নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সেরা ১৬ টি যোগ আসন
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে অধিকাংশ মহিলার সন্তান –ধারণ সমস্যা হচ্ছে তাদের মানসিক চাপের জন্য। এই মানসিক চাপের জন্য তাদের নানা রকম শারীরিক এবং সাইকলজিক্যাল সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় যে পুরো পৃথিবী জুড়ে ৩ শতাংশ দম্পতিরাই সন্তান প্রজনন সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভোগেন।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার অনেকগুলি পদ্ধতি আছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও গ্রাহণযোগ্য যেটি। সেটি হলো সন্তান প্রজননে সাহায্যকারী কিছু যোগ আসন।
প্রজনন উপযোগী যোগা কি?
ভারতবর্ষে যোগা ৫ হাজার বছরের পুরনো একটি অনুশীলন পদ্ধতি। যেটি আপনার শরীর, মন এবং আত্মার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।
প্রজনন উপযোগী যোগা, যেটি আপনার গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, সেটি কোন অন্য ধরনের যোগা নয়। তবে কিছু ধরণের যোগ– আসন আছে। যেগুলো শরীরের বিষগুলিকে পরিষ্কার করে আপনাকে চাপ মুক্ত হতে সাহায্য করে।
এই ধরণের যোগ – আসনের সমাহার মহিলাদের গর্ভধারণের জন্য আদর্শ যেহেতু এগুলো তাদের শরীরে শক্তি যোগায় এবং তাদের সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়।
হাভার্ডে এক গবেষণায় প্রমাণিত, যারা প্রজননের সহায়ক যোগাসনের কোর্স গুলি করেন তাদের খুব সহজেই সন্তান ধারণের সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন: (দামসহ)ছেলেদের সে’ক্সর বাড়ানোর টেবলেটের নাম
আরো পড়ুর:শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কারণীয়
আরো পড়ুন: যেসব উপায় সন্তান কথা শোনতে বাধ্য হবে
প্রজনন অক্ষমতার কারণ গুলো কি?
বয়স
এর সংখ্যা মহিলাদের মধ্য ৩৫ এর পর থেকে প্রজনন ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে। এর প্রাথমিক কারণ হল মহিলারা অল্প বয়সে যত সংখ্যক ঊন্নত মানের ডিম্বাণু তাদের শরীরে উৎপন্ন করতে পারে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণু উৎপাদন এবং মান ক্রমশ কমতে থাকে।
তামাক
ধূমপান প্রে’গনেন্সি উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। সি’গারেটে বি’ষ থাকে, যা প্রজনন সিস্টেমে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
অ্যালকোহল
যদিও কোনো প্রমাণিত তথ্য নেই যে প্রজননের ক্ষেত্রে অ্যা’লকোহল ঠিক কি প্রভাব ফেলে, তবে বিশ্ব জুড়ে গবেষণায় এটি নির্দেশ করা হয়েছে যে, নিয়মিত অ্যাল’কোহল সেবন করলে তা সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
অনিয়মিত খাদ্যাভাস
মহিলাদের অনিয়মিত খাদ্যাভাস এবং শিথীল জীবন যাত্রার মান তাদের প্রজননের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস তাদের নিয়মিত ঋ’তুস্রা’বেও বাধা সৃষ্টি করে। যেটি ডাক্তারী ভাষায় আমিনোরিয়া এর শর্ত, যেটি কমজোরী প্রজনন ক্ষমতায় পরিণত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ফ্যালোপিয়ান টিউব ও জ’রায়ু
ফেলোপিয়ান টিউব হলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজনন অ’ঙ্গ, যেটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় পূর্ববর্তী কোন ইনফেকশন, ব্লকেজ অথবা দীর্ঘমেয়াদী কোন অসুখের জন্য। এই কারণগুলি শু’ক্রাণু গুলিকে ডিম্বানুর দিকে যেতে বাধা দেয়। অথবা জ’রায়ুর মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বানুর চলাফেরায় বাধা দেয়, যার ফলে ইনফার্টিলিটি দেখা যায়।
মানসিক চাপ
কাজের জায়গায় পরিবারে কিংবা অন্যান্য অনেক কারণেই আমাদের মানসিক চাপ তৈরি হয় যা, গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সন্তান ধারণে অক্ষমতা মানসিক চাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি খারাপ চক্র তৈরী করে। যা ভেঙ্গে সকলেরি বেরিয়ে আসা উচিত।
এ ক্ষেত্রে প্রজনন উপযোগী যোগ–আসন গুলো এই সকল সমস্যা থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। এই যোগা গুলো নিয়মিত অভ্যাস এর মাধ্যমে আপনার ইনফার্টিলিটি সমস্যাগুলি দূর করা সম্ভব। যা আপনার শারীরিক সক্ষমতার মাত্রা বাড়ানোর সাথে সাথে আপনার প্রেগনেন্সির সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তোলে।
যোগ আসন কিভাবে আপনার প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে?
আপনার গর্ভধারনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলার জন্য আগে থেকেই প্রয়োজন একটি সুস্থ শরীর ও শান্ত মন।। যোগা আপনার শরীরে বল বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ মুক্ত করে, ফলে প্রজননে প্রভাব বিস্তারে এক সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।। যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ উভয় এর বিকাশ ঘটায়। যা গর্ভধারণের সহায়ক। অর্থাৎ বলা যায় এক ঢিলে ২ পাখি মা’রে।
যদি এগুলি নিয়মিত অভ্যাস করা যায় তবে যোগাসন গুলিই হতে পারে আপনার প্রজননে এর সম্ভাবনার সবচেয়ে বেশি সহায়ক।
প্রজনন এবং গর্ভধারণের ক্ষেত্রে যোগ আসনের সুবিধাগুলো
যখন আপনি পরিবার পরিকল্পনা শুরু করেন সেই সময় থেকে নিয়মিত যোগ অভ্যাস আপনার প্রজনন এবং গর্ভধারণের ক্ষমতা আরো বেশি মাত্রায় বাড়িয়ে তোলে। প্রজনন মাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়মিত কিছু যোগ অভ্যাসের সুবিধা গুলি আলোচনা করা হল।
১. যোগা মানসিক চাপ কমায়
সঠিক ভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস মানসিক চাপ কমায়, যার ফলে শরীরে কর্টিশোল নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে আপনার সন্তান ধারণের ও প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে যায়। আর একজন সুস্থ শরীরের অধিকারী হয়ে ওঠেন। মানসিক চাপ কমে যাওয়ার ফলে আপনি রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন এবং আপনার শরীর বিষক্রিয়া মুক্ত হয়।
২. যোগা শরীরে র’ক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়ায়
নিয়মিত যোগাসন আপনার শরীরের দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং ব্লকেজের মতন শ’ত্রুগুলোকে দূর করে। যেগুলো আপনার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফার্টিলিটি যোগা গুলো নিয়মিত অভ্যাসের ফলে আপনার শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়ে।
র’ক্তের গুণগতমান প্রজনন এবং গর্ভধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা গর্ভস্থ ভ্রূ’ণের সঠিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
৩. যোগা আপনার শরীরে হরমোন গুলোর সাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে
বিভিন্ন হরমোনের অসামঞ্জস্যতা বৃদ্ধির ফলে আপনার সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে যেটি শুধুমাত্র আপনার শারীরিক নয় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ও প্রভাব ফেলে।। যোগা আপনার মনকে শান্ত করে এবং হরমোনগুলোর অসামঞ্জস্যতা নিয়ন্ত্রণ করে।
সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত যোগাভ্যাস শুরু করুন। যা আপনার শরীরের অস্বাভাবিক এবং অপ্রয়োজনীয় হরমোনগুলির পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে এবং গর্ভধারণের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়।
৪. যোগা ডিম্বাশয়ের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে
ডিম্বাশয় এর কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে মহিলাদের মধ্যে গর্ভধারণের অক্ষমতা প্রকাশ পায়। ডাক্তারি চিকিৎসা ছাড়াও ডিম্বাশয়ের সংক্রান্ত নানান সমস্যা খুব স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা করা যায় বিভিন্ন প্রকার যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে।
সন্তান ধারণের জন্য যদি আপনি নিয়মিত যোগ আসনের অভ্যাস করেন তবে আপনার শরীরে পজিটিভ এনার্জি অনেক বেড়ে যায় যা সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রভূত সাহায্য করে
সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে ওষুধের থেকেও একটি স্বাস্থ্যকর শরীর অনেক বেশি আর তাড়াতাড়ি সাড়া দেয়। তাই নিয়মিত যোগ আসন করা দরকার।
নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সেরা ১৬ টি যোগ আসন
আপনার প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং ইনফার্টিলিটি দূর করার জন্য নিয়মিত যে আসনগুলো অভ্যাস করা প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল। এইগুলি নিয়মিত অভ্যাস’র ফলে আপনার শরীরিক সমস্যাগুলো দূর হওয়া সম্ভব।
১. ভ্রামরী প্রাণায়াম
মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল ভ্রামরী প্রাণায়াম। ইনফার্টিলিটির অন্যতম কারণ হল মানসিক চাপ। আর এটি দূর করার জন্য ভ্রামরী প্রাণায়ামটি করা উচিত।
কিভাবে এটি করবেন
- আপনার চোখ ২ টি বন্ধ করে আরাম করে বসুন
- আপনার হাতের তর্জনী গুলি কানের তরুণাস্থির উপর প্রতিস্থাপিত করুন যাতে চারিপাশের আওয়াজ আর কানে প্রবেশ না করতে পারে
- গভীরভাবে প্রশ্বাস নিন এবং নিঃশ্বাস ছাড়ুন, গুনগুন শব্দের সাথে।
- এটি পুনরায় ৫-৬ বার করুন এবং যতটা সম্ভব দীর্ঘমেয়াদি করার চেষ্টা করুন।
২. পশ্চিমত্তানাসন
পশ্চিমত্তানাসন টি সামনের দিকে ঝুঁকে বসে করা আসন হিসেবেও পরিচিত।। এই আসনটি আপনার লোয়ার ব্যাক, পশ্চাৎদেশ এবং। হ্যামস্ট্রিংয়ের পেশীগুলোকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এটি মহিলাদের প্রজননের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য খুবই ব্যবহারযোগ্য একটি আসন। যেহেতু এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অ’ঙ্গগুলি যেমন ডি’ম্বাশয় এবং পাকস্থলীতে চাপ দেয় যা মানসিক চাপ কমাতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে।
কিভাবে এটি করবেন
- আপনার পা গুলিকে সামনের দিকে প্রসারিত করে বসুন এবং পায়ের আঙ্গুল গুলিকে আপনার সোজাসুজিভাবে চিহ্নিত করুন।
- আপনার বাহুগুলিকে মাথার উপর প্রসারিত করে প্রশ্বাস নিন।
- আপনার পিঠের শিরদাঁড়া টি সোজা রেখে ধীরে ধীরে সামনের দিকে নিচু হন এবং পাশ থেকে আপনার পায়ের পাতা গুলো ধরবার চেষ্টা করুন যখন প্রশ্বাস ত্যাগ করবেন।
- ২ মিনিট এই অবস্থায় থাকুন।
- প্রশ্বাস নিন এবং পুনরায় আগের অবস্থায় উঠে বসুন। আপনার বাহুগুলো প্রসারিত করুন এবং তারপর নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন।
- একটি অভ্যাস করতে থাকুন ৫-৬ বার পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি আরাম পান।
৩. হস্ত পদ্মাসন
এটি সাধারণত দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে করতে হয়। হস্ত পদ্মাসন আপনার পিঠে এবং তলপেটের সমস্ত পেশীগুলোকে প্রসারিত করে যা আপনার শরীরে র’ক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এই আসনটি আপনার শরীরকে নমনীয় করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার উদর অঞ্চলের সমস্ত চাপ দূর করে
কিভাবে এটি করবেন
- সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং আপনার বাহুগুলিকে মাথার ওপর প্রসারিত করুন।
- ধীরে ধীরে নিচের দিকে ঝুকুন এবং আপনার হাতের সাহায্যে পায়ের পাতা গুলি ধরবার চেষ্টা করুন। এটি করার সময় হাঁটু ভাঙবেন না।
- যদি আপনি আপনার পায়ের পাতা গুলি ধরতে না পারেন তবে চেষ্টা করুন যতটা বেশী সম্ভব নিচু হওয়া যায়।
- এই অবস্থায় এক মিনিট থাকুন এবং পুনরায় ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান।
- এটি ১০-১২ বার করবার চেষ্টা করুন। নিয়মিত অভ্যেস করলে আপনি আপনার পায়ের পাতাটিও ধরতে সক্ষম হবেন।
৪. জানু শীর্ষাসন
এই আসনটি করা কেবল কঠিনই নয় প্রেগনেন্সির সময় এটি ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। ইনফার্টিলিটি চিকিৎসায় এটি ভীষণ জনপ্রিয় একটি আসন। এটি এক পা সামনের দিকে ভাঁজ করে করতে হয়। এটি শরীরের ক্যালভ এবং হ্যামস্ট্রিং গুলিকে প্রসারিত করে যখন উদরের পেশীগুলি শ্লথন ঘটে।
কিভাবে এটি করবেন
- আপনার পা গুলি সামনের দিকে প্রসারিত করে আরাম করে বসুন।
- যখন আপনার ডান পা র্টি প্রসারিত করবেন তখন বা পা র্টি ভিতরের দিকে ভাজ করুন। এবং যতটা সম্ভব সামনের দিকে ঝুঁকে আপনার ডান পা র্টির পায়ের পাতা আপনার ডান হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করুন।
- আধা মিনিটি এই অবস্থায় থাকার পর পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। এরপর আপনার ডান পা টি ভিতরের দিকে
- ভাঁজ করুন এবং বা পা টিকে আগের একই পদ্ধতিতে সামনের দিকে প্রসারিত করুন।
যতটা সম্ভব নিচু হয়ে আপনার বাঁ পায়ের পাতা টিকে ধরবার চেষ্টা করুন। পুনরায় আধা মিনিটি এই অবস্থায় থাকুন এবং - সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি শেষ করে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।
- ৪-৫ বার পুরো প্রক্রিয়াটি পুনরায় করুন।
৫. বাধা কোনাসন
বাধা কোন আসনটি খুব সুন্দর একটি ভঙ্গি। এটি আপনার ইনার থাই–এর,জেনিটাল এর,পশ্চাদদেশীয় অঞ্চলের এবং হাটুর পেশী গুলোকে প্রসারিত করে আপনার ফ্লেক্সিবিলিটি কে বাড়িয়ে তোলে। এটি ভীষণ সাহায্যকারী একটি ফার্টিলিটি যোগ আসন। এটি আপনার প্রসবের সময়টি কে অপেক্ষাকৃত কম যন্ত্রণাদায়ক ও সহজ করে তুলতে সাহায্য করে।
কিভাবে এটি করবেন
- আপনার মেরুদন্ড সোজা রেখে আরাম করে। বসুন এবং পা গুলিকে সামনের দিকে প্রসারিত করুন।
- পা গুলোকে ভিতরের দিকে ভাঁজ করুন এমনভাবে যাতে আপনার পায়ের পাতার তলার দিক গুলো একে অপরের মুখোমুখি হয়ে থাকে।
- পায়ের পাতা গুলো একসঙ্গে ধরুন এবং তাদেরকে যতটা সম্ভব শ্রেণীর কাছাকাছি টেনে নিয়ে যান।
- যখন পায়ের পাতা গুলো ধরবেন তখন আপনার থাই গুলিকে উপর এবং নিচের দিকে মুভ করান ঠিক প্রজাপতির ডানার মত।
- এই আসনটি যতটা বেশি সম্ভব আপনি অভ্যাস করুন। দিনে ৫-১০ বার এই আসনটি করা আদর্শ।
৬. সুপ্ত বাধা কোন আসন
এই আসনটি আপনার ইনার থাই এবং কুঁচকির শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি ঋতু ক্র্যাম্প,ব্লোটিং এবং চাপ মুক্ত থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে।
কিভাবে এটি করবেন
- মেঝেতে পিঠ দিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। প্রয়োজন হলে আপনার ঘাড় টি একটি বালিশের উপর রাখুন।
- আপনার হাতের পাতাগুলো উপরের দিকে দৃঢ়ভাবে জড়ো করুন।
- আপনার হাঁটু গুলোকে উপরের দিকে ভাঁজ করুন এবং পায়ের পাতা গুলিকে মেঝে স্পর্শ করিয়ে জড়ো করুন।
- আপনার হাঁটু ২ টি কে পাশের দিকে প্রসারিত করুন যাতে আপনার পায়ের পাতা গুলো একে অপরকে স্পর্শ করতে পারে।
- আসনটি ৭-৮ মিনিট ধরে বজায় রাখুন।
৭. বালাসন
বালাসন মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হতে এবং রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। যেটি প্রজননের জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন। এই আসনটি আপনার পিঠ, হাঁটু, হিপএবং থাইয়ের পেশি গুলিকে প্রসারিত করে। এই অশান্তি অবশ্যই খালি পেটে করতে হবে। সুতরাং এই আসনটি কোন খাবার খাবার অন্তত ৪-৬ ঘন্টা পরে করতে হবে।
কিভাবে এটি করবেন
- মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসুন। এবং লক্ষ্য করুন যখন আপনি আপনার হিলের উপরে বসছেন আপনার আঙ্গুলের ডগা গুলি
- একে অপরের সঙ্গে লেগে রয়েছে। আপনার হাঁটু ২ টি কি আপনার পশ্চাৎদেশের দিক থেকে প্রসারিত করুন এবং ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।
- আপনার বাহুগুলোকে প্রসারিত করে আপনার সামনের দিকে রাখুন।
- যতক্ষণ সম্ভব এই অবস্থায় আপনি নিচু হয়ে শুয়ে থাকুন এবং সাধারন ভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস নিন।
৮. কপালভাতি প্রাণায়াম
কপালভাতি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় যোগাসন যেটি বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার রূপে ব্যবহার হয়। এটি আপনার মনকে তরতাজা করে তুলে। দ্রুত আপনার মানসিক চাপ কমায়। যা আপনাকে আরো বেশি পজিটিভ করে তোলে।
কিভাবে এটি করবেন
- পিঠ সোজা রেখে চোখ বন্ধ করে সোজা হয়ে বসুন
- আপনার নাসারন্ধ্র দিয়ে গভীরভাবে প্রশ্বাস নিন এবং জোরের সঙ্গে নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন যাতে আপনার স্টমাক ১ টি ভিতরের দিকে ঢুকে যায়।
- এই যোগ আসনটি ৫ মিনিট ধরে করুন এবং এই সময় আপনার শরীর ও মনের পরিবর্তন টি লক্ষ্য করুন।
৯. সর্বাঙ্গাসন
এই আসনটি কাঁধের ওপর দাঁড়ানো আসন নামেও পরিচিত। এটি থাইরয়েড কমাতে এবং সেই সঙ্গে মানসিক চাপমুক্ত হতে সাহায্য করে। যেহেতু এই আসনটি সোজাসুজি থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করে তাই এই আসনটি একটি অন্যতম ফার্টিলিটি আসন।
মহিলাদের ইনফার্টিলিটির একটি অন্যতম কারণ হল থাইরয়েড কন্ডিশন। থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) এর ঘাটতি শরীরের নানান সমস্যার সৃষ্টি করে, যা আপনার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে।
কিভাবে এটি করবেন
- পা সোজা করে মাটিতে শুয়ে পড়ুন।
- আপনার পা গুলিকে 90 ডিগ্রী করে ওপরের দিকে তুলে রাখুন এবং আপনার হাতের তালু দিয়ে মেঝেতে চাপ দিন যাতে কোমোরের অংশ থেকে পা এর পাতা পর্যন্ত উপরের দিকে ওঠে।
- ৫০-১০০ সেকেন্ড পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় রাখুন।
- আপনার সুবিধা অনুযায়ী এই ভঙ্গিমাটি ৫-১০ বার করুন।
১০. সেতু বন্ধাসন
এটি ব্রিজ পোজ নামে জনপ্রিয়। এটি শরীরের রক্ত সরবরাহ মাত্রার উন্নতি ঘটায়। যেটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম এবং ব্রেইন এ প্রভাব ফেলে।
কিভাবে এটি করবেন
- আপনার হাত গুলো পাশে রেখে মেঝেতে পিঠ দিয়ে শোন।
- ধীরে ধীরে আপনার । হাঁটু ভাঁজ করুন এবং। এবং আপনার পায়ের পাতা গুলো এমনভাবে স্থাপন করুন যাতে তারা মেঝে স্পর্শ করে
- যখন আপনার হাত এবং পায়ের পাতা গুলো নিজের মাটিতে সাম্যতা বজায় রাখে সেই সময় আপনার শ্রোণী অঞ্চলটি উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন।
- চেষ্টা করুন ১২-১৫ সেকেন্ড এই ভঙ্গীমায় থাকার।
আরো পড়ুন: চোখে এলার্জি হয় কেন? সমস্যা ও সমাধান
আরো পড়ুন: গর্ভবতী মায়েরদের এই ৫টি বিপদ থেকে সাবধান
আরো পড়ুন: ব্রণের সমস্যা দূর করবে ড্রাগন ফল
১১. ভুজঙ্গাসন
এই আসনটির ভঙ্গীমা কোবরার অনুরূপ হয়।। এ কি তলপেটের প্রসারণ করে এবং শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়। এই আসন্টি পিঠ এবং কাধকে শক্ত করে এবং করে এবং শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রার উন্নতি ঘটায়।
কিভাবে এটি করবেন
- আপনার পেট মাটির সঙ্গে যুক্ত করে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- পা গুলোকে পরস্পরের কাছাকাছি রাখুন এবং হাত ২ টিকে পাশে রাখুন।
- একটি দীর্ঘশ্বাস নিন এবং আপনার শরীরের উপরের ভাগ টিকে চাপ দিন, মাটি থেকে ক্রমশ উপরের দিকে ঠেলুন এবং পিছনের দিকে প্রসারিত করার চেষ্টা করুন।
- নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন এবং ধীরে ধীরে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।
১২. বিপরীত করনী
বিপরীত করনী সম্বন্ধে মনে করা হয় এটি বার্ধক্য রোধ করার ক্ষমতা আছে।, এটির ফলে শ্রোণি অঞ্চলে রক্ত সংবহনের মাত্রা বেড়ে যায়।এই আসন সংগমের পরে করলে গর্ভধারণের সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়।
কিভাবে এটি করবেন
- মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন
- ধীরে ধীরে আপনার পা দুটোকে ওপরের দিকে 90০ কোন করে তুলুন।যতক্ষন পারেন ঐ ভঙ্গিমায় নিজেকে ধরে রাখুন।
- ৬-৮ বার এই আসন টি করুণ।
১৩. নাড়ি শোধন প্রাণায়ম
সাধারণ ভাবে অনুলোম বিলোম নামে পরিচিত। এই যোগব্যায়ামটি আপনার দেহকে মুক্ত করে ঋনাত্বক ভাবনা মানসিক চাপ এবং অবসাদ থেকে।
কিভাবে এটি করবেন
- মেরুদন্ড সোজা রেখে আরাম করে বসুন।
- ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ডান নাসারন্ধ্র বন্ধ করুন এবং বাম নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করুন।
- এবার আপনার বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে বাম নাসারন্ধ্র বন্ধ করুন, ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করুন।
- বারবার ৫ মিনিট ধরে এটি করতে থাকুন।
১৪. উপবিষ্ট কোনাসন
উপবিষ্ট কোনাসন একটি স্ট্রেচিং যোগ,যেটি আপনার গর্ভধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। এটা পেটকে শক্তিশালী করে, জঙ্ঘার স্ট্রেচিং ঘটায়, মেরুদন্ডকে শক্তিশালী করে ও মন এবং শরীরকে শান্ত রাখে।
কিভাবে এটি করবেন
- আরাম করে বসে পা ২ কে ২ ধারে 90 ডিগ্রী কোন করে মেলে দিন।
- শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন।
- এই ভঙ্গিমাটি ১ মিনিট ধরে রাখুন।
- শ্বাস ছাড়ুন এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসুন
- ৫ বার এটি করুন।
১৫. শলম্বা শীর্ষাসন
শলম্বা শীর্ষাসন হল মাথার উপর শরীরের সমস্ত ভর দিয়ে দেহকে স্থির অবস্থায় রাখা। এটা আপনার গর্ভধারন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কিভাবে এটি করবেন
- ১ টা নরম শতরঞ্চি বা কুসন নিন যাতে মাথাটি রাখবেন।
- ২ হাতের মাঝে মাটিতে আপনার মাথা রাখুন
- আপনার দেহের ওজন ২ হাত এবং মাথার ওপ দিন, আস্তে আস্তে পা ২ টি কে মাথার সজাসুজি ওপরের দিকে তুলুন এবং ভারসাম্য বজায় রাখুন।
- চেষ্টা করুনে এই ভাবে যতটা সময় পারা যায় ততক্ষন ধরে রাখতে এবং স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিন
১৬. শবাসন
এই যোগাসনটি খুব প্রচলিত এর সহজতার জন্য। এই আসন এর নামটি হয়েছে শব দেহ থেকে। এতি কর্পাস পয়শ্চার নামেও পরিচিত। এটা সমস্ত যোগাসনের শেষে করা হয় বিশ্রাম নেবার জন্য।
কিভাবে এটি করবেন
- মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন হাত ২ দেহের ২ পাশে রাখুন।
- স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস্প্রশ্বাস নিন এবং কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিন।
যোগ আপনার বন্ধ্যত্ব রোধ করার ব্যাপারে আধ্যাত্মিক ভাবে সাহায্য করে। অবশ্যই দম্পতিদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যোগ অভ্যাস করা উচিত। যখন ইস্যু এসে যাবে, এবং চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে তখন আপনি মনের আনন্দে আপনার পরিবারের নতুন অতিথি কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।