আসুন জেনে নেওয়া যাক মক্কা বিজয় ও নবীজির ‘সাধারণ ক্ষমা’, বিজয়ী শাসকদের জন্য শিক্ষা । তাহলে চলুন বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।
মক্কা বিজয় ও নবীজির ‘সাধারণ ক্ষমা’, বিজয়ী শাসকদের জন্য শিক্ষা
যেভাবে মক্কা বিজয়ের সূচনা
হিজরি ৬ষ্ঠ সন, আরব জাহানের পরিস্থিতি মুসলমানদের প্রায় অনুকূলে কিন্তু তখনও ইসলামের সর্বাধিক সম্মানিত ইবাদতস্থল পবিত্র কাবাগৃহ মক্কার কুরাইশদের দখলে, সেখানে মদিনার মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
- আরো পড়ুন: মাহরাম ও গায়রে মাহরাম কারা?
- আরো পড়ুন: বিশ্বনবি ঘর থেকে বের হয়ে যেসব বিষয়ে আশ্রয় চাইতেন
- আরো পড়ুন: কেমন হবে কেয়ামতের মাঠ?
এদিকে রাসুলকে (সা.) স্বপ্ন দেখানো হলো- তিনি সাহাবাদের নিয়ে কাবা শরিফ তাওয়াফ করছেন। নবীদের স্বপ্ন নিছক কোনো স্বপ্ন নয়; বরং আল্লাহর ইশারা। তাই রাসুল (সা.) স্বপ্ন বাস্তবায়নে ৬ষ্ঠ হিজরির ১লা জিলকদ মক্কাভিমুখে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। (আর রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা: ৩৪৫)
১৪’শ মতান্তরে ১৫’শ সাহাবিকে নিয়ে মহানবী (সা.) মক্কার উপকণ্ঠ হুদাইবিয়া নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলেন। কিন্তু নানা আশঙ্কায় মক্কার মুশরিকরা পুরনো শত্রুদের হুদাইবিয়া থেকে আর সামনে অগ্রসর হতে দিলো না। পরে নানা নাটকীয়তা শেষে আল্লাহর রাসুল সেখান থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক ‘হুদাইবিয়া সন্ধি’র।
বাহ্য দৃষ্টিতে সন্ধির শর্তগুলো মুশরিকদের অনুকূলে ছিল কিন্তু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এটিকে মুসলমানদের জন্য ‘ফাতহুম মুবিন’ বা স্পষ্ট বিজয় আখ্যায়িত করেছেন।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, মূলত হুদাবিয়ার চুক্তিই মক্কা বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। সন্ধির শর্তাবলী গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, এটি বাস্তবিক পক্ষেই মুসলমানদের বিরাট বিজয়-ই ছিলো। কেননা, এতোদিন কুরাইশরা মুসলমানদের অস্তিত্বই স্বীকার করত না। (আর রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা: ৩৫৩)
সন্ধি যখন কাল হলো
হুদাইবিয়ার সন্ধির অল্প কিছুদিন পরেই ইসলাম ব্যাপকহারে প্রসারিত হতে শুরু করে, সন্ধি করা হয় যেন মুসলমানরা কোনঠাসা হয়ে পড়ে- এ উদ্দেশ্যে, কিন্তু উল্টো সন্ধির ফলাফল কুরাইশদের শঙ্কিত করে তোলে। এ পরিস্থিতিতে সন্ধি লংঘনে নানা ষড়যন্ত্র আঁটে তারা।
অবশেষে মুসলমানদের সাথে বনু খুযাআর মৈত্রিতা স্থাপন এবং এর ভিত্তিতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাদের অনেক লোককে হত্যার মাধ্যমে সন্ধি ভঙ্গ করে কুরাইশরা। অথচ ২ পক্ষের সাথেই অন্য যেকেউ মৈত্রী গড়তে করতে পারবে-শর্তে এও উল্লেখ ছিল।
মক্কা বিজয় এবং নবীজির ‘সাধারণ ক্ষমা’
এ ঘটনার পরে রাসুল (সা.) বনু খুযাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করাতে কুরাইশদের কাছে দূত মারফত খবর পাঠান কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে এবং সন্ধি বাতিলের ঘোষণা দেয় আর বলে, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ম হিজরির দশম রমজানে রাসুল (সা.) মক্কাভিমুখী রওনা হন, সাথে ১০ হাজার মুজাহিদ সাহাবি। এখানেও নানা নাটকীয়তা শেষে কুরাইশদের ঘাড়ের ওপর এসে নিশ্বাস নিতে থাকেন, উদ্দেশ্য-মক্কা বিজয়।
তিনি যথাসম্ভব রক্তপাত এড়িয়ে মক্কায় প্রবেশের কৌশল করছিলেন। ঘোষণা করলেন, কুরাইশদের যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নিবে, নিজ নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করে রাখবে তারা নিরাপদ।
- আরো পুড়ন: সামাজিকমাধ্যমে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার শাস্তি কি
- আরো পড়ুন: মিথ্যা মামলা হলে যা করণীয়
- আরো পড়ুন: ইভটিজিংয়ের শিকার হলে যা করবেন
এভাবে বলা যায় যে, মহানবী (সা.) বিনা রক্তপাতেই বিজয়ীরূপে মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, যুগযুগান্তরে সবার মুখে আজও যা আলোচিত হয়ে আসছে, যেই কুরাইশরা মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে সামর্থের শেষ সময় পর্যন্ত অপচেষ্টা চালিয়েছিল তাদেরকে তিনি ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেন, তাও কখন-যখন তিনি মক্কার অধিপতি, ইচ্ছে হলে নিয়মানুযায়ী সবাইকে মৃত্যুদন্ডও দিতে পারতেন।
আসলে আল্লাহর রাসুলরা উত্তম চরিত্র নিয়েই দুনিয়ায় আগমন করেন, যেন উম্মত তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
এর আগে একই কাজ করেছিলেন হজরত ইউসুফ (আ.)। তার ওপর ভাইদের অবিচার সত্ত্বেও তিনি যখন মিসরের সর্বোচ্চ আসনে আসীন তখন তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেন। ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালুর চাইতে অধিক দয়ালু’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৯২)।
তথ্যসূত্র: আর রহিকুল মাখতুম, সীরাতে মুস্তফা
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।