জেনে রাখুন কিডনি রোগের ঘরোয়া ৮টি নিয়মে মিলবে সুরক্ষা সম্পর্কে ।। মানবদেহে সাধারণত এক জোড়া কিডনি থাকে। বড় কলাই আকৃতির কিডনি ২টি দৈর্ঘ্যে ৯ থেকে ১২ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার ও ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার মোটা হয়। মেরুদণ্ডের ২ পাশে কোমরের একটু উপরে এদের অবস্থান।
- আরো পড়ুন: যেসব কারণে চোখের পাতা কেঁপে ওঠে!
- আরো পড়ুন: মানসিক চাপ থেকে হতে পারে ত্বকের সমস্যা
- আরো পড়ুন: শিশুদের ক্যান্সার সনাক্তে যেসব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না
এ ব্যাপারে প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। লক্ষণ যখন দেখা যায়, তখন কিডনি শতকরা ৭০ ভাগ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, ২ টি সহজ পরীক্ষায় কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়। ১. মূত্র পরীক্ষায় আমিষের উপস্থিতি দেখা ও ২. রক্ত পরীক্ষায় ক্রিয়োটিনিনের মাত্রা দেখা।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কিছু লক্ষণ হলো, শরীর ফুলে যাওয়া, ক্লান্তিবোধ করা, মনোযোগহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য ও ফেনাযুক্ত প্রস্রাব হওয়া।
কিডনির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি কিডনির মেডিসিন বিষয়ক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তাকে আমরা নেফ্রোলজিস্ট বলি। আর কিডনির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি কিডনির সার্জিক্যাল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তাকে বলি ইউরোলজিস্ট।
কাদের সতর্ক হতে হবে
- ১. আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- ২. উচ্চ রক্তচাপ
- ৩. স্থূলতা
- ৪. ধূমপানের অভ্যাস
- ৫. অধিক বয়স (৫০ বা তদূর্ধ্ব)
- ৬. পরিবারে কারো কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সতর্ক হতে হবে।
সুরক্ষায় মেনে চলুন ৮ নিয়ম
- ১. নিজেকে সবল ও কর্মব্যস্ত রাখুন
- ২. রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
- ৩. রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন
- ৪. সুষম খাদ্য খান এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখুন
- ৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
- ৬. ধূমপান পরিহার করুন
- ৭. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন
- ৮. আপনি যদি কিডনি ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে এক বা একাধিক কিডনি রোগ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করুন
- আরো পড়ুন: লেবুপানি কমাবে ওজন
- আরো পড়ুন: গর্ভকালীন গোপনাঙ্গের যত্ন নেওয়ার ৯টি গোপন কথা
- আরো পড়ুন: যেসব লক্ষণে বুঝবেন হাড়ে ক্ষয় ধরেছে, কিভাবে প্রতিরোধে করবেন
কে আক্রান্ত হবেন?
- ১. পৃথিবীতে শতকরা ১০ জন মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন
- ২. কিডনি রোগ সকল বয়সের এবং সকল জাতিকে আক্রান্ত করতে পারে
- ৩. ৭৫ বৎসর বয়সের ৫০% মানুষ কমবেশি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতায় ভোগেন
- ৪. ৬৫ থেকে ৭৫ বয়সের প্রতি ৫ জনে একজন পুরুষ এবং প্রতি ৪ জনে একজন নারী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
- ৫. উচ্চ রক্তচাপ এবং বহুমূত্র রোগ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের প্রধান কারণ
আপনি কি ঝুঁকিতে আছেন?
আপনি কি ঝুঁকিতে আছেন? তাহলে দেখুন, আপনার কি উচ্চ রক্তচাপ আছে? আপনি কি বহুমূত্র রোগে ভুগছেন? আপনার পরিবারের কারও কি কিডনি রোগ আছে? আপনার দৈহিক ওজন কি বেশি? আপনার কি জাতিগতভাবে আফ্রিকান, হিসপানিক বা এশিয়ান বংশধর?
আরো পড়ুন:ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন
আরো পড়ুন: স্পাইওয়্যারের উপর নিষেধাজ্ঞা চান বিশেষজ্ঞরা
আরো পড়ুন: গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস ৯টি সতর্ক বার্তা
আপনার উত্তর এক বা একাধিক হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক, যা আপনার সুস্থ জীবন-যাপন বাধাগ্রস্ত করে। এখানে কিছু সহজ উপায় বলা আছে যা আপনাকে কিডনি রোগ থেকে রক্ষা করবে। জেনে রাখুন কিডনি রোগের ঘরোয়া ৮টি নিয়মে মিলবে সুরক্ষা
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোনও না কোনও কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকল হয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, এ দেশে শতকরা ৫ ভাগ লোকেরও দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। সাধারণত ৭০ ভাগ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতেই পারে না যে সে ঘাতক ব্যাধিত আক্রান্ত। এই ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় অঙ্কুরেই কিডনি রোগ নির্ণয় ও কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা।
কিডনি বিকল প্রতিরোধের ১০টি উপায়
- ১. ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস কিডনি বিকলের প্রধান কারণ
- ২. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখা
- ৩. উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে (১৩০/৮০ এর নিচে)।
- ৪. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের কিডনির কার্যকারিতা ও প্রস্রাবে মাইক্রো অ্যালবুমিন প্রতি ৬ মাস অন্তর পরীক্ষা করা
- ৫. শিশুদের গলাব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোসপাঁচড়ার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা করা উচিত
- ৬. ডায়রিয়া, বমি ও রক্ত আমাশয়ের কারণে রক্ত, পানি ও লবণ শূন্য হয়ে
- কিডনি বিকল হতে পারে। তাই দ্রুত খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে
- ৭. ধূমপান বর্জন করুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- ৮. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথার ওষুধ সেবন না করা
- ৯. প্রস্রাবের ঘন ঘন ইনফেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে
- ১০. ৫ রঙের সবজি খাবেন, বেশি করে ফল খাবেন, চর্বি জাতীয় খাবার ও লবণ কম খাবেন ও পরিমিত পানি পান করবেন।
- যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।