নবজাতকের যত্ন

জেনে নিন কিভাবে নবজাতকের যত্ন নিবেন। আসুন এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। শীতে শিশুদের ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। নবজাতক হলে তো কথাই নেই। তার জন্য চাই সর্বোচ্চ সতর্কতা। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া চাই। শীতকালের চিরাচরিত উলের পোশাক শিশুর কোমল শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নবজাতকের শীতের পোশাক হতে হবে তার মতোই কোমল।



নবজাতকের যত্ন

শূন্য থেকেই সতর্কতা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল মান্নান জানান, শীতকালে নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখার প্রতি মনোযোগী হতে হবে সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই। তার পরামর্শ হলো, স্বাভাবিকভাবে যদি ঘরে পূর্ণ গর্ভাবস্থায় শিশুর (পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহ) জন্ম হয় তাহলে কক্ষের তাপমাত্রা ২৬ – ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে হবে।

জন্মের পর নবজাতক যে কক্ষে থাকবে তখনও এটি প্রযোজ্য। রুম হিটার জ্বালিয়ে, দরজা-জানালা বন্ধ রেখে এ তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে পারেন। অনেকে ঘরের কোণে কয়লা ও তুষের আগুন রাখেন। সেক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকুন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই নবজাতকের শরীর সুতির পুরনো পরিষ্কার ও নরম কাপড়ে মুছে ফেলুন।

শরীরে গর্ভজাত তরল লেগে থাকলে খুব দ্রুত দেহের তাপ বের হয়ে যায়, যাকে ইভাপোরেটিভ হিট লস বলে। নবজাতককে আলাদা বিছানা বা ঠাণ্ডা কোনও স্থানে রাখার বদলে মায়ের পেটের কাছে বা বুকের ওপর রাখুন। খেয়াল রাখবেন, নবজাতকের ত্বকের সাথে মায়ের ত্বক লেগে থাকবে। তারপর নবজাতককে উষ্ণ কাপড়ে ঢেকে যত দ্রুত সম্ভব শালদুধ খেতে দিন। এতে থাকা গ্লুকোজ, প্রোটিন, চর্বি শিশুর শরীর উষ্ণ করে। দুধ খেতে হালকা ব্যায়াম হয় বলে শরীর নিজ থেকেই উত্তাপ তৈরি করা শুরু করে।

কী করবেন না

বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল মান্নান বলেন, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই প্রচলিত কিছু আচরণের কারণে শীতে নবজাতকের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই শিশুকে গোসল করিয়ে ফেলা আমাদের দেশের চিরাচরিত দৃশ্য। কারণ নবজাতকের দেহে জন্মের পরপরই একপ্রকার সাদা আবরণ দেখা যায়।

অনেকেই এটি নোংরা ভেবে মুছে দেন বা গোসল করিয়ে ধুয়ে দেন। কেউ লিকুইড প্যারাফিনেও মুছে ফেলেন। কিন্তু এটি মূলত নবজাতকের সুরক্ষা কবচ। এটি নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখে, যেকোনো জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে সুরক্ষা দেয়। প্রায় সবাই এক দিনের মধ্যেই মাথার চুল কামিয়ে দেন। কিন্তু কখনো কখনো এর ফলে নবজাতকের নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। চুল নবজাতকের মাথার তাপমাত্রা ধরে রাখে।

খুব বেশি বড় চুল হলে এবং তাতে সমস্যা তৈরি হলে কাঁচি দিয়ে বড়জোর একটু ছেঁটে দেয়া যাবে। রোদে দেওয়ার জন্য অনেকে নবজাতককে ভোরের ঠাণ্ডা বাতাসে খালি গায়ে ফেলে রাখেন। শীতের ঠাণ্ডা বাতাস, কুয়াশা বা মেঘলা অবস্থায় শিশুকে বাইরে নেওয়াই অনুচিত। রোদ উঠলে ও বাতাস কম থাকলে বেলা ১২ টার পূর্বে নবজাতককে কোলে নিয়ে রোদে বসতে হবে। শরীর উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকলে একটি একটি করে অঙ্গ পুরো শরীরে রোদ লাগাতে হবে, তাও আধা ঘণ্টার বেশি নয়। বিকালের রোদ নবজাতকের শরীরে লাগানো ক্ষতিকর।

আরেকটি প্রচলিত আচরণ হলো নাভির নাড়িতে তেল মেখে রোদে রাখা। মনে রাখবেন, এতে সংক্রমণের পথই শুধু তৈরি করা হয়। নাভি থাকবে উন্মুক্ত কিন্তু যেকোনো কিছুর স্পর্শ ছাড়া। বড়জোর ঢোলা সুতির পোশাকে ঢেকে রাখা যাবে। ডায়াপার পরালে তাও থাকবে নাভির নিচে। এক ডায়াপার ৪ ঘণ্টার বেশি কোনোভাবেই রাখা যাবে না।

হাড় শক্ত করতে ও শরীর গরম করতে নবজাতকের শরীরে তেল বা লোশন মালিশ করাটা আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত। অথচ চিকিৎসকরা বলেন, প্রথম ১ মাস শিশুকে তেল, সাবান, পাউডার, লোশন, ক্রিম, কালি, কাজল কিছুই ছোঁয়ানো যাবে না। ২- ৩ মাস পর অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল মালিশ করা যেতে পারে। অনেকেই উন্নতমানের ভেবে বিদেশি কোম্পানির তেল, লোশন ব্যবহার করেন। এগুলো আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ব্যবহারের উপযোগী কিনা দেখে নিন। এসবে শিশুর অ্যালার্জির আশঙ্কাও থাকে।

কুসুম পানিতে গোসল

শীতকালে অন্তত ১ মাস নবজাতককে সরাসরি পানিতে গোসল করানো অনুচিত। সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া বা প্রি-ম্যাচিওরড বেবিকে দুই মাস গোসল করানো ঠিক হবে না। তিন দিন পর কুসুম কুসুম গরম পানিতে শরীর হালকা মুছে দিতে পারেন।

১/ ২ মাস পর সপ্তাহে ১ দিন পানিতে গোসল করানো যাবে। গোসল বা গা মোছানোর পানি প্রথমে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর হালকা কুসুম গরম করে নিতে হবে। পানিতে জীবাণুনাশক তরল মেশানো যাবে না। পানি সূর্যের রোদে গরম করা হলেও হবে না। শিশুর গোসল অবশ্যই বদ্ধ কোনো ঘরে হতে হবে। এর ফলে বাতাসে নবজাতক ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হবে না।

পোশাক হবে কোমল

নবজাতককে সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। চিকিৎসকরা বলেন, উলের ক্ষুদ্র লোমে অ্যালার্জি হতে পারে। সুতির পোশাকের ওপর উলের সোয়েটার চাপাতে পারেন, অন্তত ৩ প্রস্থ পোশাক নবজাতককে পরাতে হয়। তা হতে পারে কাঁথা ও কম্বল। অবশ্যই তা হবে শিশুর উপযোগী।



দ্য বেবি শপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আলী নবজাতকের যত্ন এর জন্য উপযোগী পোশাক সম্পর্কে জানান, দেশেই পাওয়া যায় নবজাতকের ব্যবহারের উপযোগী পোশাক। এগুলো তৈরি হচ্ছে সুতি, উল ও অন্যান্য উষ্ণ কাপড়ে। নবজাতকের যত্ন পোশাকের মধ্যে আছে বডি স্যুট ও রম্পার।

এগুলোর মাধ্যমে জামা ও প্যান্টের কাজ একসাথে চলবে। আরো রয়েছে বেবি স্যাক। এটি অনেকটা ছালার মতো, কিন্তু কাজ করে কম্বলের। নবজাতককে সামনে থেকে খোলা যায় এমন পোশাক পরানো উচিত। বেবি স্যাকের সামনে চেইন লাগানো বলে সে সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া নবজাতককে হাফহাতা বা ফুলহাতা সোয়েটার, টি-শার্টও পরাচ্ছেন অনেকে।

শীতে নবজাতককে অবশ্যই হাতমোজা, পা-মোজা ও কানটুপি পরাতে হবে। তবে মনে রাখবেন, নবজাতকের দেহের আচ্ছাদন হিসেবে সুতি ছাড়া অন্য কোনো কাপড় লাগানো উচিত নয়। এত কিছুর পরও যদি ঠাণ্ডা লেগেই যায় নবজাতকের সর্দি মুছতে রাবারের নেজল অ্যাসপিরেটর ব্যবহার করুন এবং দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ! কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কষা পায়খানা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা ! কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

ইদানিং দেখা যাচ্ছে ছোট থেকে বড় সকলের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা নিয়ে চিন্তায় আছেন বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *