বদলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্র

বদলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্র । জেনে নিন কি কি পরিবর্তন আসছে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্রে। খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হচ্ছে আলুটিলা। দীর্ঘদিন এই পর্যটনকেন্দ্রটির ‘আকর্ষণ’ অবহেলিত থাকলেও তা এবার বদলাতে শুরু করেছে। তাই কেন্দ্রটিকে পর্যটনবান্ধব করে তুলতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।



খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে পর্যটনকেন্দ্র আলুটিলার উন্নয়নে করা হচ্ছে মাস্টার প্ল্যান। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার পর এটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্র

১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা ঘোষণার পর পর্যটনকেন্দ্রটির দায়িত্ব পড়ে জেলা প্রশাসনের ওপর। রহস্যময় প্রাকৃতিক গুহা হচ্ছে পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। দেশের অন্যতম দীর্ঘ প্রাকৃতিক এই গুহাটিকে ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তা এতদিন ছিল অবহেলিত। এখানে আসা পর্যটকরা কেবল গুহা দেখলেও পর্যটনবান্ধব তেমন কোনো স্থাপনা ছিল না। ফলে কেবল গুহা দেখেই ফিরে যেতেন পর্যটকরা।

কিন্তু বর্তমানে আলুটিলা কেন্দ্র করে মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া এবং প্রবেশমুখেই স্বর্ণ তোরণ। কুঞ্জছায়া থেকে পাখির চোখে দেখা মেলে নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি শহর ও দূরের পর্বত শ্রেণি। সেখানে বৃষ্টির সময় মেঘ এসে যেন ছুঁয়ে যায় পর্যটকদের।

এ ছাড়া মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে সেখানে নির্মাণ হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দনকানন পার্ক, এমপি থিয়েটার ও খুমপুই রেস্ট হাউস।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আলুটিলা হচ্ছে জেলার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। তবে এ স্থানটিতে সম্ভাবনা অনুযায়ী তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই এখানে পর্যটনের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেভাবে কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এখানে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ের যে ধরনের স্থাপত্যশৈলী তার সাথে সঙ্গতি রেখেই দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াআলুটিলার ২ টি পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ। এতে পর্যটকরা গুহা দেখে ঝুলন্ত ব্রিজের মাধ্যমে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে পারবে। আর সে পাহাড়গুলোতেও পর্যটনবান্ধব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

পাহাড়ে স্থাপনার মধ্যে আছে ল্যান্ডস্কেল গার্ডেনিং। যেখানে বসে পর্যটকরা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া নির্মাণ হবে ভিউ পয়েন্ট বা ছবি কর্নার। পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে এএমপি থিয়েটার। দর্শক গ্যালিরিতে বসে ৫’শ পর্যটক একসাথে পাহাড়ের সংস্কৃতি বিষয়ে পরিচিত হতে পারবে।

অনেক পর্যটক খাগড়াছড়ি সাজেক বেড়াতে এসে শহরে রাতযাপন করে। তাই পর্যটকরা যাতে আলুটিলা পাহাড়ে রাতযাপন করতে পারে সে জন্য এখানে খুমপুই রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ২ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে ৪ তলাবিশিষ্ট এই রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

খাগড়াছড়ির আলুটিলায় বেড়াতে আসা বিভিন্ন পর্যটকরা জানান, এখানে প্রাকৃতিক গুহা দেখতে এসেছেন তারা। এর পর পুরো পর্যটনকেন্দ্রটি ঘুরেছেন। এখানে অনেক স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে আলুটিলা আরো আকর্ষণীয় হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস আরো জানান, খাগড়াছড়ির অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত পর্যটন। এ খাতের সাথে অনেক মানুষ সম্পৃক্ত। তাই পর্যটনের উন্নয়নে আলুটিলাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এখানে দিনে অন্তত ১ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন। তাই আলুটিলাকে পর্যটকবান্ধব করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির স্থানীয় বাসিন্দা সুইটি চাকমা ও প্রতিভা ত্রিপুরা বলেন, আগে কেবল দিনের বেলায় আলুটিলায় ভ্রমণ করা যেত। এখন সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই রাতের বেলাতেও এখান থেকে শহরটাকে দেখা যায়। এখানে নিরাপদে ভ্রমণ করা যায়। দিন ও রাতে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা ও চন্দ্রকিরণ ত্রিপুরা বলেন, আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনেক স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। বর্তমানে পর্যটকদের আগমনও বেড়েছে।



সরকারি ছুটির দিনগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার পর্যটক আলুটিলায় বেড়াতে আসে। এ ছাড়া প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঝুলন্ত ব্রিজসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে এখানে পর্যটকদের আগমন আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ইনচার্জ একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, আলুটিলাকে ঘিরে মাউন্টেন ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। দীর্ঘদিন পর হলেও আলুটিলাকে ঘিরে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে পাহাড়ের পর্যটন অর্থনীতি আরো বিকশিত হবে বলেও জানান তিনি।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে

‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে

জেনে নিন ‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে । দেশের মধ্যেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *