জেনে নিন সৎকর্মশীল বান্দার পরিচয় সম্পর্কে। আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিতদ জেনে নেওয়া যাক। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে সৎকর্মশীল বান্দার পরিচয় তুলে ধরেছেন। আহলে কিতাবের অনুসারিদের মধ্যেও সব সমান নয়; বরং তাদের মধ্যেও সৎকর্মশীল বান্দা আছে। তাদের পরিচয় ও সৎকর্মগুলো এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
لَیۡسُوۡا سَوَآءً ؕ مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ اُمَّۃٌ قَآئِمَۃٌ یَّتۡلُوۡنَ اٰیٰتِ اللّٰهِ اٰنَآءَ الَّیۡلِ وَ هُمۡ یَسۡجُدُوۡنَ
‘তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্যে একদল ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে। তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে এবং তারা সেজদা করে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১৩)
یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُسَارِعُوۡنَ فِی الۡخَیۡرٰتِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ
‘তারা আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং তারা সৎকাজে তৎপর থাকে। তারাই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১৪)
وَ مَا یَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَلَنۡ یُّکۡفَرُوۡهُ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌۢ بِالۡمُتَّقِیۡنَ
‘তারা যা কিছু উত্তম কাজ করে, ফলত তা কখনই ব্যর্থ হবে না। আর আল্লাহ ধর্মভীরুদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১৫)
- আরো পড়ুন: যাদের তওবা কবুল হবে না
- আরো পড়ুন: মুসাফাহ করা কি সুন্নাত?
- আরো পড়ুন: নিজ সম্পদ কার জন্য সবার আগে ব্যয় করবেন?
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
‘তারা (আহলে কিতাবরা) সব সমান নয়। বরং আহলে কিতাবের মধ্যেই একদল রয়েছে- যারা সত্যধর্মে প্রতিষ্ঠিত; রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ (কোরআন) তেলাওয়াত করে এবং নামাজ পড়ে। আর তারা আল্লাহ ও কেয়ামতের দিনের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস রাখে এবং অপরকে সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। এবং পূণ্যের কাজে তৎপরতা দেখায়। এরাই আল্লাহর কাছে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত। তারা যেসব সৎকর্ম করবে তা থেকে (তার সওয়াব থেকে) তাদের বঞ্চিত করা হবে না। আল্লাহ তাআলা পরহেজগারদের সম্পর্কে সব অবগত আছেন।
প্রসঙ্গিক আলোচনা
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও নাসারা সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের কিছু গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। তারাই সৎকর্মশীল। তাদের পরিচয়-
১. তারা হকের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে, কোনও কিছুই তাদেরকে হক পথ থেকে টলাতে পারে না।
২. তারা রাতের বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে।
৩. তারা নামাজ আদায় করে।
৪. তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ ঈমান রাখে।
৫. তারা সৎকাজের আদেশ দেয়।
৬. তারা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে।
৭. পূণ্যের কাজে তৎপরতা দেখায়।
আয়াতের পূর্বাপর সম্পর্কদৃষ্টে মনে হয়, যখন আল্লাহ তাআলা এ উম্মাতে মুহাম্মদিকে সবচেয়ে উত্তম উম্মত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তার কারণ হিসেবে ঈমান ও সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করার গুণ তাদের জন্য সাব্যস্ত করেছেন; তখন এ গুণগুলো অন্যান্য উম্মত বিশেষ করে- আহলে কিতাবদের যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে, তাদেরকেও উত্তম উম্মতের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
সৎকর্মশীল বান্দার পরিচয়
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অন্য আয়াতেও এসব গুণের অধিকারী সৎকর্মশীল বান্দাদের পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন-
১. اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰهُمُ الۡکِتٰبَ یَتۡلُوۡنَهٗ حَقَّ تِلَاوَتِهٖ ؕ اُولٰٓئِکَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِهٖ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
‘যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২১)
২. وَ اِنَّ مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ لَمَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکُمۡ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِمۡ خٰشِعِیۡنَ لِلّٰهِ ۙ لَا یَشۡتَرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ اَجۡرُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ
‘আর নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যে আল্লাহর জন্য বিনীত হয়ে ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং যা নাজিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি; আর যা নাজিল করা হয়েছে তাদের প্রতি। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে বিক্রয় করে না। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে পুরস্কার। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৯)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একরাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশার নামাজ অনেক দেরি করে আদায় করলেন, তারপর মসজিদের দিকে বের হয়ে দেখতে পেলেন যে, লোকেরা নামাজের অপেক্ষা করছে। তখন তিনি বললেন, ‘কোনো দ্বীনের কেউই তোমাদের মত এ সময়ে নামাজ আদায় করে না। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন এ আয়াত নাজিল হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন হজরত আবদুল্লাহ ইবন সালাম, সালাবাহ ইবন সাইয়াহ, উসাইদ ইবন সাইয়াহ ও আসাদ ইবন উবাইদসহ একদল ইয়াহুদি সম্প্রদায়ের লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান আনলো; তখন ইয়াহুদি নেতারা বলতে লাগলো- ‘মুহাম্মাদের উপর যারা ঈমান এনেছে তারা হচ্ছে আমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট লোক।’ তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন।’ (তাবারি)
- আরো পড়ুন: বদনজর ও ক্ষতি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখার দোয়া
- আরো পড়ুন: ঘুমানোর আগে সুরা কাফিরুন পড়ুন
- আরো পড়ুন: জুমার দিনের সেরা জিকির কী?
মনে রাখতে হবে
ইয়াহুদি-নাসারা সবাই যে ক্ষতিগ্রস্ত তা কিন্তু নয়। বরং তাদের মধ্যে যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান এনেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাবে। যেমন- আগের আয়াতে যেসব আহলে-কিতাবের নিন্দাবাদ আলোচিত হয়েছে, তাদের সকলে এক রকম ছিল না, বরং তাদের মধ্যে কিছু ভাল মানুষও ছিলেন। যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, উসায়েদ ইবনে উবায়েদ, সালাবা ইবনে সাইয়াহ এবং উসায়েদ ইবনে সাইয়াহ।
সুতরাং যারা সৎকর্মশীলবান্দা, তাদের মধ্যে কোরআনের আয়াতে উল্লেখিত গুণগুলো প্রকাশ পাবে। যারা আল্লাহর তাওফিকে ইসলাম কবুল করার মর্যাদা লাভে ধন্য হবে এবং তাঁদের মধ্যে ঈমান ও আল্লাহভীরুতার গুণ বিদ্যমান থাকবে। তারা হবে- হকপন্থী দল, রাত জেগে তাহাজ্জুদের সিজদাকারী নামাজি। কোরআন তেলাওয়াতকারী। ভাল কাজের আদেশকারী। রেসালাতের বিরোধিতায় (মন্দ কাজের) নিষেধকারী। যা উল্লেখিত আয়াতে সৎকর্মশীল বান্দার পরিচয় হিসেবে ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সৎকর্মশীল বান্দা হিসেবে কবুল করুন। কোরআনের আয়াতে উল্লেখিত গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।