সঞ্চয়পত্র কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা প্রয়োজন । আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ার পরে এখন সব রকম মিলিয়ে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ এবং যুগ্ম নামে ১ কোটি টাকার কেনা যায়। এই ৫০ লক্ষের ক্ষেত্রে আবার উপরে প্রতি ধরনের সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে যে লিমিট আছে সেটার বাইরে ঐ এক রকম সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না।
- আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্র ৩ বছর ৩ মাস পর ভেঙ্গে ফেললে কত টাকা মুনাফা পাব?
- আরো পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ বর্হিভূত দেনার দায়ে জেল আটকে পূর্ণ বেতন ভাতাদি প্রাপ্য
- আরো পড়ুন: সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ অনুসারে সাময়িক বরখাস্তের বিধান
সঞ্চয়পত্র কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা প্রয়োজন
সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের বিদ্যমান জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যা এক ধরনের ফিক্সড ডিপোজিট।
এই মুহূর্তে ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু আছে।
(ক) ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সকল শ্রেণী ও পেশার বাংলাদেশী নাগরিক কিনতে পারবেন। একক নামে ৩০ লক্ষ অথবা যুগ্ম-নামে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়। ৫ বছর মেয়াদ এবং মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে ১ম বছরান্তে ৯.৩৫ শতাংশ, ২য় বছরান্তে ৯.৮০ শতাংশ, ৩য় বছরান্তে ১০.২৫ শতাংশ এবং ৪র্থ বছরান্তে ১০.৭৫ শতাংশ হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে। মুনাফা পাওয়া যায় মেয়াদ শেষে। মোট ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থাকলে ৫ বছর পরে মেয়াদপূর্তিতে প্রতি ১ লক্ষ টাকায় ৫৩৫৮০ টাকা আর ৫ লক্ষের উপরে থাকলে ৫০৭৬০ টাকা পাওয়া যায়, ট্যাক্স কাটার পরে। বর্তমানে এটি কোন ব্যাংকে পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র জেলা সঞ্চয় ব্যুরোতে পাওয়া যাবে।
(খ) ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
সকল শ্রেণী ও পেশার বাংলাদেশী নাগরিক কিনতে পারবেন। একক নামে ৩০ লক্ষ অথবা যুগ্ম-নামে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়। ৩ বছর মেয়াদ এবং মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.০৪ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে ১ম বছরান্তে ১০.০০ শতাংশ এবং ২য় বছরান্তে ১০.৫০ শতাংশ হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে। ৩ মাস পরপর মুনাফা পাওয়া যায়। মোট ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থাকলে প্রতি ৩ মাসে ১ লক্ষ টাকায় ২৬২২ টাকা আর ৫ লক্ষের উপরে থাকলে ২৪৮৪ টাকা পাওয়া যায়, ট্যাক্স কাটার পরে। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র জেলা সঞ্চয় ব্যুরো অফিস গুলোতে বিক্রয় হয়। কোন ব্যাংকে এটি পাওয়া যাবে না।
(গ) পরিবার সঞ্চয়পত্র
১৮ ও তদুর্ধ্ব বয়সের যে কোন বাংলাদেশী মহিলা, যে কোন বাংলাদেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা) এবং ৬৫ ও তদুর্ধ্ব বয়সের বাংলাদেশী (পুরুষ ও মহিলা) নাগরিক কিনতে পারবেন। একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লক্ষ টাকা। ৫ বছর মেয়াদ এবং মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.৫২ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে ১ম বছরান্তে ৯.৫০ শতাংশ, ২য় বছরান্তে ১০.০০ শতাংশ, ৩য় বছরান্তে ১০.৫০ শতাংশ এবং ৪র্থ বছরান্তে ১১.০০ শতাংশ হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে। প্রতি মাসে মুনাফা পাওয়া যায়। মোট ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থাকলে প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকায় ৯১২ টাকা আর ৫ লক্ষের উপরে থাকলে ৮৬৪ টাকা পাওয়া যায়, ট্যাক্স কাটার পরে।
- আরো পড়ুন: ব্যক্তিগত মামলায় সরকারি কর্মচারীকে গ্রেফতারের বিধান
- আরো পড়ুন: ফৌজদারী মামলায় অব্যাহতি প্রাপ্তদের বেতন ভাতা পরিশোধ সংক্রান্ত
- আরো পড়ুন: লঘুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়
(ঘ) পেনশনার সঞ্চয়পত্র
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাক্তি এবং মৃত চাকুরীজিবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী/ স্ত্রী/ সন্তান। একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা। ৫ বছর মেয়াদ এবং মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.৭৬ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে ১ম বছরান্তে ৯.৭০ শতাংশ, ২য় বছরান্তে ১০.১৫ শতাংশ, ৩য় বছরান্তে ১০.৬৫ শতাংশ এবং ৪র্থ বছরান্তে ১১.২০ শতাংশ হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে। ৩ মাস পরপর মুনাফা পাওয়া যায়। মোট ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থাকলে প্রতি ৩ মাসে ১ লক্ষ টাকায় ২৭৯৩ টাকা আর ৫ লক্ষের উপরে থাকলে ২৬৪৬ টাকা পাওয়া যায়, ট্যাক্স কাটার পরে।
- অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ার পরে এখন সব রকম মিলিয়ে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ এবং যুগ্ম নামে ১ কোটি টাকার কেনা যায়। এই ৫০ লক্ষের ক্ষেত্রে আবার উপরে প্রতি ধরনের সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে যে লিমিট আছে সেটার বাইরে ঐ এক রকম সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না।
- কারো যদি কিছু একক নামে কেনা থাকে তাহলে ৫০ লক্ষ হতে যে পরিমান লিমিট বাকি রয়েছে ঐ পরিমানের দ্বিগুন আরেকজনের সঙ্গে যুগ্ম নামে কেনা যাবে যদি অন্যজনের সেই লিমিট থাকে।
- এখন সঞ্চয় অফিস, পোস্ট অফিস এবং বেশীরভাগ সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতেই হবে।
- কেনার জন্য সঞ্চয়পত্র ফর্ম, নিজের এবং নমিনির ছবি এবং NID এবং TIN Certificate লাগে, তবে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত TIN লাগে না। নতুন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারবেন এই লিংক থেকে – https://www.bb.org.bd/…/sanchayapatra/purchase_form.docx
- এ ছাড়া নিজ ব্যাংক থেকে না কিনলে MICR চেক লাগে। এ ধরনের চেকের পাতার নিচে এক সারিতে চেক নম্বরসহ অনেকগুলো ইংরেজী সংখ্যা প্রিন্ট করা থাকে। নগদ টাকায় কেনা যায় না।
- সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকার নিচে সঞ্চয়পত্র থাকলে যা মুনাফা পাবেন তার উপরে ট্যাক্স কেটে রাখবে ৫ শতাংশ আর তার বেশি থাকলে ১০ শতাংশ।
- এখন অনলাইন সিস্টেম হওয়ার কারনে সঞ্চয়পত্র হিসাবে এক পৃষ্ঠার একটি প্রিন্ট পাবেন এবং মুনাফা EFT হয়ে সময়মতো আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। মুনাফা আসতে কখনো কখনো একটু দেরী হয়, সেটা স্বাভাবিক।
- সঞ্চয়পত্র কেনা হলে এবং প্রতিবার মুনাফা ব্যাংকে আসার সময় মোবাইলে মেসেজ আসে।
- আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দেয়ার জন্য প্রতি বছর কত টাকা মুনাফা পেয়েছেন এবং কত টাকা ট্যাক্স কেটে রাখা হয়েছে তার জন্য যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন সেখান থেকে একটি প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে http://www.nationalsavings.gov.bd/ ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।