেন। অন্যদিকে, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছিলেন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত। আর তাই, শেন ওয়ার্নের মত একজন জাদুকরী বোলার ছিল বিধায় স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল দলে সুযোগ পেয়েছিলেন খুব কমই। কিন্তু যতটুকু সুযোগ পেয়েছিলেন, সেটাই কাজে লাগিয়েছেন ধৈর্য সহকারে।
জাতীয় দলে খেলার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে, তিনিও ছিলেন। আর ঘরোয়া লিগে তিনি ধৈর্য ধারণ করে নিয়মিত পারফর্মেন্স করে গেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি এ পর্যন্ত ১৮৪ ম্যাচ খেলে ৭৭৪টি উইকেট অর্জণ করেছেন যা একজন ক্রিকেটারের জন্য ঈর্ষণীয় সাফল্য। কিন্তু সেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র ৪৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন এবং এই ৪৪টি টেস্টে তিনি উইকেট শিকার করেছেন ২০৮টি। অন্যদিকে, ওডিআই খেলেছেন মাত্র ৩টি।
স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ক্যারিয়ার জুড়ে যে ধৈর্য-সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন সেটা থেকে আমরা শিখতে পারি যে জীবনে কোন কিছুর সুযোগ না পেলেও নিজের কাজ ঠিকমত করে চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাফল্য একদিন না একদিন আসবেই। আর স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল কিংবা শেন ওয়ার্নের মত লেগস্পিন বল করবেন কিভাবে তা জেনে নিতে কিংবা অন্যকে জানাতে ভুলবেন না।
৪. স্যার ভিভ রিচার্ডসের কাছ থেকে শিখুন আত্মবিশ্বাস ধারণ করা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার ভিভ রিচার্ডস যে সময় ক্রিকেট খেলতেন, এখনকার সময়ের মত তখনকার ব্যাটসম্যানরা এতটা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ক্রিকেট খেলতেন না। তবে, সে সময়কার ব্যাটসম্যানদের মত স্যার ভিভ রিচার্ডস ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন অনেকটা এখনকার বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের মত। বলা চলে, আধুনিক ক্রিকেটের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের গুরু হচ্ছেন স্যার ভিভ রিচার্ডস। একমাত্র তিনিই বলকে সব সময় দূরে আছড়ে ফেলতে বেশি পছন্দ করতেন সে সময়।
বলা হয়ে থাকে, বড় বড় হিট করতে ব্যাটসম্যানদের অনেক আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। আর সেই আত্মবিশ্বাসটাই ক্রিকেটারদের মাঝে প্রথম বপন করেছিলেন স্যার ভিভ রিচার্ডস। তাই, যে কোন কাজ যত কঠিনই হোক না কেন তা আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা করা উচিত। আর এই শিক্ষাটাই আমরা শিখতে পারি স্যার ভিভ রিচার্ডসের কাছ থেকেই যা ক্রিকেটারদের ভাল গুণ হিসেবে বিবেচিত।
- আরো পড়ুন: ক্রিকেট খেলায় কিভাবে অলরাউন্ডার হবেন?
- আরো পড়ুন: দক্ষ উইকেটকিপার হতে চাইলে যে ৬টি টিপস মেনে চলবেন
- আরো পড়ুন: ক্রিকেট ফিল্ডিংয়ে ভালো করার ১০টি দুর্দান্ত উপায়!
৫. যুবরাজ সিং এর কাছ থেকে শিখুন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জীবন জয়ের উপায়
কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। কথাটি নেহাত কেবল কথার কথা নয়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং এর জীবনে ঘটে যাওয়া গল্প থেকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাকানো যুবরাজ সিংকে লড়াই করতে হয়েছিল ক্যান্সারের সাথে। মূহুর্তের মধ্যেই তার সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। একদিকে মৃত্যু ভয় আরেকদিকে তার ক্যারিয়ারটাও বুঝি শেষ, এই শংকায় তার দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতবেন।
২০১১ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন যুবরাজ। সেই তিনি ২০১১ বিশ্বকাপ খেলা চলাকালীন শ্বাস কষ্টে ভুগেছিলেন। পরে জানা গেছে তার বুক ও বাম ফুসফুসের মাঝে প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার একটি টিউমার রয়েছে। কিন্তু এ-সব অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তিনি। খেললেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, শিরোপাও জয় করলেন।
নিজের ইচ্ছাশক্তির জোড়েই ক্যান্সার থেকে ফিরে এসে নতুন করে জাতীয় দলে খেললেন তিনি। যুবরাজের কাছ থেকে আমরা শিখতে পারি ইচ্ছাশক্তির জোরে কিভাবে ফিরে আসা যায়।
আশা করি, ক্রিকেটারদের ভালো গুণ সম্পর্কে, বিশেষ করে ৫জন বিখ্যাত ক্রিকেটারের ৫টি বিশেষ গুণ সম্পর্কে জেনে আপনাদের ভালো লেগেছে। এর মাঝে কার কোন গুণটি বেশি ভালো লেগেছে, তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। কিংবা এই ৫জন ক্রিকেটারের মধ্যে কাকে আপনার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে, তাও জানাতে পারেন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।