প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা ঘরে বসেই-কোনো নারী অন্তঃসত্ত্বা হলেন কি না, তা ঝটপট ও প্রায় নির্ভুলভাবে জানতে ব্যবহার করা হয় প্রেগন্যান্সি কিট। এই যন্ত্রের ব্যবহারও সহজ। নিজেই ঘরে বসে পরীক্ষা করুন প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা।
গর্ভধারণ করলে শরীরে বিটা এইচসিজি নামে একটি হরমোন তৈরি হয়, যার উপস্থিতি প্রস্রাবেও নির্ণয় করা যায়।
চাইলে নিজেই প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন।
এটিই এই পরীক্ষার মূল পদ্ধতি। কিন্তু অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন সঠিক উপায়ে যন্ত্রটি ব্যবহার করা নিয়ে। ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও অনেকের মনে সংশয় দেখা দেয়।
যেসব দম্পতিরা মনের দিক থেকে একেভাবে প্রস্তুত একটা সন্তান পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য, তাদের কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা দিনই চাপা উদ্বেগের।
যে যতই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করুক না যে, “কনসিভ করার ক্ষেত্রে টেনশন বা উদ্বেগ ব্যাপারটা একটুও ভালো নয়”।
মানুষের মন অত বোঝদার হলেই হয়েছিল আর কী! মুখে বলে “এই তো দিব্যি ফুর্তিতে আছি” আর মনে বলে “কালকে দুটো দাগ আসবে তো?”
যারা মা হওয়ার বয়সটাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তারা বেশ বুঝতে পারছেন আমি কোন “দুটো দাগ” নিয়ে কথা বলছি। প্রেগন্যান্সি কিট পরীক্ষা দেশ ও দেশের সকল নারীরাই সাধারন্ত এই পদ্ধর্তিতে পরীক্ষা করে থাকেন। বিশ্বের সব দেশে কিট এর মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন।
হ্যাঁ, প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে বাড়িতে টেস্টের বিষয়টা অনেকেই জানেন, তবে ভাসা-ভাসা। আবার, এতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা করাও যায় না সবার সাথে। ফলস্বরূপ, মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসে বিভ্রান্তি আর অশান্তি। (Pregnancy tests: how do I take it, and when in Bangla, ghore bose pregnancy test, barite pregnancy test korben jebhabe, pregnancy test kibhabe hoy.Pregnancy tests: How does it work, how do I take it, and when in Bengali.)
শরীরে কোনও পরিবর্তন বুঝলে একবার কেন, হাজারবার আপনি টেস্ট করুন বা করান, তবে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে। অন্যথায় সঠিক রেজাল্ট তো আসবেই না, ভুলভাল ভাবনায় জর্জরিত হবেন আপনি। সঠিক সময় এবং নিয়ম মেনে যদি প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করেন, তার সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু ৯৯ শতাংশ।
বাকি ১ শতাংশে “হ্যাঁ” বা “না” নির্ণয় করবেন একমাত্র চিকিৎসক, প্রাথমিক ভাবে পজিটিভ রেজাল্ট এলে তারপরে ক্লিনিক্যাল টেস্টে “পজিটিভ” বা “নেগেটিভ” সীলমোহর বসাতে পারেন আপনার চিকিৎসকই। প্রাথমিক ভাবে বাড়িতে টেস্ট কিট ব্যবহার করলে কখন, কীভাবে এই টেস্ট করবেন বা কী উপায় মেনে চললে রেজাল্ট ঠিক আসার সম্ভাবনা বাড়বে, জেনে নিন বিস্তারিত!
কখন করবেন
যাঁদের মাসিক নিয়মিত, তাঁরা মাসিক হওয়ার তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর এই পরীক্ষা করবেন। মাসিক অনিয়মিত হলে গর্ভাবস্থার লক্ষণ বুঝতে পারলে পরীক্ষা করুন।
যেভাবে করবেন
সকালবেলার প্রথম প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করলে ভালো। দিনের যেকোনো সময় করলেও চলবে, সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে হবে। প্রতিটি স্ট্রিপে নির্দেশনা লেখা থাকে। সেই নির্দেশনা মেনে প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।
রিপোর্ট কীভাবে বুঝবেন?
স্ট্রিপে একটি রঙিন রেখা বা লাইন এলে বুঝবেন প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ, অন্তঃসত্ত্বা নন। স্ট্রিপে পাশাপাশি দুটি রঙিন রেখা বা লাইন দেখা গেলে পজিটিভ, এমনকি হালকা রেখা হলেও পজিটিভ ধরা যাবে। মানে তিনি অন্তঃসত্ত্বা। যদি কোনো রঙিন রেখা না দেখা যায়, তবে পরীক্ষা বাতিল বলে ধরে নিতে হবে এবং আবার আরেকটি স্ট্রিপ দিয়ে করতে হবে। আধা ঘণ্টা পর নেগেটিভ ফলাফল পজিটিভ হলেও রিপোর্টটি অগ্রহণযোগ্য।
নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না?
বাড়িতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ পেয়েছেন কিন্তু এরপরও মাসিক হচ্ছে না, তাহলে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে আবার পরীক্ষা করবেন। এবারও নেগেটিভ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। প্রেগন্যান্সি ছাড়া অন্যান্য কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে।
পরীক্ষার সঠিক তথ্য
প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এই কিট নির্ভুল তথ্য দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি ফলস পজিটিভ হতে পারে। মানে অন্তঃসত্ত্বা নয়, তবু পজিটিভ হতে পারে।
যেমন এইচসিজি হরমোনযুক্ত কোনো ওষুধ সেবন করলে, কোনো কোনো রোগে এইচসিজি হরমোন অতিমাত্রায় নিঃসৃত হয় (মোলার প্রেগন্যান্সি, কোরিওকারসিনোমা, আইলেট সেল টিউমার ইত্যাদি)।
গর্ভপাতের পরপর বা সন্তান জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট করলে পজিটিভ হতে পারে। কারণ তখনো হরমোন থেকে যায়। কিটের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পার হয়ে গেলে বা কিট ব্যবহার অযোগ্য হলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে।
রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ হয় কেন?
আবার উল্টোটাও হতে পারে। রিপোর্ট নেগেটিভ দেখাচ্ছে কিন্তু আসলে আপনি অন্তঃসত্ত্বা। কেন এমন হয়? যদি নির্ধারিত সময়ের আগেই টেস্ট করে ফেলেন (মাসিকের তারিখের এক সপ্তাহ পার না হতেই)। যাঁরা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না বা টেস্টের আগে প্রচুর পানি পান করলে প্রস্রাবে হরমোনের মাত্রা কম থাকায় নেগেটিভ আসতে পারে।
এটাই কি শেষ কথা?
কিট দিয়ে রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি কিছুদিন পর রক্তের কিছু সাধারণ পরীক্ষা আর আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পরামর্শ দেবেন। সন্দেহ হলে ল্যাবরেটরিতে গিয়ে আবার প্রস্রাব পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
আরো পড়ুন:নারীর পাঁচটি স্বাস্থ্য সমস্যা
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।