ওজনস্বল্পতা কেন হয়, প্রতিকার পেতে কী করবেন?

জেনে নিন ওজনস্বল্পতা কেন হয়, প্রতিকার পেতে কী করবেন? আসুন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। শরীরের কাঠামো ধরে রাখার জন্য সঠিক ওজন থাকা চাই। ওজন হঠাৎ কমে গেলে কিংবা আন্ডারওয়েট থাকলে রোগারোগা দেখা যায়। অনেকে শত চেষ্টা করেও ওজন বাড়াতে পারেন না। আবার অনেকে না চাইলেও ওজন বেড়ে যায়। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ ও সঠিক জীবনাচারে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।



খুব বেশি ওজন যেমন সমস্যার কারণ ঠিক তেমনি কাম্য ওজনের কম ওজন থাকাটাও চিন্তার কারণ। অতিরিক্ত ওজন কমানো যতটা না কঠিন মনে হয় তার থেকেও কঠিন কাজ হল ওজনস্বল্পতা থেকে ওজন বাড়ানো। কারণ ওজনস্বল্পতা মানে শরীরে শুধু মেদ নয়, মাসল এবং শরীরের ভেতরের সবকিছুরই ওজন বা সাইজ কম থাকা।

অনেকেই দেখা যায়, স্বাস্থ্য বাড়ার লক্ষ্যে অনেক খাবার খেয়ে থাকেন; কিন্তু তারপরও তার স্বাস্থ্য বাড়ে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- সঠিক খাবার নির্বাচন না করা। শুধু পেট ভরে খেলেই চলবে না। খেতে হবে উপযুক্ত খাবার। কারণ আমাদের শরীরের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন, শর্করা এবং ফ্যাটের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ প্রয়োজন।

ওজন না বাড়ার কারণ ও বাড়াতে করণীয় সম্পর্কে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতি।

ওজনস্বল্পতা কেন হয়, প্রতিকার পেতে কী করবেন?

ওজন বাড়াতে হলে প্রথমেই জানতে হবে আপনার ওজন কম হওয়ার কারণ। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে যেমন-

১. দৈহিক চাহিদার তুলনায় কম খাদ্য খেলে এবং সেইসাথে খুব বেশি কাজ করলে।
২. রোগ আক্রান্ত থাকলে।
৩. থাইরয়েড গ্রন্থির অসামঞ্জস্যতা।
৪. উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অতিরিক্ত চিন্তা আহারে অরুচি তৈরি করতে পারে।
৫. দুর্বল খাদ্য অর্থাৎ কম ক্যালোরির খাবার নির্বাচন।
৬. নিদ্রাহীনতা, অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ, পুষ্টিহীনতা।
৭. খাওয়ার ব্যাপারে অনীহা বা খুঁতখুঁত স্বভাব।
৮. বংশগত, ইত্যাদি।

আরো অনেক কারণ আছে, কারণে কম ওজন দেখা যায়। তাই আগে বের করতে হবে আপনার ওজন কেন কম? তারপর জানতে হবে আপনার ওজন স্বাভাবিক ওজন থেকে কত কম। এজন্য আপনি অবশ্যই একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে আপনার বিএমআই অনুযায়ী কত ক্যালোরির খাবার ও কোন খাবারগুলো খাবেন তা নিশ্চিত করে নেবেন। কেননা আপনি খাবার খাচ্ছেন; কিন্তু নিয়ম মেনে চলছেন না, এমনটি হলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম করে খাবার তালিকা অনুসরণ করে খাবার খেলে, তা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

ওজন বাড়ানোর জন্য খাবারের ক্ষেত্রে কিছু নীতিনির্ধারণ করা প্রয়োজন। যেমন- উচ্চ ক্যালরির, উচ্চ প্রোটিন, চর্বি এবং উচ্চ শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ। একবারে বেশি খাওয়া কখনই ভালো না। তার থেকে একটু পরপর খাওয়া উচিত। যাদের ওজন কম তাদের খাবারের প্রতি অরুচি থাকে, তাই একবারে না খেয়ে বারেবারে খেতে হবে।

আমাদের শরীরের ওজনের বড় একটা অংশ হল হাড়ের ওজন। অনেকে রয়েছে প্রচুর খাওয়া সত্ত্বেও খুব শুকনো, কারণ তাদের মেটাবলিসম বেশি। সে ক্ষেত্রে প্রোটিন, শাকসবজি, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় ১ গ্লাস খাঁটি দুধ ও ১টি ডিম খান।

উচ্চ ক্যালরির খাবার হিসেবে কেউ যদি সকালে ২ টি রুটি খেতে না চায় সে ১ টি তেলে ভাজা পরোটা খেতে পারে। উচ্চ ক্যালরির কয়েকটি খাবার হল- হালুয়া, পুডিং, মিষ্টি, মাখন, জ্যাম, জেলি, কলা ইত্যাদি।

  • উচ্চ প্রোটিন : প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১ গ্রাম প্রোটিন দরকার; কিন্তু যাদের ওজন কম তাদের প্রতি কিলোগ্রাম আদর্শ ওজনের জন্য ১ গ্রাম থেকে ১.২ গ্রাম প্রোটিন দরকার। ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, ডাল ও বাদামে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • উচ্চ চর্বি : স্বাভাবিক সময় থেকে চর্বির পরিমাণ বাড়াতে হবে। মাখন, তেল, ঘি, মেয়োনেজ, দুধের সর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে জাংক খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে।
  • উচ্চ শর্করা : অধিক শর্করা পেতে পাউরুটি, বিস্কুট, আলু, নুডলস, মিষ্টি ফল ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।
  • তরল : খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে পানি, শরবত, দুধ ইত্যাদি। তবে খাবার গ্রহণের আগে ও মাঝে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  • প্রোবায়োটিকস খান : পেটে খাবার ভালোভাবে হজমের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এ ক্ষেত্রে দই হতে পারে একটি ভালো সমাধান। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় কিছুটা হলেও দই রাখুন।


দিনে ৫ থেকে ৭ বার পরিমাণমতো খাবার খান। এ ক্ষেত্রে প্রথমে খিদে বাড়াতে হবে, তার জন্য দরকার নিয়মিত ব্যায়াম। হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে। এমন কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো শরীরের পেশি তৈরি করে ও ওজন বাড়ায় এবং ক্ষুধার উদ্রেকও সৃষ্টি করে। তাছাড়া আপনি যদি শুধু ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়েই যান আর কোনও ধরনের ব্যায়াম না করেন তাহলে আপনার শরীরের কিছু অংশে অতিরিক্ত মেদ দেখা দেবে।

যেমন- তলপেটসহ অন্যান্য অংশে কিন্তু আপনার ওজন বাড়াতে খুব একটা সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে না। এজন্য যতটা সম্ভব শারীরিক ব্যায়াম করুন। প্রয়োজনে সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৪০ মি. হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সবকিছুর জন্য দরকার নিজের ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টা। তাই খাবার বুঝে-শুনে খান এবং সুস্থ থাকুন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে। 

এগুলো দেখুন

কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ! কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ! কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

ইদানিং দেখা যাচ্ছে ছোট থেকে বড় সকলের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা নিয়ে চিন্তায় আছেন বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *