যাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে

জেনে নিন যাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। আসুন এ বিষয়ে কোরআনে কি বরা হয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ভালো আচরণ তথা সদ্ব্যবহার মানুষের জীবন ও সমাজকে আলোকিত করে। মানবজীবনে এ সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ৯ শ্রেণির মানুষের সাথে সদ্ব্যবহারের কথা বলেছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ তাহলে কোরআনে ঘোষিত এ ৯ শ্রেণির লোক কারা; যাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ এসেছে?



যাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ৯ শ্রেণির মানুষের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَّ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ بِذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡجَارِ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡجَارِ الۡجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالۡجَنۡۢبِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ وَ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنۡ کَانَ مُخۡتَالًا فَخُوۡرَا

‘আর সদ্ব্যবহার কর বাবা-মার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সাথে, ইয়াতিমের সঙ্গে, মিসকিনের সঙ্গে, নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সঙ্গী-সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী’ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আন-নিসা : আয়াত ৩৬)

কোরআনে ঘোষিত ৯ শ্রেণির ব্যক্তি হলো-

১. বাবা-মা, ২. নিকটাত্মীয়, ৩. ইয়াতিম, ৪. মিসকিন, ৫. নিকটাত্মীয় প্রতিবেশী, ৬. অনাত্মীয় প্রতিবেশী, ৭. পাশ্ববর্তী সঙ্গী-সাথী, ৮. মুসাফির, ৯. মালিকানাভূক্ত দাস-দাসী। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

১. বাবা-মা

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তাঁর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপনের পর সর্ব প্রথম বাবা-মার সাথে সদ্ব্যবহার নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মীয়-অনাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সবার আগে বাবা-মার সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

আল্লাহ তাআলা নিজের বান্দার প্রতি নিজের ইবাদাত-বন্দেগি ও হকসমূহের পরপরই বাবা-মার অধিকার সম্পর্কিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষে সব নেয়ামত ও অনুগ্রহ একান্তই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসে কিন্তু বাহ্যিক উপকরণের দিক দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহর পরে মানুষের প্রতি সর্বাধিক ইহসান বা অনুগ্রহ থাকে বাবা-মার। মানুষের অস্তিত্বের পেছনেও বাবা-মা প্রধান। এমনকি জন্ম থেকে যৌবন প্রাপ্তি পর্যন্ত যেসব কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়; তার প্রতিটিতেই বাবা-মাই সন্তানকে সেগুলোতে সাহায্য করে থাকেন।

এ কারণেই মহান আল্লাহ তার ইবাদত করার নির্দেশ এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি বাবা-মার প্রতি সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ঘোষণা করেছেন-

وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡهِ ۚ حَمَلَتۡهُ اُمُّهٗ وَهۡنًا عَلٰی وَهۡنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ

আর আমি মানুষকে তার মা-বাবার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার ও তোমার বাবা-মার শুকরিয়া আদায় কর। আমার কাছেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৪)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত রয়েছে।’ (তিরমিজি)

২. আত্মীয়-স্বজন

এ আয়াতে সব আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার তাকিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআনুল কারিমের প্রসিদ্ধ এক আয়াতে বিষয়টি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে; যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই বিভিন্ন ভাষণের পর তেলাওয়াত করতেন। তা হলো-

اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকটাত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯০)

সুতরাং সামর্থ্যানুযায়ী আত্মীয়-স্বজনের কায়িক ও আর্থিক সেবা-যত্ন করা, তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তাদের খবরা-খবর নেয়াও এ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।

নবিজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকার মাল সাধারণ গরিব-মিসকিনকে দান করলে তাতে তো শুধু সাদকার সওয়াবই পাওয়া যায়, অথচ তা যদি নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-আপনজনকে দান করা হয়, তাহলে তাতে দুটি সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হল সাদকার সওয়াব এবং আপরটি হলো- সেলায়ে রেহরির সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ)

৩. ইয়াতিম-মিসকিন

ইয়াতিম শিশু এবং অসহায় মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিবেচনার বিষয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এদের সাহায্য-সহযোগিতার নির্ধারিত কেউ থাকে না। যেভাবে আত্মীয়-আপনজনদের বেলায় হয়ে থাকে।

৪. নিকট প্রতিবেশী

এক প্রতিবেশীর ওপর অন্য প্রতিবেশীর হক অনেক বেশি। ক্ষেত্রবিশেষ নিকট প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন থেকেও অনেক কাছের। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক ও উত্তম বিনিময় করার অনেক উপদেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আবু যর! যখন তরকারি রান্না করবে তখন তাতে বেশি পরিমাণে পানি দাও এবং এর দ্বারা তোমার পড়শীর খোঁজ-খবর নাও।’ (মুসলিম)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ’তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সম্মান করে, তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান আনে সে যেন তার মেহমানকে পুরস্কার দিয়ে তাকে সম্মানিত করে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, মেহমানের পুরস্কার কি? তিনি বললেন, একদিন ও রাত। আর মেহমান তিন দিন এর পরের যা সময় তাতে ব্যয় করা সদকাস্বরূপ। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিনে উপর ঈমান আনে সে যেন ভাল বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম সংগী হচ্ছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংগীগণ। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম প্রতিবেশী হচ্ছেন ওই প্রতিবেশী; যে তার প্রতিবেশীর জন্য উত্তম।’ (তিরমিজি)

৫. অনাত্মীয় প্রতিবেশী

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুই প্রকারের প্রতিবেশীর কথা বলেছেন। উভয় প্রকার প্রতিবেশীর বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘جَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ বলতে সেসব প্রতিবেশীকে বোঝায়, যারা প্রতিবেশী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়ও বটে। এভাবে এতে দু’টি হক সমন্বিত হয়ে যায়। আর وَالْجَارِ الْجُنُبِ বলতে শুধু সে প্রতিবেশীকে বোঝায় যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। আর সে জন্যই তার উল্লেখ করা হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে।’ (তাবারি)

কেউ কেউ বলেছেন, ‘জারে-জিল-কোরবা’ এমন প্রতিবেশীকে বলা হয়, যে ইসলামি ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত এবং মুসলিম। আর ‘জারে-জুনুব’ বলা হয় অমুসলিম প্রতিবেশীকে। প্রতিবেশী হওয়া ছাড়াও যার অন্যান্য হক রয়েছে, অন্যান্য প্রতিবেশীদের তুলনায় তাকে মর্যাদাগত অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৬. পাশ্ববর্তী সঙ্গী-সাথী

পাশ্ববর্তী সঙ্গী-সাথী; যদিও এর শাব্দিক অর্থ হলো- সহকর্মী। এতে সেসব সফর সঙ্গীরাও অন্তর্ভুক্ত যারা রেল, জাহাজ, বাস, মোটর প্রভৃতিতে পাশাপাশি বসে ভ্রমণ করে এবং সেসব লোকও অন্তর্ভুক্ত যারা কোনো সাধারণ বা বিশেষ বৈঠক বা অধিবেশনে আপনার সঙ্গে উপবেশন করে থাকে।

ইসলামি শরিয়ত নিকটবর্তী ও দূরবর্তী স্থায়ী প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণকে যেমন ওয়াজিব করে দিয়েছে, তেমনিভাবে সে ব্যক্তির সাহচর্যের অধিকার বা হককেও অপরিহার্য করে দিয়েছে; যে সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোনো মজলিস, বৈঠক অথবা সফরের সময় আপনার সঙ্গে বসেছে বা অবস্থান করেছে। তাদের মধ্যে মুসলিম, অমুসলিম, আত্মীয়, অনাত্মীয় সবাই সমান।

তাই সবার সঙ্গেই সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ (উপদেশ/পরামর্শ) দেওয়া হয়েছে। এই সদ্ব্যবহারের সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে এই যে, আপনার কোনো কথায় বা কাজে যেন সে সঙ্গী-সাথী কোনো রকম কষ্ট না পায়। এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যাতে সে মৰ্মাহত হয়। এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যাতে তার কষ্ট হতে পারে। যেমন- ধুমপান করে তার দিকে ধোয়া ছাড়া, পান খেয়ে তার দিকে পিক ফেলা এবং এমনভাবে বসা যাতে তার বসার জায়গা সংকুচিত হয়ে যায় প্রভৃতি।

এমনকি যানবাহনে অন্য কোনো যাত্রী পাশে বসতে গেলে এ কথা ভাবা উচিত যে, এখানে তার ততটুকুই অধিকার রয়েছে যতটা রয়েছে আমার।

তাফসিরে রুহুল মাআনিসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন, এমন প্রতিটি লোকই ‘সাহেবে বিল জাম্ব’-এর অন্তর্ভুক্ত যে কোনো কাজে, কোনো পেশায় বা কোনো বিষয়ে আপনার সঙ্গে জড়িত বা আপনার অংশীদার। তা শিল্প-শ্রমেই হোক অথবা অফিস-আদালতের চাকরিতেই হোক অথবা কোন সফরে বা স্থায়ী বসবাসেই হোক।

৭. মুসাফির

এ আয়াতে এমন লোকের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, যে সফরের অবস্থায় আপনার কাছে এসে উপস্থিত হয় কিংবা আপনার মেহমান হয়ে যায়। যেহেতু এই অজানা-অচেনা লোকটির কোনো আত্মীয় বা সম্পৰ্কীয় লোক এখানে উপস্থিত থাকে না; সেহেতু কোরআন ইসলামি তথা মানবীয় সম্পর্কের প্রেক্ষিতে তার হকও আপনার উপর অপরিহার্য বলে সাব্যস্ত করে দিয়েছে। তাহলো- সামর্থ্য ও সাধ্যানুযায়ী তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

৮. অধিকারভুক্ত দাস-দাসী/গৃহকর্মী

এ আয়াতে অধিকারভুক্ত দাস-দাসী/গৃহকর্মীদের ব্যাপারেও সদ্ব্যবহার করতে হবে। সাধ্যানুযায়ী তাদের খাওয়া-পরার ব্যাপারে কার্পণ্য করবে না। তাছাড়া তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন বক্তব্যের ভিত্তিতে আলোচ্য নির্দেশ ও বিধি-বিধান, দাস-দাসী, চাকর-চাকরানী ও অন্যান্য কর্মচারীর ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। তাদের হকও একই রকম। নির্ধারিত বেতন-ভাতা, খানাপিনা প্রভৃতির ব্যাপারে কার্পণ্য বা বিলম্ব করা যাবে না এবং তাদের উপর সাধ্যাতীত কোনো কাজও চাপানো যাবে না।

যদি ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক তাদের পরিচালনা করা হয় তবে তাদের যাবতীয় খরচও সাদকার অন্তর্ভুক্ত৷ হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি নিজে যা খাও তা তোমার জন্য সাদকা এবং যা তোমার ছেলেকে খাওয়াও তাও তোমার জন্য সাদকা, যা তোমার স্ত্রীকে খাওয়াও তাও তোমার জন্য সাদকা। অনুরূপভাবে যা তোমার খাদেমকে খাওয়াও সেটাও তোমার জন্য সাদকা হিসাবে গণ্য হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

হজরত মারূর ইবন সায়িদ বলেন, আমি আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গায়ে একটি চাদর দেখলাম, অনুরূপ আরেকটি চাদর তার দাসের গায়ে দেখলাম। এ ব্যাপারে আমরা আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, একদিন এক লোককে গালি দিয়েছিলাম। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে রাসুল আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে তার মায়ের ব্যাপার উল্লেখ করে অপমান করলে? তারপর তিনি বললেন, ‘এরা তোমাদের ভাই, তোমাদের অনুগামী। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তোমাদের কর্তৃত্বাধীন করেছেন। অতএব যার কোনো ভাই তার কর্তৃত্বাধীন থাকে, তবে সে যা খায় তা থেকে যেন তাকে খাওয়ায়, যা (পোশাক) পরে তা থেকে যেন তাকে পরায়। তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব তাদেরকে না দেয়; যদি সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব দাও তবে তাদেরকে সাহায্য কর।’ (বুখারি, মুসলিম)



পরিশেষে

আল্লাহ তাআলা আয়াতের শেষাংশে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা এমন লোককে পছন্দ করেন না, যে দাম্ভিক; নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করে। যদি কেউ দাম্ভিক বা অহংকারী না হয় তবেই উল্লেখিত সব বিষয়ে সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা সহজ ও সম্ভব হবে।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কাউকে গালি দিও না। সাহাবি বললেন, ‘এরপর আমি কোনো স্বাধীন, দাস, উট বা ছাগল কাউকেই গালি দেইনি। তিনি আরো বললেন, ‘সামান্য কোনো নেক কাজকেও হেয় করে দেখবে না। যদিও তা তোমার কোনো ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা হোক।

আর তোমার কাপড়কে টাখনুর অর্ধেক পর্যন্ত উঠাবে, যদি তা করতে না চাও তবে দুই গিরা পর্যন্ত নামাতে পার। কাপড়কে ‘ইসবাল’ বা গিরার নীচে পরা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ কর। কেননা, এটাই অহংকারের চিহ্ন। আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

যদি কোনো লোক তোমাকে গালি দেয় অথবা তোমার কোনো ক্রটি জানতে পেরে তা নিয়ে উপহাস করে, তুমি তার সে রকম কিছু জানলেও তাকে উপহাস করো না। কারণ, এর প্রতিফল তাকেই ভোগ করতে হবে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত সবশ্রেণির মানুষের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম ব্যবহার করা জরুরি। কোরআনের নির্দেশ/উপদেশ ও হাদিসের দিকনির্দেশনা মেনে চলায় ফিরবে ব্যক্তি, পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং নিরাপত্তা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের আলোকে সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম

ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে?

জেনে নিন ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে? আসুন এ বিষয়ে কোরআনে কি বলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *