আজকাল সন্তানদের কি ধরনে খাবার তৈরী করতে বা কোন ধরনে খাবর দিতে হয় সে বিষয় অনেক মায়েরাই জানেন না। যার ফলে শিশুরা নানা রোগে আক্রন্ত হয়ে পরেন। শিশুদের বা শিশু খাদ্যর তালিকা সেরা ১০ টি-জানুন এ টু জেড জানা থাকলে আসা করি আর কোন সমস্যায় পরতে হবে না মায়েদের। মায়েরদের জন্যই আজকের এই আয়োজন আমাদের।। সন্তান লালন-পালন করার জন্য বাবা-মায়েরা চিন্তিত থাকেন। আজকে ওই সকল চিন্তিত মায়েদের জন্য বেশ কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরা হলো। মা বাবা হিসেবে, আপনি সর্বদাই আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে সেরাটা চেয়ে থাকেন।
সেটি যখন খাবারের কথা বলার সময় আসে,সেখানে সকল শিশুদের জন্য সত্যিই ভাল বলে কিছু নেই।আপনার বাচ্চার সহ্যের জন্য যেটি সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সেটিই হতে পারে ‘সেরা‘ শব্দটির নিকটবর্তী একটি মানানসই শব্দ। আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করুন ঘরে বসেই – জানুন এ টু জেড
তবে, এই খাদ্যগুলি বাচ্চার বয়সের জন্য উপযুক্ত হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে,বাচ্চার চার মাস বয়স হওয়ার পূর্বে আপনার তার সাথে কঠিন খাদ্যের পরিচয় করানো উচিত নয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তাদের ডায়েটে আধা–শক্ত খাদ্য যোগ করা প্রয়োজন।
৬ মাসের শিশুর সর্বোত্তম স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণের জন্য সর্বোত্তম খাবারগুলি সম্পর্কে অতিরিক্ত নির্দেশিকা যুক্ত করতে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা নিরিক্ষা করিয়া নেওয়া উচিত। চলুন আর কথা বেশী না বাড়িয়ে জেনে নেই আপনার শিশুর জন্য কি ধরনের বা কোন ধরনের খাবার খাওয়াবেন আপনি।
১. স্তন দুধ বা বুকের দুধ
স্তন দুধ বা বুকের দুধ এটি হল এমন এক খাদ্য যা শিশু খাদ্য‘র বা শিশুর জীবনের প্রথম বছরে তার পুষ্টির প্রায় সমস্ত দিকগুলিই পূরণ করে। তাদের বিকাশের জন্যও অপরিহার্য। তবে,এটিতে আয়রণের পরিমাণ বেশ কম থাকায় ছয় মাস বয়সের পর বাচ্চা যখন আরও বেশি চঞ্চল এবং গতিময় হয়ে ওঠে তখন তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ নাও করতে পারে। ১২ মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত বা সম্ভব হলে তারও বেশি সময়ের জন্য বুকের দুধের সাথে ক্রমশ পরিপূর্ণ করতে থাকুন তরল,আধা–শক্ত,শক্ত বা কঠিণ খাদ্য। ১২ মাস পযর্ন্ত বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য এই সময় থেকেই তাদের সবচেয়ে সেরা খাদ্যগুলি দেওয়া শুরু করা প্রয়োজন।
২. অ্যাভোকাডো
আপনার সন্তানের বয়স ১২ মাস হওয়ার পর, দুরন্ত শিশুর জন্য তার প্রথম আদর্শ ‘সবুজ‘ খাদ্যটি কি হতে পারে? অ্যাভোকাডো,কারণ এগুলি অন্য যেকোনও ফল বা সবজির তুলনায় ভাল ফ্যাট(মোনোস্যাচুরেটেড) ও খুব উচ্চ প্রোটিনে পরিপূর্ণ। এছাড়া ৬ মাস পর থেকেও বুকের দুধের পাশাপাশী খাবার দিতে পারেন।
৩. আয়রণ সমৃদ্ধ দানাশস্য
স্পষ্টতই,শিশুরা তাদের দেহে সঞ্চিত আয়রণের সহিত জন্মগ্রহণ করে থাকে যা তাদের ৬ মাস বয়স থেকে নিঃশেষিত হতে শুরু করে। এই সময় থেকেই আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া শুরু করা উচিত। এর উপর আবার মায়ের বুকের দুধেও আয়রণের পরিমাণ কম থাকে। চাল,বার্লি এবং ওটমিলের মত যেকোনও আয়রণ সমৃদ্ধ দানা শস্যই এই সকল ঘাটতিগুলিকে পূরণ করতে পারে। কারণ আপাতদৃষ্টিতে,সেগুলি থেকে সাধারণত কোনও অ্যালার্জি হয় না। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৪-৬ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।
৪. লাল মাংস বা রেড মিট
সবজির পাশাপাশী লাল মাংস প্রোটিন,আয়রণ,রাইবোফ্লাভিন,নিয়াসিন,ভিটামিন B-6 এবং জিঙ্কের উৎস।পশুখাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিকর উপাদানগুলি মস্তিষ্ক,কঙ্কালের গঠণ এবং পেশীর সঠিক বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক। সুতরাং শিশুর প্রথম খাদ্যের জন্য তাদের শুধুমাত্র সবজি দেওয়া হল একটি পৌরাণিক কাহিনী কারণ তারা উদ্ভিদের উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রণকে সহজে হজম করতে পারে না। তবে পিউরিটি থেকে যেকোনও ক্ষুদ্র হাড়ের টুকরোকেও বের করে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন।আপনি আবার ক্যানজাত মাংসের সাধারণ পিউরিও কিনতে পারেন। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৭-১০ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।
৫. ব্রকোলি
বাচ্চা যখন চামচে খাওয়ার পর্যায় পার করে আসে,ব্রকোলির ফুলগুলি শিশুর ছোট্ট আঙ্গুলগুলিতে একদম উপযুক্ত ভাবে মানানসই হয়ে ওঠে।নরম এবং পরিচালনাযোগ্য করার জন্য সেগুলি সেদ্ধ করুন।এগুলি ভিটামিন C এর চমৎকার উৎস,কিন্তু এগুলিকে ভালভাবে ভাঁপিয়ে বা মাইক্রোওভেনে করে রান্না করে নেওয়া উচিত কারণ সেদ্ধ করলে এর অর্ধেক ভিটামিনগুলি দূর হয়ে যায়।এছাড়াও এর মধ্যে থাকে বিটা–ক্যারোটিন,ফোলিক অ্যাসিড,আয়রণ,পটাসিয়াম এবং ফাইবার বা তন্তু। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৮-১০ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।
৬. বীট
বীটে রয়েছে ভিটামিন C,ভিটামিন A,ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলিক অ্যাসিড।এটি অন্যান্য সবজিগুলির মধ্যে সাধারণতই মিষ্টি প্রকৃতির একটি সবজি যা বাচ্চারা গ্রহণ করতে দ্রুতই পছন্দ করে থাকে। শিশুদের জন্য বীটের সবচেয়ে সেরা প্রস্তুতিটি হল এগুলিকে সেদ্ধ অথবা রোস্ট করে নেওয়ার পরে এগুলির পিউরি অথবা জ্যুস হিসেবে ব্যবহার করা। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৮-১০ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।
৭. মিষ্টি আলু
শিশুদের জন্য কিছু সবজির স্বাদ প্রায়শই বরখাস্ত হয়। আর আপনি যদি সেগুলির সাথেই আপনার ছোট্টটির সবজির যাত্রা শুরু করেন,তবে সেক্ষেত্রে কিছু বাধা আসতে পারে।এগুলির পরিবর্তে আপনি মিষ্টি আলুর মত আরও বেশি মনোরম স্বাদের প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানগুলির দ্বারা সেটি শুরু করতে পারেন। এগুলি পটাসিয়াম, ভিটামিন C এবং ফাইবার বা তন্তু সরবরাহ করে। এছাড়াও আবার এগুলির মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যেগুলি কিছু ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে দেহকে শক্তিশালী করে তোলে। বাচ্চার জন্য তার প্রথম ‘সবজি‘ টিকে একটি স্মরণীয় উপহার হিসেবে গড়ে তুলতে সেটিকে ভালভাবে চটকে নিন। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৬-১১২ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।
৮. কলা
এটি হল এমন এক খাদ্য যা শিশুর কৌতুকপূর্ণ মুখমণ্ডলে একটি দন্তহীন হাসির ঝলক নিয়ে আসে।এটিকে চটকিয়ে এবং জগাখিচুড়ি আরো মিষ্টি কিছু বানানো সহজ,যা শিশুদের উচ্চ মাত্রায় পুষ্টি যোগায় ও তাদের ‘মল‘ অপসারণের একটি কৌশল হিসেবেও পরিচিত। এগুলি শক্তির উৎস কারণ এগুলি কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ। হজমে সহায়ক এবং মলকে নরম করে তোলার উপাদানের দ্বারা গঠিত,কারণ এগুলি ফাইবার বা তন্তুতে পরিপূর্ণ। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৬- ৯ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়। আরো পড়ুন:নারীর পাঁচটি স্বাস্থ্য সমস্যা
৯. আলুবোখরা
আলুবোখরা যেগুলিকে আপনি হয়ত শুকনো প্লাম হিসেবে জানেন,শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে কারণ এগুলি খুব নরম এবং মিষ্টি।এর ভাল দিকটি হল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কোষ্ঠকাঠিণ্যের নিরাময়ের জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার রূপে কাজ করে। এটি প্রায়ই ঘটে থাকে যখন শিশুরে আধা–শক্ত খাদ্য থেকে সম্পূর্ণ কঠিণ খাদ্যে পদার্পণ করে। আপনি কলাকে একটা পিউরি হিসেবে অথবা সেটিকে ওটমিল,দানা শস্য অথবা অ্যাপেলশসের সহিত মিশ্রিত করে আপনাদের ছোট্ট সদস্যটিকে পরিবেশন করতে পারেন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান পুষ্টি। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৪-৬ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।
১০. গাজর
গাজর একটি পুষ্টি জাতীয় খাবার। এটা ছোট বড় সবাই খেতে পারেন। এমনকি নানা অনুষ্ঠানে এটাকে সালাদ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গাজর ছাড়া সালদ হয় না বললেই চলে। আপনার শিশু সন্তানকে গাজর খাওয়াবেন। গাজরে চোখের অনেক উপকারী। গাজর তার পরিপূর্ণতার সহিত আপনার সন্তানের চোখকে সুরক্ষিত রাখে কারণ এর মধ্যে থাকে বিটা–ক্যারোটিনের প্রাচুর্য এটি দেহের মধ্যে ভিটামিন A তে পরিবর্তিত হয় যা একটি স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য।বিটা–ক্যারোটিন হল আবার একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও যা গাজরকে কমলা রঙে রাঙায়িত করে তোলে। প্রস্তাবিত বয়স কাল দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ ৬-৯ মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়। আরো পড়ুন:শিশুর স্বাস্থ্যর সেরা ৫টি প্রশ্নর উত্তর এখানে
সচেতন হন যে এক্ষেত্রে খাদ্যের এমন কোনও নির্দিষ্ট একটি সেট বা নিয়ম নেই যা একটি শিশুকে অত্যন্ত বলদায়ক এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এগুলি সবই হল আপনার সন্তানের সঠিক বয়স ভিত্তিক সহ্য হতে পারে এমন ধরনের খাদ্যগুলি কীভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে তার পরীক্ষা এবং আবিষ্কারমূলক কিছু প্রয়াস। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও আপনার শিশু সন্তানকে ভালো খাবার দিতে পারেন।
আরো পড়ুন:বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীরা যা যা খাবে
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।