জেনে নিন শান্তি ও মুক্তির সহজ আমল সম্পর্কে। আসুন এ বিষয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। হাদিসের পরিভাষায় আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক না করা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা এবং রোজা পালন করা হলো আমলে সালেহ বা নেক কাজ। এ সব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে হেফাজত করে। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় এটি প্রমাণিত।
- আরো পড়ুন: শিশুদের প্রতি নবিজীর ভালোবাসা
- আরো পড়ুন: সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করবেন কেন?
- আরো পড়ুন: বড়দের সম্মান করবেন কেন?
শান্তি ও মুক্তির সহজ আমল
আল্লাহ তাআলা সময়ের কসম দিয়ে সুরা আসর-এ এমন নেক আমলের কথাই বলেছেন। নেক আমলের গুরুত্ব বোঝাতেই আল্লাহ তাআলা এভাবে সময়ের কসম করে বলেন, ‘আর সময়ের কসম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ব্যতিত যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে। একে অপরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং সবর বা ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা আসর)
ঈমান, নেক আমল তথা নামাজ, রোজা, জাকাত, হজসহ অন্যা ইবাদত বন্দেগিকেই আমরা আমলে সালেহ বা নেক কাজ মনে করি। কিন্তু এমন অনেক (আমলে সালেহ) নেক কাজ রয়েছে যেগুলো পালন করা বা মেনে চলা একেবারেই সহজ কিন্তু মানুষ তা পালন করে না। আবার অনেকে সেগুলোকে আমলে সালেহ বা নেক আমল মনেই করে না। অথচ সহজে শান্তি ও মুক্তিতে এসব নেক আমলের ভূমিকা অনেক বেশি। সেগুলো কী?
তাহলে আমলে সালেহ বা নেক আমল কী?
‘আমলে সালেহ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভালো আচরণ, উত্তম কাজ, গ্রহণযোগ্য কাজ। কোরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় আমলে সালেহ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণত যার অনুবাদ দাঁড়ায়- নেক আমল মানে ‘ভালো কাজ বা সৎ কাজ’।
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইবাদত-বন্দেগি ছাড়াও সমাজে কোনও অশান্তিমূলক কাজ বন্ধ করে শান্তি স্থাপন করা, নিজ পরিবার কিংবা অন্যের কল্যাণে যেকোনো কাজ করাই হলো আমলে সালেহ। তা হতে পারে রাস্তা থেকে সামান্য পাথর টুকরা কিংবা কাঁটা অপসরণের মতো ক্ষুদ্র কাজও। আল্লাহ তাআলা কোরআনে পাকে আমলে সালেহ-এর কথাগুলো এভাবে তুলে ধরেছেন-
> ‘ঈমান গ্রহণ করার পর যেকোনো নারী-পুরুষ আমলে সালেহ করবে, আমি তাকে দান করবো উত্তম পবিত্র জীবন এবং তাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর ভিত্তিতে পুরস্কার দেবো।’ (সুরা আন-নাহল : আয়াত ৯৭)
> তবে যে কেউ ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তার জন্যে থাকবে সর্বোত্তম পুরস্কার এবং তার প্রতি আমার বিষয়গুলো বলবো সহজভাবে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৮)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে আমলে সালেহ তথা নেক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে পুরস্কারের কথা বলেছেন। কিন্তু কোরআনুল কারিমের শেষ দিকে সময়ের কসম খেয়ে আল্লাহ তাআলা তাআলা বলেছেন- ‘নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ব্যতিত যারা ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে।’
সুতরাং মানুষের উচিত, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নেক আমলে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। পাশাপাশি সহজে নেক আমল করার উপায়গুলো জেনে নেয়া। তা হলো-
১. ইলম বা জ্ঞানার্জন করা। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণকর কাজ করা।
২. সবর বা ধৈর্যধারণ করা। সবর বা ধৈর্যধারণ গোনাহ মাফ এবং সাওয়াব লাভের অন্যতম উপায়।
৩. নিয়তের বিশুদ্ধতা। যেকোনো কল্যাণকর কাজের নিয়ত করা। করতে পারলে যেমন সাওয়াব আছে। না করতে পারলেও নিয়ত করার সাথে সাথে তা সাওয়াবে পরিণত হয়।
৪. আন্তরিকতা। যেকোনো কল্যাণকর কাজে আন্তরিকতাসহ যোগদান করা। করতে না পারলে তা সম্পাদনে, সহযোগিতায় বা পরমার্শে আন্তরিক হওয়া।
- আরো পড়ুন: এক আমলেই রিজিক বৃদ্ধি
- আরো পড়ুন: যে ৩টি কাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়
- আরো পড়ুন: মাহরাম ও গায়রে মাহরাম কারা?
জ্ঞানার্জন, সবর, নিয়ত ও আন্তরিকাসহ এ জাতীয় কাজগুলোতে কোনও শ্রম ব্যয় করতে হয় না। পেরেশানি হতে হয় না। তাই ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি উল্লেখিত সহজ কাজগুলোর মাধ্যমে আমলে সালেহ-এর সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। অন্যের উপকার করা। এ উপকার হতে পারে পশু-পাখির ক্ষেত্রেও। আর এতে মিলবে সহজে শান্তি ও মুক্তি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমলে সালেহ তথা নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের সব ভালো কাজের সাথে নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালে সহজে শান্তি ও মুক্তির তাওফিক দান করুন। আমিন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।