আজকের আমরা গণিতে ভালো করার সহজতর কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। এই কৌশল গুলো আয়ত্ত করতে পারলে আমাদের গনিত নিয়ে সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। চলুন জেনে নেই গণিতে ভালো করার সহজতর কৌশল। গণিতে ভালো করার উপায় জানা থাকলে, গণিতের আসল মজা উপভোগ করা যায়। গণিত জিনিসটা আসলেই অনেক কঠিন।
ছাত্রজীবনে গণিত মানেই একটা আতঙ্ক। গণিত ভয় পায় না বা গণিত নিয়ে ছাত্রজীবনে কোনো সমস্যায় পড়েনি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। ছোট বয়স হোক বা বড় বয়স হোক, গণিত নিয়ে ঝামেলায় পড়তেই হয়েছে। তবে, সব কিছুই অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করা যায়। গণিত জিনিসটাও তেমন। প্রতিদিন ছোট ছোট কিছু কৌশল অবলম্বন করা ও বার বার অনুশীলন করার মাধ্যমে আমরা গণিতে ভালো করা যায়।
আরো পড়ুন: ই-কমার্স ব্যবসায়ী হতে যায় করবেন
আরো পড়ুন: প্লাষ্টিকের বোতল থেকে বছরে আয় ৪০ কোটি টাকা!
আরো পড়ুন: নতুন ব্যবসা শুরু করার প্রশিক্ষণ!
গণিত কি?
গণনা থেকেই মূলত গণিত শব্দের উৎপত্তি। গণিত কাকে বলে এর সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। অনেকে অনেকভাবে গণিতের সংজ্ঞা দিয়েছেন। এই যেমন অ্যারিস্টোটলের মতে “পরিমাণের বিজ্ঞান হলো গণিত”। সুতরাং, বিজ্ঞানের যে পদ্ধতিতে গণনার কাজ করা হয় তাকে গণিত বলে।
গণিতকে আবিষ্কার করেন? এই প্রশ্নের উত্তরও কিছুটা জটিল। কেননা, গণিত এককভাবে আবিষ্কার হয়েনি। সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ গণানা করতো। তবে, বিলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতায় গণিতের বিকাশ লাভ করে।
গণিতে ভালো করার সহজতর কৌশল
১. গণিত নিয়ে গেম খেলা
গণিত নিয়ে ভয় দূর করতে হলে ও গণিতে দক্ষতা অর্জন করতে হলে, মজার ছলে আমাদের গণিত করতে হবে। এর জন্য আমরা গণিত নিয়ে করা বিভিন্ন অনলাইন গেম খেলতে পারি। যে ধরনের গণিতে আমাদের সমস্যা, সে ধরনের গেম গুলো আমরা কম্পিউটার বা মোবাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারি।
এ ধরনের কিছু গেম হলো, ড্রাগনবক্স ৫+ (DragonBox5+)
ড্রাগনবক্স হলো এমন একটি গেম যেখানে বীজগণিত নিয়ে খেলা হয়। এর মাধ্যমে বীজগণিতের সকল সমস্যা দূর হবে বীজগণিতের কঠিন কঠিন সমীকরণ বুঝতেও কোনো সমস্যা হবে না।
প্রোডিজি (Prodigy)
এই খেলাটি প্রাইমারি লেভেলের শিশুদের জন্য করা। এখানে শিশুরা তাদের বুদ্ধি অনুযায়ী গণিত অনুশীলন করতে পারে।
পলিআপ (Polyup)
এই খেলাটি ক্যালকুলেটরের সাহায্যে খেলতে হয়। এটি সাধারনত হাই স্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য করা হয়েছে।
২. প্রতিদিন গণিত অনুশীলন করা
গণিতকে প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হিসেবে তৈরি করতে হবে। দৈনন্দিন কাজে সবসময় গণিত নিয়ে ভাবতে হবে। যেকোনো উদাহরণ গণিত নিয়ে কল্পনা করতে হবে।
যেমন: একজন ফল বিক্রেতা যদি এক টাকায় ৩ টি লেবু ক্রয় করে এক টাকায় ৫ টি লেবু বিক্রয় করতে চায় তাহলে তার কত শতাংশ লাভ হবে? আবার ২ টি কেক বানাতে যদি ৩/৪ কাপ ময়দা লাগে তাহলে একটি কেক বানাতে কতটুকু ময়দা লাগবে?
৩. বুদ্ধির অংক করা
বেশি বেশি করে বুদ্ধির অংক করলে গণিতে দক্ষতা আসবে দ্রুত। কিছু কিছু গণিত করতে পেনসিল বা খাতা দরকার হয়। কিন্তু কিছু কিছু অংক মুখে মুখে করে ফেলা যায়। ছোট ছোট যোগ, বিয়োগ, গুণ বা ভাগ অংক ক্যালকুলেটর বা কোনো কাগজ কলমের সাহায্য ছাড়া মুখে মুখে করে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
তবে, এক্ষেত্রে যদি সেই উত্তর নিয়ে কোন সংশয় থাকে তাহলে, পরবর্তীতে সেটা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নেওয়া যাবে। গণিতে ভালো করার উপায় হিসাবে বুদ্ধির অংক করার বিকল্প নেই।
৪. গণিতের বিষয়গুলো প্রতিদিন আলোচনা করা
বার বার অনুশীলন করলে যেকোনো কাজই কঠিন থেকে সহজ হয়ে যায়। গণিতের বেলায় ও তাই। প্রতিদিনই গণিত অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিনের পড়ার রুটিনে নির্দিষ্ট একটা সময় গণিতের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। গণিতে ভালো করার উপায় এর মধ্যে এটি একটি ট্রিকস।
প্রতিদিন একটু একটু করে অনুশীলন করলে গণিত বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে যাবে । এমনকি তখন পরীক্ষা নিয়ে ও কোনো ভয় থাকবে না। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার উপায় নিয়ে লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। এটা আপনার গণিতে ভালো করার উপায় হিসাবে কাজে লাগবে।
এক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন: গুরুত্বপূর্ণ সূত্র গুলো বা গণিতের মূল বিষয়বস্তুগুলো নোট প্যাডে নোট করে রাখতে হবে। যেন অনুশীলন করার সময় খুব সহজেই সেগুলো খুজেঁ পাওয়া যায়।
গণিত অনুশীলন করার সময় নিরিবিলি জায়গা বাছাই করতে হবে। কোন ধরনের বিরক্ত যেন সেখানে না থাকে। নিরিবিলি গণিত অনুশীলন করতে না পারলে গণিতের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ প্রদান করা যাবে না।
গণিত অনুশীলন করার সময় পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। অল্প সময় নিয়ে বা অধিক উত্তেজিত হয়ে বা জোর করে অংকে মন বসানো যাবে না। অনেক রাতে বা ঘুম জড়ানো অবস্থায় কখনোই গণিত অনুশীলন করা যাবে না।
৫. সংক্ষিপ্ত ভাবে না করা
গণিত করার সময় সব সময় পুরো গণিত করার চেষ্টা করতে হবে। কখনোই শুধু উত্তর লিখা যাবে না। পুরো গণিত করলে সেখানে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়া পুরোপুরি গণিত করলে সেটার উত্তর ও চেক করা যায় এবং শিক্ষক যদি সেটা বাড়ির কাজ দিয়ে থাকেন সেটা ও এক সঙ্গে হয়ে যায়।
অনুশীলন করার সময় শুরুতেই কলম ব্যবহার না করে পেনসিল ব্যবহার করতে হবে। পেনসিল ব্যবহার করলে একবার ভুল হয়ে গেলে সেই দাগ মুছে সেটা ঠিক করা যায়।
৬. আগের বিষয় সম্পূর্ণ বুঝে পরের বিষয়ে যাওয়া
গণিতের ব্যাপারে সব সময় আগের বিষয় পুরোপুরি বুঝে তারপর পরের বিষয়টিতে যাওয়া উচিত। কারন গণিত সবসময়ই প্রথম টপিকের সাথে দ্বিতীয় টপিক তার সঙ্গে পরের টপিক এভাবে সংযুক্ত থাকে।
তাই, প্রথম সূত্র পুরোপুরি না বুঝে কখনোই পরের সূত্রে যাওয়া উচিত নয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন হচ্ছে ততক্ষন কোনোভাবেই পরের টপিকে যাওয়া যাবে না।
৭. গণিত শেখার ওয়েবসাইট
অনেক সময় যদি কোন কারণে কোনো গণিত ক্লাস বাদ পড়ে যায় তখন সেই টপিক অনলাইনে দেখে শিখে নিতে হবে। অনলাইনে গণিত অনুশীলন করার এমন অনেক সোর্স রয়েছে যেখান থেকে খুব সহজেই গণিত অনুশীলন করা যায়। যেমন:
- PatrickJMT: এটি ইউটিউবে কলেজের একজন গণিত অধ্যাপক।
- Khan Academy: এটি একটি ওয়েবসাইট যেখানে বিভিন্ন ভিডিও লেসনের মাধ্যমে পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
- Breaking Math: এটি গণিত বিষয়ে ধারনার জন্য একটি পডকাস্ট।
৮. গণিতের স্কেচ তৈরি করা
প্রশ্নের অংকগুলো ভালো করে রিডিং পড়ে সেখান থেকে একটা ধারণা নিয়ে তার একটা ছক তৈরি করতে হবে। এভাবে যদি অংকটা আগে বুঝা যায় তাহলে পরবর্তীতে সেটা করতে অনেক সুবিধা হয়।
৯. উদাহরন দিয়ে অনুশীলন করা
গণিত অনুশীলন করার জন্য অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এইসব উদাহরণ নিজে নিজে করার চেষ্টা করতে হবে। অংক করে সেটার উত্তর মিলাতে হবে। না হলে সেটা পুনরায় অনুশীলন করতে হবে।
তাহলে, নিজের দক্ষতার উপর একটা ধারনা আসবে যে ঠিক কি ধরনের অংক সমাধান করা যায়। গণিতে ভালো করার উপায় হল, যত বেশি অনুশীলন করা হবে তত বেশি দক্ষতা বাড়বে।
আরো পড়ুন: (দামসহ)ছেলেদের সেক্সর বাড়ানোর টেবলেটের নাম
আরো পড়ুর: শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কারণীয়
আরো পড়ুন: যেসব উপায় সন্তান কথা শোনতে বাধ্য হবে
১০. অন্যকে শেখানো
অন্যকে শেখানো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল গণিতে ভালো করার জন্য। একটি গণিত নিজে শিখার পর, সেটা নিজের পরিবারের কাউকে বা বন্ধুদের ডেকে তাদের সঙ্গে সেটা নিয়ে আলোচনা করা বা তাদের সেই অংকটা বুঝিয়ে দিলে সেই গণিতকে ধারণাটা ভালো হয়।
এ ক্ষেত্রে, যদি কোনো বিষয় ভুলে যাওয়া হয় তাহলে, নোটবুক বা পাঠ্যবইয়ের সাহায্য ও নেওয়া যেতে পারে। আবার পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে সেই গণিতকে দক্ষতা আরও বাড়ে। সঠিক উপায়ে পড়াশোনা করার নিয়মের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শেষ কথা
আশা করি গণিতে ভালো করার উপায় নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই। উপরোক্ত কাজগুলো সঠিক ভাবে করতে পারলে গণিত নিয়ে ভয়, সংশয় অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। বেশি বেশি গণিতে অনুশীলন করলে সব ভয় একসময় জয় হবে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।