ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

জেনে নিন ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা সম্পর্কে। আসুন এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ভিসা দেওয়া হয় না। এটা আমাদের ট্যুরিস্ট ভাই বোনদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমাদের অনেকেই আছেন যারা না জেনেই হাজার হাজার টাকা খরচ করেন ভিসার জন্য। তারা আদৌ জানেন না বাংলাদেশ থেকে তিনি ভিসা পাওয়ার যোগ্য কিনা? আর এই সুযোগ নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা যারা কিনা বিভিন্ন সময় লোভ দেখিয়ে পাসপোর্টে পূর্বে আশে পাশের ২/ ৩ টা দেশের ভিসা থাকলেই উন্নত বিশ্বের দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা এবং ইউরোপের ভিসার জন্য আমন্ত্রণ করেন। আর এই লোভে যোগ্য অযোগ্য সবাই তখন সেদিকে দৌড়াতে থাকেন। যেন ভিসার মালিক সেই কোম্পানিগুলো।



শুনলে হয়তো অবাক হবেন একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্যে এই প্রসেসিং কিছুই না। আপনার যোগ্যতাতেই আপনি ভিসা পাবেন। আপনার যোগ্যতার সঙ্গে যদি সঠিক ডকুমেন্টস থাকে এবং নিয়ম অনুযায়ী সব জমা দিতে পারেন তাহলে ভিসা নিশ্চিত। এখানে এজেন্টগুলো শুধুমাত্র আপনার ভিসা ফর্মটি ফিলাপ করেন আর বাকি সব ডকুমেন্টস আপনার কাছে থেকে নিয়ে আপনাকেই ভিসার জন্য দাঁড়াতে হবে। এখানে এজেন্টের কোন ক্ষমতা নেই আপনাকে ভিসা পাইয়ে দেয়ার।

আমি নিজে নিজেই যেহেতু কিছু উন্নত দেশের ভিসা পেয়েছি তাই আমাদের দেশের জন্য তাদের কিছু কিছু প্রধান রিকয়েরমেন্ট সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি। অন্য দেশের ট্যুরিস্টদের জন্য খুব ইজি হলেও আমাদের ব্যাপারে তাদের রিকয়েরমেন্টগুলো অটল। আপনি শুধুমাত্র ২/ ৩ টা দেশ পূর্বে ঘুরলেই ভিসা পাবেন এটা মোটেও সত্য নয়।

উন্নত দেশগুলোতে ভিসা পাওয়ার প্রধান শর্ত আপনাকে তাদের নিকট ডকুমেন্টসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, আপনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ভালো আছেন আর আপনি একজন নিয়মিত ট্যুরিস্ট এবং ট্যুর শেষে অবশ্যই যথা সময়ে দেশে ফিরবেন। এই প্রমাণ তারা ঠিকমত না পেলে কোনোদিনও আপনি ভিসা পাবেন না।

কিভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে আপনি দেশে ফিরে আসবেন এবং এই প্রমাণের জন্য এ্যম্বাসি একজন ট্যুরিস্টের কোন কোন দিক খুব গুরুত্ব দেয় তার কিছু বেসিক দিক নিম্নরুপঃ

ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

▶ আপনাকে ভালো বেতনের চাকুরীজীবী অথবা ভালো আয়ের ব্যবসায়ী হতে হবে।

▶ চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রে অফিস থেকে অফিসের প্যাডে NOC এবং Salary Certificate জমা দিতে হবে।

▶ ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে আপডেট ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং মাসিক ইনকাম দেখাতে হবে।

▶ চাকুরীজীবীর ব্যাংক Salary Account থাকতে হবে এবং ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।

▶ আপনার মাসিক ইনকামের সঙ্গে ব্যয় এবং ব্যাংকে অবশিষ্ট সেভিংসের একটা মিল থাকতে হবে।

▶ আলাদা একাধিক ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট দেখানো যেতে পারে।

▶ ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর একটা ধারাবাহিকতা থাকতে হবে ২ দিনের মধ্যে লাখ লাখ টাকা জমা দিলে হবে না। এতে তারা একাউন্ট সাজানো মনে করেন এবং ভাবেন আপনি যে কারো কাছে টাকা ধার করে ভিসার জন্য জমা দিয়েছেন।

▶ TIN সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

▶ দীর্ঘদিনের FDR অথবা সঞ্চয়পত্র থাকতে হবে (ভিসার জন্য নতুন করলে হবে না)।

▶ যেকোনো সম্পদ যেমন নিজের নামে জমি বা ফ্লাটের দলিল অধিক গ্রহণযোগ্য।

▶ বছরে এক অথবা দুইবার বিদেশ ভ্রমণ থাকা ভাল ভিসার জন্য ১০ দিনের মধ্যে তিনটা দেশ ঘুরলে হবে না তাহলে এটি সাজানো মনে হবে।

▶ বিবাহিতদের জন্য ভিসা পাওয়া অগ্রধিকার, তবে সেক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কেই একসাথে একই সময়ে পূর্বে বিদেশ ভ্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে।

▶ শুধুমাত্র ঘুরার উদ্দেশ্য নিয়ে নয় বরং বিভিন্ন ওকেশনের উদ্দেশ্য হাইলাইট করা ভিসার জন্য ভালো।

▶ ইনভাইটেশন অথবা হোটেল বুকিং থাকতে হবে আবার অনেক ক্ষেত্রে ইনভাইটেশন জরুরী (ইনভাইটেশন লেটার নিয়ম অনুযায়ী লিখতে হবে।

▶ কিছু কিছু এ্যাম্বাসি ভিসার জন্য ইন্টার্ভিউ নিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্মার্টের সঙ্গে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তবে ওভার স্মার্ট হওয়া ভালো নয়। তাদের প্রথম প্রশ্নই থাকবে আপনি কেন যেতে চান। এই ব্যাপারে সঠিক এবং গুরুত্বপূর্ণ উত্তর দিতে হবে। শুধু বেড়াতে বা ঘুরতে যেতে চান তা না হয়ে কোন কারণ তুলে ধরতে পারেন।



আমি উপরে শুধুমাত্র কিছু বেসিক বিষয় বা ডকুমেন্টের কথা লিখেছি এছাড়া বিভিন্ন দেশের জন্য নিজস্ব বিভিন্ন ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনি যে দেশেরই ভিসা করুন না কেন সেই দেশের ওয়েভ সাইট ভিজিট করে তাদের চেকলিস্ট সংগ্রহ করুন এবং সেই অনুযায়ী সকল ডকুমেন্ট জমা দিন। আর মনে রাখবেন আপনার যেকোনো বাংলা ডকুমেন্টস অবশ্যই ইংরেজীতে অনুবাদসহ তা নোটারী করে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন আপনার ডকুমেন্টস যেন ঝকঝকে এবং ডিসিপ্লিন থাকে। অস্পষ্ট এবং অগোছালো কাগজ তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে।

এমনভাবে ডকুমেন্টসগুলো জমা দিবেন যাতে তারা হাতে নিয়ে খুব সহজে সব বুঝতে পারেন। এছাড়া আপনার জমাকৃত সকল তথ্য অবশ্যই সত্য হতে হবে যাতে তারা অনুসন্ধান করলে যেন সঠিক তথ্য পায়। নিজেকে ভিসা পাওয়ার যোগ্য করে আবেদন জমা দিবেন নতুবা অযথা রিফিউজ হয়ে আপনার পাসপোর্টকে নষ্ট করবেন না। কারণ কোন দেশে একবার রিফিউজ হলে পরবর্তীতে আপনি যোগ্য হলেও সেই দেশ আর ভিসা দিতে চায়না। তবে আপনাকে আরো একটি কথা মাথায় রাখতে হবে আপনি যদি খুবই যোগ্য কিংবা কোন সুপারস্টারও হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রেও আপনি ৮০ শতাংশ এর বেশী ভিসার আশা করতে পারবেন না। পরিবেশ পরিস্থিতি আর আপনার কোন প্রকার ভুলের কারনেও রিফিউজ হতে পারেন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে

‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে

জেনে নিন ‘নিউজিল্যান্ড পাড়ায়’ দেখবেন যেখানে । দেশের মধ্যেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *