‘ইসমে আজম’ আছে কোন কোন আয়াতে?

জেনে নিন ‘ইসমে আজম’ আছে কোন কোন আয়াতে? আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। মহান আল্লাহ তাআলার মর্যাদা সম্পন্ন নাম হলো- ‘ইসমে আজম’। এ ‘ইসমে আজম’র আমলের মাধ্যমে কোনও কিছু চাওয়া হলে মহান আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। এ মর্যাদাপূর্ণ নামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে ডাকলে তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার মহান নাম ‘ইসমে আজম’ কোনটি? ইসমে আজম সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন?

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে একাধিক আয়াত ও মাছনুন দোয়ায় ‘ইসমে আজম’ আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যেগুলোর আমল করে এবং পড়ে মহান আল্লাহর কাছে কোনো চাওয়া-পাওয়ার কথা জানালে তিনি বান্দাকে তা দান করেন। এ ইসমে আজম সম্পর্কে কী বলেছেন নবিজী?



‘ইসমে আজম’ আছে কোন কোন আয়াতে?

১. হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার মহান নাম (ইসমে আজম)। (যা) এই দুই আয়াতের মাঝে নিহিত আছে। (তাহলো)-

وَ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ

‘আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৩)

আর সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াত-

الٓمَّٓ ۙ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ

‘আলিফ লাম মীম; তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১-২)

হাদিসের বর্ণনায় ইসমে আজম সমৃদ্ধ এ আয়াতটি-

وَ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ

কত গুরুত্বপূর্ণ! অথচ মক্কার মুশরিকরা এটিকে মূল্যয়নই করলো না বরং তারা বলতে-

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ

‘সে (মুহাম্মাদ) কি এতগুলো উপাস্যের পরিবর্তে একটি মাত্র উপাস্য সাব্যস্ত করেছে! নিশ্চয়ই এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার।’ (সুরা সাদ : আয়াত ৫)

২. আবার সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াতেও আছে ইসমে আজম। আল্লাহ তাআলা বলেন-

الٓمَّٓ ۙ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ

‘আলিফ লাম মীম; তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১-২)

এ আয়াতে মহান আল্লাহর বিশেষ দুইটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি حَيٌّ এবং قَيُّومٌ । যার অর্থ তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু ও ধ্বংস নেই। ঠিক এ অংশটিই ফুটে ওঠেছে আয়াতুল কুরসিতে। সেখানেও এ অংশকে ইসমে আজম বলা হয়েছে। বহু হাদিসে-

‘আল্লাহর ইসমে আজম (মহান নাম) ৩ টি আয়াতে এসেছে। কেউ যদি এই নামের ওসিলায় দোয়া করে, তাহলে তা আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয় না। তাহলো-

১. সুরা আল-ইমরানের প্রারম্ভে- الٓمَّٓ ۙ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ

২. আয়াতুল কুরসিতে- اللهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ

৩. সুরা ত্বহা’র ১১১ নং আয়াতে- وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ।’ (ইবনে কাছির)

৩. ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও ইসমে আজম সম্পর্কে হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ আল-আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে তার দোয়া এভাবে বলতে শুনেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।’



বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ওই ব্যক্তির মুখে এ বাক্যগুলো শুনে) তখন বললেন- ‘সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন! নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার মহান নামের (‘ইসমে আজম’-এর) ওসিলায় তার কাছে প্রার্থনা করেছে; যে নামের ওসিলায় দোয়া করা হলে তিনি কবুল করেন এবং যে নামের অসিলায় (কোনও কিছু সাহায্য) প্রার্থনা করা হলে তিনি তা দান করেন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জানা যায়, আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের উল্লেখিত ৪টি আয়াতে ইসমে আজম উল্লেখ করেছেন। আর এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের উল্লেখিত মাসনুন দোয়াটিতেও ইসমে আজম আছে বলে জানিয়েছেন। (ওয়াল্লাহু আলাম)

সুতরাং মুমিন মুসলমান এ আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন। দুনিয়া ও পরকালে কল্যাণে নিজেদের ধন্য করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসমে আজমের বরকত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। নিজেদের চাওয়া-পাওয়ায় ইসমে আজমের বরকত পেতে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম

ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে?

জেনে নিন ফজরের জামাত চলা অবস্থায় সুন্নত পড়া যাবে? আসুন এ বিষয়ে কোরআনে কি বলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *