কি ভাবে শুদ্ধ হবে আমার কুরবানি! ফিরোজ মাহমুদ :: আরাফার দিনের রোযার ফজিলত জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়, বিশেষ করে আরাফার দিনের রোজা,এ সম্পর্কে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আশা করি আরাফাতের দিনের রোজার বদলায় আল্লাহতাআলা বিগত ১ বছরের ও পরবর্তী ১ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম ও তিরমিযী)।
(সে মতে আগামী কাল ১৯ জুলাই আরাফা দিন।যারা রোযা রাখবেন তারা আজ ১৮ জুলাই সাহরি গ্রহণ করবেন, ইনশা-আল্লাহ) উল্লেখ্য যে,হাদীসে আরাফার দিনের কথা বলা হয়েছে আর সমগ্র পৃথিবীতে আরাফার দিন একটাই হয়। ,তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়।
কোরবানি একটি ইবাদত। সুতরাং যেন খাঁটি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশেই হয়, অন্য কোনো উদ্দেশ্য যেন মুখ্য না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে তা আল্লাহর কাছে কোরবানি গৃহীত হবে না। অংশীদারদের কারো নিয়ত যদি পরিশুদ্ধ না থাকে কিংবা তার অর্থ যদি হালাল না হয়, তাহলে বাকিদের কোরবানিও নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং যাচাই-বাছাই করে অংশীদার নির্বাচন করতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না যে নিজের ধনাঢ্যতা প্রদর্শন ও বিত্তের মহড়া দেওয়ার জন্য কোরবানি দিলে কোরবানি হবে না।
দ্বিতীয়ত, অর্থকড়ি হালাল হওয়া। হারাম অর্থ দিয়ে ইবাদত শুদ্ধ নয়। হারাম অর্থের দ্বারা সওয়াবের আশা করাও গুনাহর কাজ। হালাল অর্থ দিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী ছোটখাটো পশুর ব্যবস্থা করেও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর না গোশত পৌঁছে, না রক্ত পৌঁছে; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। ’ (সুরা : হজ ৩৭)
কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য:
আয়েশা (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন।(ইবনে মাজাহ)
কুরবানীর সাথে একটি ভাগ আকীকার উদ্দেশ্যে দেওয়া যথেষ্ট নয়। যেমন যথেষ্ট নয় একটি পশু কুরবানী ও আকীকার নিয়তে যবেহ করা। কুরবানী ও আকীকার জন্য পৃথক পৃথক পশু হতে হবে। অবশ্য যদি কোন শিশুর আকীকার দিন কুরবানীর দিনেই পরে এবং আকীকা যবেহ করে, তাহলে আর কুরবানী না দিলেও চলে।
যেমন, দুটি গোসলের কারণ উপস্থিত হলে একটি গোসল করলেই যথেষ্ট, জুমআর দিনে ঈদের নামায পড়লে আর জুমআহ না পড়লেও চলে, বিদায়ের সময় হাজ্জের তওয়াফ করলে আর বিদায়ী তওয়াফ না করলেও চলে, যোহরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে যোহরের সুন্নাত পড়লে পৃথক করে আর তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়তে হয় না এবং তামাত্তু হাজ্জের কুরবানী দিলে আর পৃথকভাবে কুরবানী না দিলেও চলে।(মানারুস সাবীল)
কোরবানির জন্তু : উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। অন্যান্য জন্তু দ্বারা কোরবানি নাজায়েজ। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছর পূর্ণ হতে হবে, গরু-মহিষ দুই বছর পূর্ণ হতে হবে, উট পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (হিদায়া)
কোরবানির পশু হতে হবে দোষত্রুটিমুক্ত। পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেওয়া যাবে না, সেগুলো হচ্ছে : ১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা, ২. শ্রবণশক্তি না থাকা, ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া, ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, ৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা, ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা, ৭. কানের বেশির ভাগ কাটা, ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া, ১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা, ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা, ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা। মোট কথা, কোরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। যেমন হাদিসে এসেছে, ‘চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ—যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত—যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু—যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত—যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে। ’ (ইবনে মাজাহ)
উবাইদ ইবনে ফাইরূয (রাঃ) বলেন, আমি বারাআ ইবনে আযিব (রাঃ) কে বললাম, রাসূলুল্লাহ( সা.)যে ধরনের পশু কোরবানী করতে অপছন্দ অথবা নিষেধ করেছেন সেই সম্পর্কে আমাদের বলুন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ( সা.) তাঁর হাতের ইশারায় বলেন, এরূপ, আর আমার হাত তাঁর হাতের চেয়ে ক্ষুদ্র। চার প্রকারের পশু কোরবানী করলে তা যথেষ্ট হবে না। অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, খোঁড়া পশু যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট এবং কৃশকায় দুর্বল পশু যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। উবাইদ (রাঃ) বলেন, আমি ক্রটিযুক্ত কানবিশিষ্ট পশু কোরবানী করা অপছন্দ করি। বারাআ (রাঃ) বলেন, যে ধরনের পশু তুমি নিজে অপছন্দ করো তা পরিহার করো, কিন্তু অন্যদের জন্য তা হারাম করো না।(ইবনে মাজাহ)
আরো পড়ুন: থেমে নেই বরিশালের রক্তযোদ্ধারা, এরাই সমাজের প্রকৃত হিরো
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হয়। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু-মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি পশু শুধু এক ব্যক্তিই কোরবানি দিতে পারবে। গরু, মহিষ, উট সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি মিলে কোরবানি দিতে পারবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একটি উট ও গরু-মহিষে সাত ব্যক্তি কোরবানির জন্য শরিক হতে পারে। ’ (মুসলিম)
লেখক: ইসলামি গবেষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।