আজকে আমরা জানব কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায় এবং সফল হওয়া যায়।
ফ্রিল্যান্সিং মানে মুক্ত পেশা, ফ্রিল্যান্সিং মানে নিজের যোগ্যতায় নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা মাথায় আসলেই আমাদের মনে আসে কঠোর পরিশ্রম, আর দক্ষতার কথা! তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়?
শুরুতেই জেনে নিব, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকা সম্পর্কে
কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়
বর্তমানে এ দেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ছয় লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ নিয়মিত কাজ করছে। বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশনের তথ্য অনুযায়ী তারা বার্ষিক ১০ কোটি ডলার আয় করছে। যার বাংলাদেশ বাজার মূল্যা বর্তমান সময়ে ১০,৩৬২,৮৩০,০০০ টাকা। এটি একটি অনেক বড় এমাউন্ট আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকা অপরিসিম।
প্রত্যেকটি ফ্রিল্যান্সার নিজ নিজ দক্ষতা অনুযায়ী আয় করে, যার যত দক্ষতা তার তত বেশি আয়ের সুযোগ।
চাইলে আপনিও বেছে নিতে পারেন এই মুক্ত পেশা যার মাধ্যমে হতে পারেন সাবলম্বি। আর ভূমিকা রাখতে পারেন বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে।
আপনি যদি না জেনে থাকেন, ফ্রিল্যান্সিং কি বা ফ্রিল্যান্সিং করবে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আশাকরি আপনি একটি পরিপূর্ন ধারণা ও গাইডলাইন পাবেন নিজেকে প্রমান করার জন্য।
ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হওয়ার ৫টি নিঞ্জা টেকনিকঃ
কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়
বললেই ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হয়ে যাওয়া যায় না। ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হওয়ার জন্য আপনাকে মন মানসিকতা ঠিক করতে হবে।
কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য রাখতে হবে প্রত্যেকটি অবস্থানে, কখনও ভালো হবে আবার কখনও খারাপ।
কিন্তু ভেঙ্গে পরলে চলবে না। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সফল হওয়ার ৫টি নিঞ্জা টেকনিক এর ব্যপারে–
১) সঠিক কাজ শিখাঃ আপনাকে বুঝতে হবে কোন কাজে আপনি পারদর্শি বা কোন কাজে আপনি আগ্রহী। আর সে অনুযায়ী আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য একটি কাজ শিখতে হবে।
মনে রাখবেন কাজ শেখার সময় আপনার মোটিভ থাকবে কাজ শেখার প্রতি কোন ধরণের টাকার প্রতি না। এমনটা হলে মাঝপথে ছিটকে যাবেন।
কোন কাজটি আপনার জন্য যোগ্য হবে তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
আর সঠিক কাজট শেখার আগে আপনি গুগল কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা বিভিন্ন গ্রুপের সাহায্য নিতে পারেন।
আপনার যেই কাজের প্রতি আগ্রহ আছে তাই শিখুন।
২) পোর্টফোলিও তৈরি করুনঃ একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার অবশ্যই একটি পোর্টফোলিও রাখতে হবে।
আপনার পোর্টফোলিও আপনার কৃতিত্ব এবং অতীতের প্রকল্পগুলি দেখানের মাধ্যমে আপনার কাজের মান স্থাপন করে। পোর্টফোলিওতে আপনার পরিষেবা অফার সম্পর্কিত আপনার সেরা কাজ হাইলাইট করা উচিত।
পোর্টফোলিওর প্রতিটি অংশে আপনার অবদানের একটি পরিষ্কার ছবি আঁকা উচিত।
যেখানে দেখা যাবে কিভাবে সেই প্রকল্পটি ক্লায়েন্টকে উপকৃত করছে।
কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়
৩) আপনার পরিষেবা এবং অফার সংঙ্গায়িত করুনঃ আপনার দক্ষতাকে একটি পরিষেবাতে পরিণত করা একটি ফ্রিল্যান্সার হওয়ার প্রথম ধাপ।
এটি করার জন্য, আপনাকে বুঝতে হবে কিভাবে আপনার দক্ষতা একজন সম্ভাব্য ক্লায়েন্টকে সাহায্য করতে পারে।
এটি স্বীকার করা অপরিহার্য যে ক্লায়েন্ট একটি সমস্যার সমাধান খুঁজছেন।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে, আপনাকে ক্লায়েন্টের পরিস্থিতি বুঝতে হবে এবং তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার পরিষেবা ব্যবহার করতে হবে।
এখন সেই পরিষেবাটির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিয়ে আসার সময় যা আপনাকে কোম্পানির কাছে আপনার ফ্রিল্যান্স পরিষেবা বিক্রি করতে সহায়তা করে।
আপনি কী করতে পারেন, আপনি কীভাবে এটি করেন এবং কি ধরনের ব্যবসা/ক্লায়েন্টের জন্য তা সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করুন।
এ পর্যায়ে দাম সম্পর্কে চিন্তা করবেন না।
৪) একটি ভাল মানের প্রস্তাব লিখুনঃ একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে একটি সফল সূচনা নিশ্চিত করতে, আপনার প্রথম প্রকল্পটি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং ক্ষমতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলে।
আপনি যখন এমন একটি প্রকল্প খুঁজে পান যার জন্য আপনি আত্মবিশ্বাসী যে আপনি চমৎকার পরিষেবা প্রদান করতে পারেন, তাহলে প্রস্তাব জমা দেওয়া উচিৎ।
আরও পড়ুনঃ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা
কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়
সঠিক প্রস্তাবের অর্থ একটি চাকরি নিশ্চিত করা।
আপনাকে এমন ভাবে প্রস্তাবটি বানাতে হবে যাতে ক্লায়েন্ট আপনার প্রস্তাব দেখার পর ইন্টারেস্ট হয়।
এক্ষেত্রে প্রস্তাবটিতে আপনি কাজের কোন ডেমো দেখাতে পারেন।
প্রস্তাবটি এমন হতে হবে যাতে ক্লায়েন্ট বুঝে আপনি কাজটি সম্পর্কে সত্যিই খুব এক্সপেরিয়েন্সড।
এবং এই কাজটি আপনি খুব ভাল ভাবেই করতে পারবেন।
৫) ক্লায়েন্ট রিভিউঃ ধরেণ আপনি একটি কাজ শেষ করেছেন, এখন আপনি বায়ারকে কাজ জমা দিবেন।
তাহলে বায়ারকে এখন আপনাকে আরও একটি প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
ক্লায়েন্টকে প্রস্তাবের মাধ্যমে বলবেন, যাতে সে আপনাকে একটি সুন্দর রিভিউ দিয়ে দেয়।
অবশ্যই ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করার সকল ব্যবস্থা কঠোর ভাবে নিতে হবে।
এবং ফাইনালি দয়াশীল ভাবে রিভিউ দেওয়ার জন্য ক্লায়েন্টকে অনুরোধ করবেন।
মূলত ক্লায়েন্ট রিভিউ আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যদি আপনি অনলাইন কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন।
রিভিউ আপনাকে নতুন কাজ পেতে সাহয্য করবে।
স্পেশাল টেকনিকঃ
কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়
আপনি কখনোই আপনার পেশাকে বোরিং হতে দিবেন না। বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সাররা ফেইল হওয়ার একমাত্র কারন হচ্ছে বোরিং কাজ। আমরা যখন কোন কাজ প্রতিনিয়ত করে থাকি তখন আমাদের মস্তিষ্ক এই কাজকে নরমালি নেয়।
তাই মস্তিষ্ক কোন ভয় ফিল করেনা। মস্তিষ্কের এই রূপ আচরনের কারনেই হাজারও ফ্রিল্যন্সার এমনিতেই হেরে যায় এক অসাধারণ যুদ্ধ করতে করতে।
তাই প্রতিদিন নিজের কাজকে অনেক এক্সাইটেড বানিয়ে তুলুন। একই কাজের মধ্যে প্রতিনিয়ত নতুনত্য খুঁজুন। এভাবেই সম্ভব একজন সফল ফ্রিল্যন্সার হওয়া। আপনি নিজের কাজকে নিজের মোটিভেশন বানিয়ে ফেলুন, ইনশাআল্লাহ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন।
শেষ কথাঃ
উক্ত পদ্ধতিগুলো আপনার জীবনে এপ্লাই করে আপনিও নিঞ্জা হাতুরির মতো নিঞ্জা ফ্রিল্যান্সার হয়ে যেতে পারেন।
আশাকরি উক্ত পদ্ধতিগুলো আপনি সঠিক ভাবে এপ্লাই করলে কোন বিষয়ে আটকে যাবেন না।
আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য আপনাকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনার যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।