জেনে নিন পুরোনো গাড়ি কেনার আগে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন । আসুন এ বিষয়ে আজকে আপনারা আমার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিন। যাতায়াতের সুবিধা ও সময় বাঁচাতে নিজের একটি গাড়ি খুবই জরুরি। তবে গাড়ি প্রয়োজনের চেয়ে শখ পূরণের জন্যই কেনেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে শুরুতেই ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি কিনতে না পারলে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনে ফেলতে পারেন। শখ ও প্রয়োজন দুটোই মিটবে সাধ্যের মধ্যে। যদি পুরোনো গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে কিছু বিষয় আগেই জেনে নিন।
- আরো পড়ুন: ১ লাখ টাকা খরচে ব্যাগ তৈরির কারখানায় মাসে ৪০ হাজার আয়
- আরো পড়ুন: ছোট পুঁজিতে বড় ব্যবসা বিক্রি করুন এয়ার টিকেট
- আরো পড়ুন: লোগো ডিজাইন করে মাসে আয় করুন ৫০০০০ টাকা
নতুন গাড়ি আর পুরোনো গাড়ি কেনার ব্যাপার কিন্তু আলাদা। নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অতসব ভাবনা খুব একটা জরুরি নয়। কারণ আপনি এরইমধ্যে জানেন কী কিনে, কী পাচ্ছেন। তবে পুরোনো বা ব্যবহৃত গাড়ি কিনে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি না আপনি সচেতন হন। তাই পুরোনো গাড়ি কেনার সময় কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন, তা আগেই জেনে নিন।
পুরোনো গাড়ি কেনার আগে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন
গাড়ির কন্ডিশন
পুরোনো গাড়ি কেনার সময় সবার আগে এর কন্ডিশন দেখে নিন। বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি দেখা করুন। সময় নিয়ে নিরীক্ষণ করুন। গাড়ির বডিতে দুর্ঘটনার কোনো আঘাত কিংবা সারাইয়ের চিহ্ন আছে কি না দেখে নিন। আঘাতের ফলে কোনো গর্ত আছে কি না, আঁচড় পরেছে কি না, মরিচা আছে কি না, এগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সাধারণভাবে ভাঙা কাচ, কোনো পার্টস না থাকা খালি চোখেই দেখতে পারবেন। গাড়ির যে সমস্যাই থাকুক না কেন, প্রথমে তদন্ত করে দেখুন সহজে সমাধানযোগ্য কি না, তা না হলে গাড়িটি না কেনাই ভালো।
গাড়ির ভেতরের অবস্থা
বাইরের পর্যবেক্ষণ শেষ হলে ভেতরেও নজর দিন। গাড়ির সিট, মেঝে-ছাদের দাগ, নোংরা কিংবা বাজে গন্ধ আছে কি না ভালোকরে পরীক্ষা করুন। যদি মনে হয়, বিক্রেতা আপনার আসার ঠিক আগেই গাড়িটির কোনো কিছু সাময়িকভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আর তা যদি আপনার চোখে পড়েই যায়, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন বিক্রেতা আরও অনেক সমস্যা লুকিয়ে যাচ্ছেন হয়তো। অদক্ষ হাতের সারাই, নতুন রং করা দেখে সহজেই বুঝে ফেলা উচিত বড় সমস্যা ভেতরে লুকোনো। এসব ক্ষেত্রে গাড়িটি না কিনে পাশ কাটানোই ভালো।
গাড়ির মাইলেজ
পুরোনো গাড়ি কেনার আগে এর মাইলেজ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। যার থেকেই গাড়িটি কিনুন না কেন, তার সঙ্গে ভালোভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন। সাধারণত বেশি মাইলেজের গাড়ি না কেনার চেষ্টা করুন। কারণ একটি বেশি মাইলেজ চলা গাড়ি কম মাইলেজে চলা গাড়ি থেকে ভালো হয় না। যেসব গাড়ি ১২০,০০০-এর উপরে চলেছে; সেসব গাড়ি না কেনাই ভালো। চেষ্টা করুন ৫০,০০০-এর কম চলেছে এমন গাড়ি কেনার। এর থেকে বাড়লেও সর্বোচ্চ ৩০,০০০ মাইল উপরে যাবেন, তার বেশি কখনোই নয়। তাহলে আপনার গাড়িটি বেশিদিন ভালো পারফরম্যান্স দেবে। তবে আরেকটি ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত, অডোমিটার ম্যানুয়ালি কাস্টোমাইজ করে নেওয়া যায়। তাই বিক্রেতা যদি সংখ্যাটি আগেই পরিবর্তন করে থাকেন, তাহলে এ থেকে গাড়ির সত্যিকারের অবস্থা জানা সম্ভব নয়।
কার কাছ থেকে কিনছেন
গাড়িটি কোথা থেকে কিনছেন, সেই উৎসও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আপনার কোনো বন্ধুর, কোনো অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখেও আগ্রহী হতে পারেন কিংবা বিক্রেতা হতে পারে পুরোনো গাড়ি বেচাকেনা করার কোনো তৃতীয় পক্ষের ব্যবসায়ী। সাধারণত যত্নের সাথে ব্যবহৃত একটি গাড়ি অনেক বেশি মাইল চললেও তা অযত্নে থাকা কম ব্যবহৃত গাড়ির থেকে ভালো সেবা দিয়ে থাকে। তাই গাড়ি কোন হাতে কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা জানাও জরুরি।
বিক্রেতার বয়স
আপনি যদি কারো ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে বিক্রেতার গতিপ্রকৃতির দিকে দৃষ্টি দিতে পারেন। গাড়িটি যদি কমবয়সী কারো হয়ে থাকে, যেমন কিশোর-কিশোরী অথবা মধ্যপঁচিশ, সেক্ষেত্রে খুব সম্ভাবনা থাকে যে তারা গাড়িটি বেপরোয়া চালনায় অভ্যস্ত। তরুণ বয়সীরা গতির দিকে বেশি আগ্রহী থাকে। গাড়ি চালানোর সময় সঙ্গী যাত্রীর সাথে মজা করে, ফোনে কথা বলা কিংবা চ্যাট করে থাকেন অনেকে। খেতে খেতেও এক হাতে অনেকে গাড়ি চালাতে ভালোবাসেন। তাই ফলাফল হিসেবে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদিও আপনার চোখে আপাতভাবে ধরা নাও পড়তে পারে। এসব দিক থেকে ভাবলে ত্রিশোর্ধ্ব কারো গাড়ি কেনা তুলনামূলক নিরাপদ।
গাড়ির ওয়ারেন্টি
মালিকের কাছ থেকে জানুন গাড়িটির কোনো ওয়ারেন্টি রয়েছে কি না, যদি থাকে সেক্ষেত্রে আপনার জন্য ভালো হবে। নয়তো এমন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়িটি কিনুন, যাতে আপনি সব না হোক কিছু জিনিসের ওয়ারেন্টি পান। এতে গাড়িটি কিনতে আপনার সুবিধা হবে এবং একটু আশ্বস্ত থাকতে পারবেন গাড়িটি নিয়ে।
ফ্লুয়িড নির্গত হয় কি না
এবার আপনি দেখুন গাড়িটি থেকে কোনো ধরনের ফ্লুয়িড নির্গত হয় কি না। যদি ফ্লুয়িড নির্গত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে গাড়িটি কেনা আপনার জন্য ঠিক হবে না। কারণ গাড়ি থেকে ফ্লুয়িড নির্গত হওয়া খুবই খারাপ লক্ষণ। কন্টেনার থেকে যে কোনো তরলই নির্গত হোক না কেন, আপনি চোখ বন্ধ করে গাড়িটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। তেল, গ্যাস যা-ই হোক গাড়ির জ্বালানি, তা মাটিতে পড়তে থাকলে তা যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
ডুপ্লিকেট চাবি
যখন গাড়ি কিনবেন; তখন দুই সেট চাবি পাবেন। যদিও ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সেট চাবি না-ও পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় গাড়ির দাম একটু বেশি আলোচনা করুন।
দীর্ঘমেয়াদী খরচ
পুরাতন গাড়ি কেনার সবচেয়ে বড় কারণই কিছুটা কমে পাওয়া এবং কিছু খরচ বাঁচানো। তবে এই বাঁচানো টাকা খুব বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে না, যদি গাড়িটি দু’দিন পরপরই মেকানিকের কাছে পাঠাতে হয় একটা-দু’টা করে পার্টস বদলানোর জন্য। তাই গাড়ির যন্ত্রাংশগুলো কোনটি কী অবস্থায় আছে, খারাপ অবস্থায় যেসব আছে, তা বদলে নিতে কী পরিমাণ খরচ হতে পারে কতদিন পরে, সেসব বিষয় নিয়ে একটু হিসাব-নিকাশ করেই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিন। তাতে হয়তো ভবিষ্যতের অনেক বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।
- আরো পড়ুন: গোলমরিচের বিষেশ গুণ
- আরো পড়ুন: গর্ভবতী মায়েদের বাড়তি পুষ্টি সহ ১৬টি রোগের ঔষধ জিরা পানি
- আরো পড়ুন: তারুণ্যের চাই সুষম খাদ্যাভ্যাস
দামাদামি
সবকিছু দেখার পর গাড়িটি পছন্দ হলে এবার দামাদামি করুন। যে কোনো কিছু কেনার ব্যাপারে দাম অত্যন্ত বিবেচ্য বিষয়। বিশেষ করে গাড়ির মতো বড় খরচের ব্যাপারে তো বটেই। তাই যদি গাড়িটি পছন্দ হয়ে থাকে এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে গাড়িটি কিনবেন। এক্ষেত্রে দেখুন গাড়ির মালিক কত দাম চান। পরে আপনি গাড়ির মার্কেট প্রাইস, গাড়িটি কতদিন চালানো হয়েছে এবং গাড়ির কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে একটি দাম ফিক্সড করে গাড়িটি কিনে ফেলুন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।