জেনে নিন ক্যাচ ধরার ১০টি কৌশল সম্পর্কে। আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। যদি আপনি কোন ক্লাব, দল বা ডিভিশনের হয়ে ক্রিকেট খেলতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কিভাবে ক্যাচ ধরবেন। অর্থাৎ, আপনাকে ক্যাচ ধরার স্কিল অর্জণ করতে হবে। সেই সঙ্গে, স্কিলগুলো কাজে লাগাতে হবে যাতে খেলার মাঠে প্রয়োজনের মূহুর্তে আপনার ক্যাচ মিস না হয়।
কেউ-ই এই স্কিলগুলো জন্ম থেকেই পায় না। প্রতিনিয়ত অনুশীলনের মাধ্যমে এই স্কিলগুলো রপ্ত করে নিতে হয়। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে একটি ক্যাচই পারে ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে। তাই, ক্যাচ ধরার ব্যাপারে ফিল্ডারকে সবসময়ই সচেতন থাকতে হয়। তবে, ক্যাচ ধরার প্রাথমিক নিয়মগুলো জানা থাকলে একজন ফিল্ডার খুব সহজেই ক্যাচ ধরতে পারবে। এবারের স্পোর্টস টিপস পোস্টে ক্যাচ ধরার কিছু স্কিল নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনাকে ক্যাচ ধরায় দক্ষ করে তুলবে।
- আরো পড়ুন: ক্রিকেট খেলায় কিভাবে অলরাউন্ডার হবেন?
- আরো পড়ুন: কানাডার ভিজিটর ভিসা
- আরো পড়ুন: ইতালি ৮০ হাজার শ্রমিক নেবে
কিভাবে ক্যাচ ধরবেন – ক্যাচ ধরার স্কিল
ভালো বোলার হওয়ার জন্য কিছু বেসিক টিপস যেমন মেনে চলতে হয়, তেমনি বোলারের বলটিকে ক্যাচ ধরার জন্যেও কিছু স্কিল অর্জণ করতে হয়। নিচের ১০টি স্কিল সম্পর্কে জানা আর সেগুলোকে রপ্ত করার মাধ্যমে অনায়াসেই আপনি দক্ষ ক্যাচার হতে পারবেন।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্যাচ ধরার ১০টি কৌশল সম্পর্কে
১. নিয়মিত ক্যাচ ধরা ও ফিল্ডিং অনুশীলন করা
অনেক নবাগত ক্রিকেটার তাদের ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে অনেক অনুশীলন করলেও তারা তাদের ফিল্ডিং অনুশীলন করার জন্য যথেষ্ট সময় দেয় না। ভালো ক্যাচ ধরার স্কিল আয়ত্ত করতে হলে আপনাকে ফিল্ডিং অনুশীলনও করা লাগবে।
ক্রিকেটে ভালো ফিল্ডারদের নাম নিলেই সবার আগে জন্টি রোডস, যুবরাজ সিং, হার্শেল গিবস, সুরেশ রায়না বা রিকি পন্টিংদের নাম চলে আসবে। এরা নেটের বাইরে অনেক লম্বা সময় ফিল্ডিং অনুশীলন করার ফলেই ভালো ফিল্ডার হতে পেরেছিলেন।
তাই, ভালো ক্যাচ ধরার স্কিল আয়ত্ত করতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। আপনি যদি ফিল্ডিং-এ ভালো করার ১০টি দুর্দান্ত উপায় জানেন এবং সেগুলো ফলো করেন, তবে অবশ্যই একজন ভাল ফিল্ডার হওয়ার পাশাপাশি ক্যাচ ধরতে পারবেন।
২. ব্যাটসম্যানের শট চালানোর প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা
ব্যাটসম্যানের শট চালানোর ধরণ দেখেই আপনাকে বুঝতে হবে বল আপনার কাছে আসছে কি না বা আসলেও তার গতি ও উচ্চতা কি হবে! একজন ফিল্ডার সাধারণত বলের গতি ও উচ্চতা সম্পর্কে না বুঝার কারণেই ক্যাচ মিস করে থাকে।
উদাহরণস্বরুপ, আপনি মাঠে কভার পজিশনে ফিল্ডিং দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে, ব্যাটসম্যান কভার শট খেললেই বলটি আপনার কাছে আসবে। এক্ষেত্রে, ব্যাটসম্যান লফটেড কভার শট খেললেই বলটি আপনার কাছে ক্যাচ হিসাবে আসতে পারে। এই ব্যাপারগুলোর মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেই আপনার জন্য ক্যাচ ধরা সহজ হয়ে উঠবে।
৩. ক্যাচ ধরার মুহূর্তে শরীর ও হাতের অবস্থান সঠিক ও সুদৃঢ় রাখা
মাঠের যে প্রান্তেই আপনি ফিল্ডিং করেন না কেনো, আপনাকে অবশ্যই আপনার শরীরের পজিশন ঠিক রাখা লাগবে। ৩০ গজ বৃত্তের ভিতরে যারা ফিল্ডিং করেন, তাদের হতে হবে আরও বেশি সতর্ক।
বলের গতি ও উচ্চতা অনুসারে আপনার শরীরের ভারসাম্য ও ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে এবং হাতের তালু অবশ্যই খোলা রাখতে হবে। হাতের তালু বন্ধ অবস্থায় থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে আসা বল তালুবন্দী করতে অসুবিধা হতে পারে।
৪. চোখ সবসময় বলের উপর রাখা
ফিল্ডিং করার সময় অবশ্যই চোখ রাখতে হবে বলের উপর। ক্যাচ ধরার জন্য এটি একটি প্রাথমিক নিয়ম। সামান্য এক মুহূর্তের জন্য ব্যাটসম্যানের নেয়া শট হতে আগত বল থেকে চোখ সরালে আপনার কাছে আসা ক্যাচটি মিস হয়ে যেতে পারে। আর একটি ক্যাচ মিসেই ঘুরে যেতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। তাই, বলের উপর চোখ রাখার ব্যাপারে প্রতিটি ফিল্ডারকে থাকতে হবে সদা সতর্ক।
৫. ক্যাচ ধরার অনুশীলনে সবসময় শক্ত বল ব্যবহার করা
মাঠে ক্যাচিং প্র্যাক্টিস করার সময় আপনাকে একটি শক্ত বল দিয়ে অনুশীলন করতে হবে। অনেক নবাগত ও শিক্ষানবিশ ক্রিকেটার অনুশীলনের সময় টেনিস বল দিয়ে অনুশীলন করে। ফলে মাঠে কাঠের শক্ত বল দিয়ে ক্যাচ ধরাটা তাদের জন্য হয়ে উঠে বেশ কঠিন। ক্যাচ ধরার স্কিল গড়ে তুলতে হলে এই চরম ভুলটি পরিহার করতে হবে।
৬. এক হাত দিয়ে ক্যাচ অনুশীলন
ফিল্ডিং করার সময় এমন অনেক ক্যাচ আসবে যা কিনা দুই হাত দিয়ে ধরার মত পরিস্থিতি বা সময় পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে যারা শর্টে ও স্লিপে ফিল্ডিং করে, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা প্রায়ই হয়। তাই, ক্যাচ ধরার স্কিল বাড়ানোর জন্য আপনাকে এক হাতে ক্যাচ ধরার অনুশীলন করা লাগবে।
প্রতিদিন নিয়ম করে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় এক হাত দিয়ে ক্যাচ ধরার অনুশীলনে ব্যয় করলে খেলার মাঠে যে-কোন পজিশনে এক হাত দিয়ে ক্যাচ ধরতে আর অসুবিধা হবে না।
৭. হাই বল ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক পজিশনে যাওয়া
অনেক সময় ব্যাটসম্যানের নেওয়া শট মাটি থেকে বেশ উপরে উঠে। সাধারণত ব্যাটসম্যানের ওভার বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় বা মিস টাইমিং করার কারণে এমনটা হয়। বল উপরে উঠলে বল নিচে পড়ার সম্ভাব্য অবস্থান বুঝে ফিল্ডারকে দ্রুত সঠিক পজিশনে যেতে হবে।
অনেক সময় বল আপনার বডি থেকে দূরে থাকলে তা ক্যাচ ধরার জন্য আপনাকে ডাইভ দিতে হবে। তবে, এ-রকম ক্যাচ ধরা একটু কঠিন হয়। তাই, চেষ্টা করতে হবে বলের সঠিক পজিশনে গিয়ে দাঁড়ানোর।
৮. সতীর্থদের সাথে বাউন্ডারি লাইনের ক্যাচগুলো ধরার অনুশীলন করা
বাউন্ডারি লাইনের ক্যাচগুলো দর্শকদের জন্য দেখতে যতোটা দৃষ্টিনন্দন, ফিল্ডারদের জন্য ঠিক ততোটাই কঠিন। আর এই কঠিন ক্যাচগুলো ধরতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার সতীর্থদের সাথে অনুশীলন করতে হবে। বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ধরতে হলে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ক্যাচ ধরার সময়ে আপনার পা অথবা শরীরের কোন অংশ যাতে বাউন্ডারির দড়ি স্পর্শ না করে। অন্যথায়, তা ছয় রান বলে বিবেচিত হবে।
অনেক সময় ক্যাচ নেওয়ার মুহূর্তে যদি ক্যাচ নিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে বাউন্ডারি লাইনে পা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে অবশ্যই বলটি আপনার সামনে থাকা কোন ফিল্ডারের দিকে ছুঁড়ে মারবেন। বলটি মাটিতে পড়ার আগে যদি সে লুফে নেয়, তবে তা ক্যাচ হিসেবে গণ্য হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, বল হাতে থাকা অবস্থায় কোনভাবেই আপনার পা যেন বাউন্ডারির দড়ি স্পর্শ না করে।
৯. একটি সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করা
ফিল্ডিং করার সময় একটি সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং দিতে হবে। এমন একটি অবস্থানে দাঁড়াবেন যেখান থেকে আপনি ব্যাটসম্যানকে স্পষ্টভাবে দেখতে পারবেন।
- আরো পড়ুন: এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান
- আরো পড়ুন: ২৫ এফিলিয়েট মার্কেটিং ট্রেন্ডস
- আরো পড়ুন: ১২ এফিলিয়েট মার্কেটিং ফ্যাক্টস
১০. সতীর্থদের সাথে ক্যাচ ধরার অনুশীলন করা
ক্যাচ প্র্যাক্টিসের জন্য এই নিয়মটা খুবই উপযোগী। এক্ষেত্রে, একজন আপনার থেকে সর্বনিম্ন ৫ মিটার দূরে দাঁড়াবে এবং যথাসম্ভব জোরে আপনার দিকে বল ছুঁড়ে মারবে।
আপনি এভাবে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ক্যাচ অনুশীলন করলে আপনার ক্যাচ ধরার স্কিলে অবশ্যই উন্নতি হবে। আপনি ক্যাচ ধরার পর বলটি একইভাবে আপনার সতীর্থকে ছুড়ে মারবেন। এভাবে, একই সময়ে দুইজনেরই ক্যাচ ধরার অনুশীলন হয়ে যাবে।
শেষ কথা
উপরোক্ত ১০টি নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই আপনার ক্যাচ ধরার স্কিল বাড়াতে পারবেন। যেহেতু ক্যাচ ধরা ক্রিকেটেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই এই বিষয়ে সকল খেলোয়াড়কেই সচেতন থাকতে হবে।
একজন ব্যাটসম্যান প্রতি ম্যাচে ভালো স্কোর না’ও করতে পারেন, একজন বোলার প্রতি ম্যাচে অনেক উইকেট না’ও পেতে পারেন, তবে একজন ফিল্ডার ভালো ফিল্ডিং দিয়ে বা ক্যাচ ধরে একটি ম্যাচ জয়ে অতি গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখতে পারেন।
তাই, একটি দলের প্রতিটি প্লেয়ারেরই ক্যাচ ধরার ভালো স্কিল থাকতে হবে। ক্যাচ ধরার জন্য অনুশীলনের পাশাপাশি এই স্কিলগুলোও থাকা প্রয়োজন। উপরে বর্ণিত এই ১০টি স্কিল জানা থাকলে একজন প্লেয়ারের পক্ষে ক্যাচ ধরা সহজ হবে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।