পর্তুগালে গেলেই কি নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে?

জেনে নিন পর্তুগালে গেলেই কি নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে? কিনা। আসুন এ সম্পর্কে আলোচনা করে আজকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। পর্তুগাল অভিবাসী বান্ধব দেশ। এই বিষয়টি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং সেই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় যে জিনিসটা রয়েছে পর্তুগালে গেলে সহজেই রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়া যায় এবং ইউরোপে বসবাস করার সুযোগ হয়। শুধুমাত্র থাকার সুযোগ দেয়াটাই অভিবাসন বান্ধব বলা যায় না। এর জন্য আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।



পর্তুগালে গেলেই কি নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে?

যখন আপনি যে দেশে বসবাস করবেন একজন অভিবাসী হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রাধিকার স্বাধীনতা পাবেন, স্বাস্থ্যসেবায় আপনার অধিকার, শিক্ষার ক্ষেত্রে, নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের নীতিমালা তথা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠা পাওয়া গেলে তবেই এই দেশটিকে অভিবাসন বান্ধব বলা চলে।

মাইগ্রেন্ট ইন্টিগ্রেশন পলিসি ইনডেস্ক ২০২০ (এমআইপিইএক্স) তাদের ২০২০ সালের রিপোর্টে পর্তুগালকে বিশ্বের তৃতীয় অভিবাসনবান্ধব দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। মানুষের জীবন যাপনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ৮টি বাস্তব সম্মত এবং যৌক্তিক প্যারামিটার দ্বারা বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছে। এমআইপিইএক্স ৫ টি মহাদেশের সবগুলো দেশের পর্যালোচনার মাধ্যমে ৫২ টি দেশকে সার্থকতার ভিত্তিতে যুক্ত করেছে।

শ্রম বাজারের গতিশীলতা, এখানে উক্ত ৫২ টি দেশের ক্ষেত্রে পর্তুগালের অবস্থান এক নম্বরের কারণ খুব সহজেই আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন এবং চাইলে নিজে ব্যবসায় করতে পারবেন, সরকারি দপ্তরের কাজ করতে পারবেন, পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য আপনি বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়া পেশাগত স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে যা অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে খুবই কঠিন।

পারিবারিক পুনর্মিলন বা পরিবার একত্রীকরণের ক্ষেত্রে পর্তুগাল অভিবাসীদেরকে খুবই সহজ নীতিমালা প্রবর্তন করেছে। অভিবাসীদের পরিবারের সহজেই পর্তুগালে আগমন এবং তাদের থাকার অধিকার স্থানীয় পরিবারের মতই সকল সুযোগ-সুবিধা যা অভিবাসীদের জীবনযাপনে জন্য একটি উচ্চমাত্রার যোগ করেছে এই সূচকে পর্তুগালের অবস্থান তৃতীয়।

শিক্ষা ক্ষেত্রে অভিবাসীদের সমান অধিকারে বাধ্যতামূলক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভিবাসীদের শিক্ষার জন্য আলাদা ধরনের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং স্কুল শিক্ষার কারিকুলামেও বিভিন্ন বৈচিত্র্য রয়েছে। তাছাড়া অভিবাসীদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্তুগাল অভিবাসীদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ গ্রহণ এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করা। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে কথা বলার অধিকার ইত্যাদি যা অন্যান্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে পর্তুগিজ ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলেই এই সুযোগ গ্রহণ করা যায়। অতঃপর নির্দিষ্ট সময় পরপর তা নবায়ন করা সম্ভব যদিও এই স্থায়ী রেসিডেন্ট কার্ডের মেয়াদ অনেক লম্বা সময় দেয়া হয়। তাছাড়া পর্তুগাল ছেড়ে অন্য দেশে দীর্ঘ সময় থাকলেও এই স্থায়ী নাগরিকত্ব বহাল থাকে এবং সামাজিক সুরক্ষার সহযোগিতা ও গ্রহণযোগ্য হয়।

জাতীয়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে পর্তুগাল খুবই সহজে গ্রহণযোগ্য একটি নীতিমালা প্রবর্তন করেছে, যে কেউ পাঁচ বছর নিয়মিতভাবে বসবাস করলে পর্তুগিজ জাতীয়তার জন্য আবেদন করতে পারে। খুব কম সময়ে এবং স্বল্পসংখ্যক প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি সরবরাহ করে বিদেশিরা পর্তুগিজ নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন।

স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে নতুন আগত অভিবাসীদের জন্য একটি জটিলতার অভিপ্রায় সৃষ্টি হলেও নিয়মিত হওয়ার পর পর্তুগিজ নাগরিকদের মত অভিবাসীদেরও স্বাস্থ্যসেবায় সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে বলতে গেলে এটা বিনামূল্যে। তবে শিশু স্বাস্থ্য এবং গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পর্তুগাল ভিন্ন মাত্রা যোগ করে যা অন্যান্য দেশের সাথে তুলনায় পর্তুগালকে অনেক বেশি এগিয়ে রাখবে।

বৈষম্য বিরোধী এদিক থেকে বিবেচনা করলে বাস্তব অভিজ্ঞতায় বলা যায় পর্তুগিজ নাগরিকরা বিশ্বের এক নম্বর জাতি, যারা ভিন্ন দেশ ভিন্ন ঐতিহ্যের মানুষকে সাদরে গ্রহণ করেন এমআইপিইএক্স-এর এই সূচকে পর্তুগালের অবস্থান এক নম্বর। এর সাথে সরকারের বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য বিরোধী আইন আরেক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পর্তুগালকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।



বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এমআইপিইএক্স-এর পর্যালোচনা খুবই বাস্তব ভিত্তিক এবং খুবই দক্ষতা সাথে বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। পর্তুগিজ সরকার প্রতি বছর এ নীতিমালা এবং প্যারামিটারগুলো আরও বেশি অভিবাসী বান্ধব করেছেন। ফলে প্রতি নিয়তই পর্তুগাল অভিবাসীদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছেন। পর্তুগালের উপরের দিকে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড দুটি দেশে রয়েছে এবং পর্তুগালের পরের অবস্থানে রয়েছে কানাডা।

নিঃসন্দেহে এই সকল-সুযোগ সুবিধার কারণে পর্তুগাল অভিবাসীদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই বিভিন্ন মহাদেশ তথা বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ ইউরোপ যাত্রায় ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ উপায়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু অবৈধ উপায়ে আসার পর পুরো সুযোগ-সুবিধা গুলো খুব সহজেই সহজলভ্য হয়।

এছাড়া অনেক অভিবাসী পর্তুগালে পৌঁছানোর পূর্বেই জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হন এবং তাদের জীবনাবসান ঘটে। তাই এ সকল সুযোগ-সুবিধা দেখে বিপদজনক পথে পা না বাড়িয়ে সঠিক উপায়ে অভিবাসনের পরিকল্পনা করলে পর্তুগাল সরকারের সহজ অভিবাসন নীতিতে শামিল হয়ে উন্নত জীবনযাপন করা সম্ভব হবে।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

ইউরোপে প্রবেশ করতে যেসব ভুল করা চলবে না

ইউরোপে প্রবেশ করতে যেসব ভুল করা চলবে না

জেনে নিন ইউরোপে প্রবেশ করতে যেসব ভুল করা চলবে না । আসুন এ বিষয়ে আজকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *