ত্বকের অ্যালার্জি, লক্ষণ ও প্রতিকারসমূহ

ত্বকের অ্যালার্জি, লক্ষণ ও প্রতিকারসমূহ

অনেক দিন আগে গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম, সেখানে অদ্ভূত এক ঘটনা ঘটেছিল! সবাই মিলে যখন মজা করে আম খাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ করেই আমার এক ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল, একইসাথে গায়ে চাকা চাকা হয়ে ফুলে গেল! তখন শুনলাম আমে নাকি তার অ্যালার্জি আছে! আর আমার পাশের বাসার দাদুতো তার নাতিকে বিড়াল পুষতে দেন না। বলেন বিড়াল বাড়িতে থাকলে হাঁপানি রোগ মানে শ্বাসকষ্ট হয়! ব্যাপারটা বেশ আশ্চর্যজনক কিন্তু! কারো চিংড়িতে, কারও আমে, কারও বেগুনে আবার কারও বা পোষা কুকুর বা বিড়ালে আবার কেউ ফুলের সুবাস নিয়ে হাঁচি দিলেও বলে অ্যালার্জি! কি অদ্ভূত তাই না? সবাই শুধু অ্যালার্জি নিয়ে চিন্তায় থাকে।

ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি নিয়ে জানার আগে জানতে হবে আসলে এই অ্যালার্জি কি? কত ধরনেরই বা অ্যালার্জি রয়েছে? আর এই অ্যালার্জি থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায়টাই বা কি? তাহলে আজকে জেনে নেওয়া যাক অ্যালার্জির আদ্যোপ্রান্ত!

অ্যালার্জি কি?

অ্যালার্জি আসলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম (Immune System) বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। সাধারণত, আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখনই আমাদের দেহের সুরক্ষার জন্য কাজ করে যখন কোনও ক্ষতিকর বস্তু, যেমন- ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস, ছত্রাক ও বিভিন্ন ধরনের পরজীবী আমাদের দেহে প্রবেশ করতে চায়। এ ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ইমিউন সিস্টেম কাজ করে। তাহলে সমস্যার উদ্ভব কোথায়? হ্যাঁ, সমস্যাটা তখনি হয় যখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অক্ষতিকর বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে দেহের সুরক্ষার কাজ করে। আর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে কারও হাঁচির মাধ্যমে, চোখের অ্যালার্জি, কারও চুলকানি, কারও বা শ্বাসকষ্ট ও র‍্যাশ বা চাকা হয়ে ফুলে ওঠার মাধ্যমে। বলে রাখা ভালো, যে সকল বস্তুর কারণে আমাদের আলার্জি হয়, তাকে অ্যালার্জেন বলে। তার মানে অ্যালার্জি কোনো রোগ নয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিরূপ অবস্থার একটি লক্ষণ মাত্র।


আরো পড়ুন: চোখে এলার্জি হয় কেন? সমস্যা ও সমাধান
আরো পড়ুন: গর্ভবতী মায়েরদের এই ৫টি বিপদ থেকে সাবধান
আরো পড়ুন: ব্রণের সমস্যা দূর করবে ড্রাগন ফল


কত ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে?

অনেক ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে যা প্রধান ৪ টি শ্রেণীতে অন্তর্ভূক্ত। প্রধান ৪ টি শ্রেণী হলো-

১. ত্বকের সংস্পর্শে (skin contact)

২. আহারে (Ingestion)

৩. ইনজেকশন (Injection)

৪. শ্বাস-প্রশ্বাসে (Inhalation)

আজ আমরা আপনাদের জানাবো, ত্বকের সংস্পর্শে অ্যালার্জেন আসলে যে সকল অ্যালার্জি হয় তা নিয়ে। ত্বকের সংস্পর্শে অ্যালার্জি (Skin contact allergy)

আমাদের ত্বকে বা স্কিন এর যে আলার্জি হয় সেগুলোকেই ত্বকের সংস্পর্শে অ্যালার্জি বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গাছপালা, ধুলোবালি, পশুপাখি, এমনকি গহনাও! কি করবেন ত্বকের বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি এর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে?

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের ৪ ধরনের আলার্জি সম্পর্কে!

ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি

১. বিষাক্ত গাছ (Poison Plant)

আজকাল যেখানে সেখানে পয়জন আইভি নামক গাছ জন্মাচ্ছে। কোনও এক কারণে এই গাছের সংস্পর্শে আসলেই অ্যালার্জির সমস্যা হচ্ছে। তবে সবার যে হচ্ছে তা নয়, যাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমেই পয়জন আইভি গাছকে ক্ষতিকারক মনে করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে নিচ্ছে ,শুধুমাত্র তাদের বেলাতেই গা চুলকানো ও জ্বালা করার সমস্যা দেখা যায়। যাদের পয়জন আইভি গাছে অ্যালার্জি আছে, তাদের ওক (Oak) এবং সুমাক (Sumac) গাছের সংস্পর্শে আসলেও অ্যালার্জি হতে পারে।

লক্ষণ

বিষাক্ত গাছ বা কোনো লতাপাতা থেকে অ্যালার্জি হলে চুলকানো বা জ্বালাভাব ২ থেকে ৩ দিন থেকে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।

প্রতিকার

এই অ্যালার্জি থেকে প্রতিকার পেতে ঘরোয়া কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। সেগুলো হলো-

  • ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
  • ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর ঠাণ্ডা পানিতে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে অ্যালার্জি হওয়া জায়গায় আলতো করে মুছে নিন।
  • এ সময় মাঝে মাঝে ওটমিল বাথ নিতে পারেন। এতে আরাম পাবেন।

২. ল্যাটেক্স অ্যালার্জি (Latex allergy)

অপরিচিত মনে হচ্ছে? বললেই খুব পরিচিত লাগবে। তার আগে বলি ল্যাটেক্স কি? ল্যাটেক্স শব্দটি এসেছে ব্রাজিলের রাবার গাছের রস থেকে। এই আঠালো রস থেকেই তৈরি হয় বিভিন্ন রাবার জাতীয় জিনিস, যেমন- বেলুন, রাবার ব্যান্ড, রাবার বল, গ্লাভস, কনডম ইত্যাদি। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক রাবার জাতীয় প্রোডাক্ট-কেই ল্যাটেক্স বলে। এখন তো বুঝতে পারছেন আপনার ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে না নেই? ৩ ধরনের ল্যাটেক্স অ্যালার্জি রয়েছে-

  • টাইপ-১ (IgE-mediated latex allergy)
  • টাইপ-৪ (Cell-mediated contact dermatitis latex allergy)
  • ইরিট্যান্ট কনটাক্ট ডার্মাটিটিস (Irritant contact dermatitis)

লক্ষণ

এই ৩ ধরনের ল্যাটেক্স অ্যালার্জিতেই সাধারণ লক্ষণ হলো ল্যাটেক্স এর স্পর্শ পাওয়া জায়গায় চুলকানি হওয়া ও ফুলে যাওয়া। আর খুব বেশী মারাত্নক পর্যায়ের অ্যালার্জি হলে নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ জ্বালা করা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

প্রতিকার

এই ল্যাটেক্স অ্যালার্জি খুব কম মানুষের বলতে গেলে ১ শংতাশ মানুষের থাকে। যাদের এই অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা ল্যাটেক্স জাতীয় প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলবেন। আর এড়িয়ে চলা সম্ভব না হলে নন-ল্যাটেক্স জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন। আর আপনার নিজের ভালোর জন্যই আপনার সহকর্মী, ডাক্তার, ডেন্টিস্টদের নন-ল্যাটেক্স জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে বলবেন।

৩. পোষ্য অ্যালার্জি (Pet allergy)

কম/বেশি অনেকেরই পোষ্য কুকুর বা বিড়াল থাকে। এই পোষ্য কুকুর-বিড়ালের লোম থেকে আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। এই ধারণাটি আসলে ভুল। আসলে কুকুর বা বিড়ালের লোম কোনো অ্যালার্জেন নয়, তবে পোষ্যের লোমে বিভিন্ন অ্যালার্জেন থাকে যেমন- ধূলাবালি, পোষ্যের মলমূত্র, লালা ও পোষ্যের মৃতকোষ। পোষ্য না হলেও রাস্তায় থাকা মৃত পশুপাখির কাছাকাছি গেলেও অ্যালার্জি হতে পারে।

লক্ষণ

পেট অ্যালার্জি হলে হাঁচি ও শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়।

প্রতিকার

আপনার প্রিয় পোষ্যকে সবসময় পরিষ্কার স্থানে রাখুন ও নিয়মিত গোসল করিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে শুকিয়ে পোষ্যকে স্যাতস্যাতে ভাব হতে দূরে রেখে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দূরে থাকুন!


আরো পড়ুন: গরমে যেসব খাবার সুস্থ রাখবে
আরো পড়ুন: নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সেরা ১৬ টি যোগ আসন
আরো পড়ুন: গর্ভবতী মায়েরদের এই ৫টি বিপদ থেকে সাবধান


৪. জুয়েলারি অ্যালার্জি (Jewellery allergy)

গহনা যে অ্যালার্জি হয় এতে অবাক হবার কিছু নেই। আমার মতো অনেকেই আছেন এই অ্যালার্জি এর ভুক্তভোগী। খুব কষ্ট হয় যখন পছন্দের কোনো গহনা অ্যালার্জি এর কারণে ব্যবহার করা যায় না। আসলে একে নিকেল অ্যালার্জি (Nickel allergy) বলা হয়। পিওর গোল্ড বা সিলভারের সঙ্গে নিকেল বা অন্যান্য ধাতু মিশিয়ে বা প্রলেপ দিয়ে এইসব গহনা তৈরি করা হয়। এতে করে দাম কমে। আর যাদের শরীর নিকেল বা অন্যান্য ধাতু অ্যালার্জেন হিসেবে সনাক্ত করে তাদের ক্ষেত্রেই জুয়েলারি অ্যালার্জি হবার প্রবণতা দেখা যায়। তবে সমীক্ষা অনুযায়ী, ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি নিয়ে যে বললাম এগুলোর মধ্যে জুয়েলারি অ্যালার্জি মেয়েদের সবচেয়ে বেশি হয়।

লক্ষণ

জুয়েলারি বা নিকেল অ্যালার্জি হলে জুয়েলারির সংস্পর্শ পাওয়া জায়গায় জুয়েলারি পরার সাথে সাথে না হলেও ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে বা ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। সেখানে র‍্যাশ উঠে চুলকানি, পানি ফোটা বা ত্বক চাকা হয়ে ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় ভয়াবহভাবে ইনফেকশন হতে পারে।

প্রতিকার

জুয়েলারি অ্যালার্জি থেকে পরিত্রাণ পাবার সহজ উপায় হলো নিকেল সমৃদ্ধ জুয়েলারি বা গহনা এড়িয়ে চলা। সিলভার অ্যালয় বা হোয়াইট গোল্ড অ্যালয় এর জুয়েলারি পরতে পারেন। গোল্ড আর সিলভারে কেন অ্যালার্জি হয় না? জানেন নিশ্চয়ই, তাও আবার বলছি, গোল্ড ও সিলভার হলো অ্যান্টিসেপ্টিক!

এই হলো ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের স্কিন অ্যালার্জি আছে। এই ত্বকের ৪ ধরনের অ্যালার্জি থেকে মুক্তির ঘরোয়া কিছু টিপস তো দিয়েই দিয়েছি। তবে খুব বেশি মাত্রায় অ্যালার্জি হলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন!

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

ব্রণ দূর করার উপায় ? ব্রণ ও ব্রণের কালো দাগ দূর

ব্রণ দূর করার উপায় ? ব্রণ ও ব্রণের কালো দাগ দূর

দুর্বা ডেস্ক:  ব্রণ বা অ্যাকনি বাড়িতে ঢাকা মেডিকেলে পরিভাষায় বলি যেটা শুনে খুব কমন একটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *