শিশুর গলাব্যথা কেন হয়, করণীয় কি? দুর্বা ডেস্ক :: ঋতুর পরিবর্তনের কারণে শিশুদের নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। ঘরে ঘরে শিশুদের জ্বর-শর্দি লেগেই আছে। জ্বরের সঙ্গে অনেক শিশুর গলাব্যথাও দেখা দিচ্ছে। অনেকে করোনা হিসেবে বিষয়টি নিয়ে ভয়ে আছেন। মূলত টনসিল ও মুখ গহ্বরের রোগের কারণে শিশুদের গলাব্যথা হয়ে থাকে।
পাঁচ থেকে আট বছর বয়সী শিশুরা এ সমস্যায় সাধারণত বেশি ভোগে। বর্ষা শেষে বা শীতকালে গলাব্যথা বাড়তে পারে। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে প্রদাহ হয়। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী জীবাণু হলো গ্রুপ-এ বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস। এটি সংক্রামক। লালা বা শ্লেষ্মার মাধ্যমে ছড়ায়।
চিকিৎসকরা বলেন, শিশুদের যত অপারেশন হয় তার মধ্যে টনসিলে অপারেশন প্রথম। টনসিলাইটিস সাধারণত স্ট্রেপট্রোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। আরো কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও হতে পারে টনসিলাইটিস। গলায় ক্ষত বা গলাব্যথা টনসিলাইটিসের প্রথমদিকের লক্ষণ।
কেন হয়
শিশু খাবার খাওয়ার সময় গলায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে স্বল্পমাত্রার জ্বর। শরীরে ব্যথা ও ম্যাজম্যাজ ভাব থাকতে পারে। টনসিল ফুলে যেতে পারে, লাল হতে পারে। অনেক সময় কানেও ব্যথা হতে পারে। আবার বারবার দেখা দিতে পারে টনসিলের প্রদাহ। যেটাকে রিকারেন্ট টনসিলাইটিস বলা হয়।
শিশুর গলব্যথা কেন হয় এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিব বলেন, ভাইরাসজনিত গলাব্যথায় শিশুর সর্দি-জ্বর, কাশি, চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। আবার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে হঠাৎ করে তীব্র গলাব্যথা, অনেক জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা, বমি বা বমির ভাব, পেটব্যথা, গলার পাশে ব্যথাসহ ফুলে যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সোর থ্রোটের কারণে টনসিল ও তার চারপাশের অংশ লাল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা যায়।
সঠিক সময় টনসিলাইটিসের চিকিৎসা করালে রোগী ভালো হতে পারে। আবার এ চিকিৎসায় অবহেলা করলে রোগীর বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে। টনসিল বড় হয়ে শ্বাসনালিকে বন্ধ করে দিতে পারে। খাবার খাওয়ার সময় খুব বেশি ব্যথা হতে পারে। যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে টনসিলের চারদিকে অ্যাবসেস বা ফোড়া হতে পারে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যাটি হলো টনসিলাইটিসের জীবাণু শিশুর হৃৎদপিণ্ডের ভাল্বে সমস্যা করে ঘটাতে পারে রিউমেটিক ফিভার। এজন্য এ রোগের চিকিৎসা করা জরুরি।
অনেকেই টনসিলাইটিস হলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এই বুঝি শিশুর টনসিলে অপারেশন করতেই হবে। এটা ভুল ধারণা। পরপর ২/৩ বছর ধরে প্রতি বছর তিন-চারবার টনসিলে প্রদাহ, টনসিলে অ্যাবসেস বা ফোড়া হলে, টনসিল বড় হওয়ার দরুন শ্বাসকষ্ট, কথা বলায় সমস্যা ও ঘুমে সমস্যা এবং আরো কিছু সমস্যা দেখা দিলে অপারেশন করা প্রয়োজন পড়ে।
কি করণীয়
অ্যাকিউট টনসিলাইটিস হলে অ্যান্টিবায়োটিক যেমন এজিথ্রোমাইসিন, সেফিক্সিম সেবন করতে হবে। জ্বর ও ব্যথার জন্য শিশুকে প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। কিন্তু শিশুদের অ্যাসপিরিন সেবন করতে দেবেন না। এতে শিশুর অন্য অসুখ হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।
এ সময় শিশুকে যথেষ্ট পানি ও তরল খাবার দিন। শিশুর ঢোক গিলতে বা শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হলে, লালা ঝরলে বা শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি) ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বজায় থাকলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুকে গরম পানি গড়গড়া করান। খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর যেন ঠাণ্ডা না লাগে। প্রচুর পরিমাণে ফলের জুস পান করতে দিন। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে দিন। শিশুকে কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করতে দিন। শিশুকে পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে দিন। ৬ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে দিন। এতে করে মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে। খুব কম বয়সী শিশুদের মাউথওয়াশ ব্যবহার করাবেন না। শিশু গিলে ফেললে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের হোতা কে এই নদী?
প্রখ্যাত নাক-কান-গলারোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, টনসিল হলেই তা কাটতে হবে- এটা কোনো কাজের কথা নয়। বারবার টনসিল আক্রান্ত হলে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে, মুখাবয়ব পরিবর্তিত হতে শুরু করলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অপারেশন নিয়ে পিতা-মাতা খুব চিন্তিত থাকেন। এতটা দুশ্চিন্তার কারণ নেই। অপারেশনের পর শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।