ব্রিটিশ সংবিধানের অধিকাংশ উপাদাই অলিখিত। আর ব্রিটিশ কমন ল’ এর উৎসগুলিই মূলতঃ সাংবিধানিক আইনের উৎস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। এজন্য বলা যায় যে, সে দেশের রীতি-নীতি, প্রথা ও চিরাচরিত আচার-আচরণ হতে যেমন, সাধারণ আইন বা কমন ল’ গড়ে উঠেছে, তেমনি একইভাবে গড়ে উঠেছে ব্রিটিশ সাংবিধানিক আইন।
আজকে আমরা জেনে নেবো, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলি সম্পর্কে । আশা করি আপনি এ আলোচনা থেকে উপকৃত হবেন।
ব্রিটিশ সংবিধানের উৎসগুলি কি
গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা আকাংক্ষা ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে যুগ যুগ ধরে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে পূর্ণতা অর্জন করেছে ব্রিটিশ সাংবিধানিক আইন। ব্রিটিশ সংবিধান বিশ্বের সকল সংবিধানের মাতৃস্বরুপ। এই আইনের উৎসসমূহ নিম্নরুপ তুলে ধরা হলো।
- সনদ ও চুক্তি
- বিধিবদ্ধ আইন
সাধারণ আইন
বিচারকের সিদ্ধান্ত
শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং
পাঠ্য পুস্তক।
সনদ ও চুক্তি (Charters and Landmarks)
ঐতিহাসিক সনদপত্র ও বিভিন্ন চুক্তিসমূহ ব্রিটিশ সংবিধানের এক অন্যতম উৎস। ১২১৫ সালের ম্যাগনা কার্টা, ১৬২৬ সালের পিটিশন অব রাইটস, ১৬৬৯ সালের বিল অব রাইটস, ১৭০১ সালের এ্যাক্ট অব সেটেলমেন্ট প্রভৃতি, দলিলপত্র উল্লেখযোগ্য।
বিধিবদ্ধ আইন (Statutes)
বিধিবদ্ধ আইন ব্রিটিশ সাংবিধানিক আইনের অন্যতম উৎস। বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে শাসনতন্ত্র রচনার পথ সুগম করেছে। ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলী, নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিমালা, সরকারী কর্মচারীদের কার্যাবলী ইত্যাদি সম্পর্কে পার্লামেন্ট অনেক সংস্কারমূলক আইন প্রণয়ন করেছে। এগুলির মধ্যে ১৮৩২, ১৮৬৭ ও ১৮৮৪ সালের সংস্কার আইন, ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালের পার্লামেন্ট আইন, ১৬৭৯ ও ১৮১৬ সালের হেবিয়াস কর্পাস এ্যাক্ট, ১৯৩১ সালের ওয়েষ্টমিনিষ্টার আইন এবং ১৯৪৯ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অব দি পিপলস এ্যাক্ট, প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সাধারণ আইন (Common Law)
কমন ল’ ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান উৎস। যুগ যুগ ধরে জনগণের চাহিদা ও পরিবেশ অনুযায়ী স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে এই আইন গড়ে উঠেছে। এগুলি পার্লামেন্ট কর্তৃক যথারীতি অনুমোদিত না হলেও আদালত কর্তৃক আইন হিসেবে স্বীকৃত ও মর্যদা লাভ করেছে। বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, জুরির সাহায্যে বিচারের অধিকার, রাজা বা রাণীর বিশেষ ক্ষমতা প্রভৃতি সাধারণ আইনের অন্তর্গত। তাই প্রফেসর জেনিং এগুলিকে সংবিধানের মূল চালিকাশক্তি বলে অভিহিত করেছেন।
বিচারকের সিদ্ধান্ত (Judicial Decisions)
প্রচলিত আইন পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন এবং বিভিন্ন সনদের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে বিচার বিভাগ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যা ব্রিটিশ সংবিধানকে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছে। যেখানে সরকারের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তখন তা নিরসনের জন্য আদালত যে রায় দিয়েছে তাও ব্রিটিশ সংবিদানের অন্যতম উৎস হিসেবে গণ্য। এই কারণেই ডাইসী (Dicey) ব্রিটেনের সংবিধানকে বিচারকের তৈরী সংবিধান বলে অভিহিত করেছেন।
শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বা রেওয়াজ (Conventions)
শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বা রেওয়াজ ব্রিটিশ সংবিধানের উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে রেখেছে। দেশাচার, চিরাচরিত আচরণবিধি, অভ্যাস, রাজনৈতিক রীতি ও প্রথাসমূহকে অধ্যাপক ডাইসী (Dicey) শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি (Conventions of the Constitution) বলে অভিহিত করেছেন।
J. S. Mill এই গুলিকে শাসনতন্ত্রের অলিখিত বিধান (Unwritten maxims of the constitution) William Anson এগুলিকে শাসনতান্ত্রিক প্রথা (Cumtoms of the constitution) বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও এগুলি আইন নয়, তথাপিও আইনের মতই এগুলি মান্য করা হয়।
উদাহরণস্বরুপ, রাজার সহিত মন্ত্রীদের, মন্ত্রীদের সহিত পার্লামেন্টের সম্পর্ক, পার্লামেন্টের সহিত অভ্যন্তরীণ কার্যপদ্ধতি ইত্যাদি বহু বিষয় শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির অন্তর্ভূক্ত। এগুলি অমান্য করলে আদালতে দায়ী হতে হয় না বটে, কিন্তু লোক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বলা যায় যে, শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কিত যে সকল রীতিনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলি ব্রিটিশ সংবিধানকে প্রাণবন্ত ও মহিয়ান করে তুলেছে।
পাঠ পুস্তক (Text books)
শাসনতান্ত্রিক আইন বিষয়ে বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানীদের প্রণীত পুস্তকাদিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে এ সকল পুস্তক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরুপ, Lasky: Parliamentary Government in England; Dicey: Law of the Constitution; Anson: Law and custom of the Constitution, ইত্যাদি।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস বহুবিধ এবং বিভিন্ন স্রোতধারার সমন্বিত রুপ হচ্ছে ব্রিটিশ সংবিধান।