ইশরাত জাহান নিপা চাকরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করে তিনটি রেস্তারার মালিক! আসুন জেনে নেই তার সফলতার গল্প। ইশরাত জাহান নিপা ঢাকার ৩টি রেস্তোঁরার মালিক তিনি। নিজের রান্নাঘর থেকে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন বিগত ২০১৪ সালে। শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে। কিন্তু মাত্র চার বছরেই তার ব্যবসার পরিমাণ এখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। ত্রিশোর্ধ নারীদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে বিবিসি বাংলার ধারাবাহিক ‘তিরিশে ফিনিশ’ এর এই গল্পটি ইশরাত জাহান নিপার।
চাকরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করে তিনটি রেস্তারার মালিক!
আরিয়ানা’স চিকেন ক্যাটারিং এবং এআরএস ফুডের পরিচালক ইশরাত জাহান নিপা জানান, আমার প্রথম বিনিয়োগের টাকার পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার টাকা। সেটা দিয়ে টিভিন বক্স কিনে আমার শুরু। আলহামদুল্লিল্লাহ এখন ক্যাটারিং হাউজসহ আমার ৩টি রেস্টুরেন্ট। এ ৩টি রেস্টুরেন্টের মূ্ল্যমান প্রায় ২৫ লাখ টাকার মতো।
আরো পড়ুন: ভিটামিন-এ ত্বকের যেসব উপকার করে
আরো পড়ুন: ওটমিলে রূপচর্চা
আরো পড়ুন: মানসিক চাপ থেকে হতে পারে ত্বকের সমস্যা
তিনি সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন। বিগত ২০১২ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার কাজ শুরু করেন নিপা। কিন্তু কেন সাংবাদিকতা ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন? নিপা জানাচ্ছেন, অফিসিয়াল কিছু ঝামেলার কারণে আমি ওই সময় ছুটি পাইনি। যে কারণে আমার একটা গর্ভপাত হয়। ফলে আমার মধ্যে একটা অভিমান কাজ করে, কষ্ট কাজ করে। পরে আমি মনে করেছি যে এ পেশায় আর থাকব না।
যেই কথা সেই কাজ। চাকরি ছেড়েই ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করেন ইশরাত জাহান নিপা। তিনি বলেন, খাবারের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ রয়েছে। পাশাপাশি আমার বন্ধুরাও আমাকে বেশ উৎসাহ দিলো। বললো- তুমি তো রান্না ভালো পারো। দেখ এই ধরনের কিছু করতে পার কি না। তখন আমি বাংলাদেশ পর্যটন করপরেশন থেকে ১ বছরের শেপ কোর্স করলাম।
ওই কোর্স চলাকালীন আমি একটি অফিসে দুপুরের খাবার দেওয়া শুরু করলাম। রান্না করতাম আমার বাসার কিচেনে। একটা ছোট মেয়ে সহকারীকে নিয়ে আমার এটা শুরু। তিনি বলেন, যখন অফিসগুলোতে লাঞ্চ দেওয়া শুরু করলাম তখম অনেকে আমাকে বলা শুরু করল বুয়া। এজন্য অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল।
আমি একজন মাস্টার্স পাশ মেয়ে বাবুর্চির কাজ করব? জিনিসটা দেখতে ভালো লাগে না সমাজের সাথে যায় না। ঢাকার মহাখালীতে প্রথম রেস্টুরেন্ট চালু করেন ইশরাত। সে বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রাটা ভালো করেছিলাম। সুন্দর করেছিলাম। কিন্তু সব সুন্দর তো ভালো থাকে না।
এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধাগুলোর ব্যাপারে নিপা জানায়, ওই সময় আমি কনসেপ্ট (গর্ভধারণ) করলাম। তখন আমার কর্মচারীদের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তারা আমার দোকান ভালোভাবে না চালিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। নিজে না থাকলে যা হয় আরকি। তারপর ওখান থেকে আমি ৩‘শ ফিটে চলে আসি।
তারপরই শুরু হয় নিপার সফলতা। আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বলছেন, ৩‘শ ফিটে এসেই আমার ব্যবসা প্রসারিত হয়। প্রথমে কাবাবের দোকান, তারপর পিৎজা ও পাস্তা এভাবে বাড়াতে থাকলাম ব্যবসা। এ ফুটকোট গুলোর মধ্যে আমিই একমাত্র মেয়ে।
নিপা শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকেন না। ১ ছেলে ১ মেয়েকেও সামাল দেন তিনি। শিশুদের খাওয়া, স্কুলে নেয়া সহ করতে হয় নানা কাজ। তিনি বলছেন, আমার দিন শুরু হয় ভোর ৫টা থেকে। ৫টায় উঠে নামাজ পড়ে শিশু টিফিন রেডি করি। তারপর বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আমি রেস্টুরেন্টে যাই।
আবার দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে বিকেলে বাচ্চাদের সময় দিতে হয়। সন্ধার পর আবার বের হতে হয়। সফলতার মাঝে তাকে বেশ কয়েকবার বাধার শিকার হতে হয়। ৫ বছরের ব্যবসায়ীক জীবনে ২ বার আগুন লাগে নিপার দোকানে। এতে তার স্বপ্ন নিভে যেতে বসে। কিন্তু ব্যাংক ঋণ ও বন্ধুদের সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়ান নিপা।
নিপা জানাচ্ছেন সেসব কথা, ব্যবসা হচ্ছে এমন একটা যায়গা যেখানে উত্থান-পতন রয়েছে। এসব উত্থান-পতনের কারণে মাঝে মাঝে আমি নার্ভাস হয়ে যাই। মনে হয় কেন ব্যবসা করতে আসলাম? তিনি বলেন, যতটা না ব্যবসায়ী হিসেবে সমস্যা সামাল দিয়েছি। তার চেয়ে বেশি বাধা পাচ্ছি মেয়ে হিসেবে।
আরো পড়ুন: যৌনমিলন কতটা নিরাপদ গর্ভাবস্থায়?
আরো পড়ুন: নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সেরা ১৬ টি যোগ আসন
আরো পড়ুন: কিশোরীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম কি, উপসর্গ ও চিকিৎসা
ব্যবসা করতে এসে অনেকবার হোচট খেয়েছি, খাচ্ছি। আমি জানি আরো খেতে হবে। ওই সব কিছুকে ডিঙ্গিয়ে আমি হাঁটার চেষ্টা করছি। লোকসান করে আমি লাভের মুখ দেখেছি, বলেন সফল নারী নিপা। রান্না ঘর থেকে ৩টি রেস্টুরেন্টের মালিক হওয়ার পরও ইশরাত জাহান বলেন, আমি বলব না আমি সফল হয়েছি। আমি সফল হওয়ার চেষ্টা করছি।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।