জেনে নিন যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে। আসুন এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হাশরের ময়দানে মানুষকে ৫ টি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে, তার মধ্যে একটি হলো- ‘যৌবনকাল কিভাবে কাটিয়েছে?’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় যৌবনকাল। যৌবনকালের ইবাদত আল্লাহর কাছে অনেক দামি।
- আরো পড়ুন: যে জিকিরের পুরস্কার আল্লাহ নিজে দেবেন
- আরো পড়ুন: সাফল্য পাওয়ার পর শুকরিয়া ও দোয়া
- আরো পড়ুন: শান্তি ও মুক্তির সহজ আমল
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে আছে অনেক মূল্যবান কথা ও উপদেশ। বিজ্ঞজনরা বলেন থাকেন-
‘পাকা দাড়ির বুড়ো লোকের ফরজ, নফল, তাহাজ্জুদ নামাজে যে সওয়াব আছে, একজন যুবক শুধু ফরজ নামাজ পড়লে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাবে।’
সে কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন- ‘একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ তাআলা সেসব যুবকের ইবাদতে বেশি খুশি হন; যারা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।’
যৌবনকাল আল্লাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে এ বয়সের ইবাদত-বন্দেগিতেও আছে বিশেষ সুসংবাদ। হাদিসে এসেছে-
وعدّ صلى الله عليه وسلم في السبعة الذين يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله: « شابا نشأ في عبادة الله
‘আর যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেয়; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্পর্কে বলেছেন, কেয়ামতের দিন; যেদিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না; আল্লাহ তাআলা তাকে (আরশের) স্বীয় ছায়ার তলে আশ্রয় দেবেন।’ (সুবহানাল্লাহ!)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসে যৌবনের গুরুত্ব ওঠে এসেছে। হাদিসে তিনি জানান, আল্লাহ কেয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে তার যৌবন কালের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। যৌবনের হিসাব নেবেন। এ হিসাব দেওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো আদম সন্তানকে এক কদমও নড়তে দেয়া হবে না। কেয়ামতের সেই পরিস্থিতি বর্ণনায় হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ৫ টি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পা ২ টি আল্লাহর কাছ থেকে সরতে পারবে না। তাহলো-
১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে?
২. তার যৌবনকাল কি কাজে বিনাশ করেছে?
৩. তার ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে? এবং
৪. তা কি কি খাতে খরচ করেছে। এবং
৫. সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল আর সে অনুযায়ী কি কি আমল করেছে? (তিরমিজি, তালিকুর রাগিব)
আল্লাহর কাছে যৌবনকাল অনেক বেশি প্রিয়। সে কারণেই তিনি সব নবি-রাসুলকেই যৌবনের টগবগে বয়সে সত্য দ্বীনসহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা একমাত্র যুবক বান্দাকে জ্ঞান দান করেন। যাবতীয় কল্যাণ যৌবনেই লাভ করা সম্ভব হয়। তারপর তিনি তার দাবির পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ তাআলার বাণী তেলাওয়াত করে শোনান।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ
‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৬০)
২. َّحۡنُ نَقُصُّ عَلَيۡكَ نَبَأَهُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّهُمۡ فِتۡيَةٌ ءَامَنُواْ بِرَبِّهِمۡ وَزِدۡنَٰهُمۡ هُدٗى
‘আমরা তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমরা তাদের হেদায়েত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১৩)
যৌবনকালকে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য গণিতম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ কারণে বার্ধক্য আসার আগে যৌবন কালের প্রতি যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দেখানোর কথা বলেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে ৫ টি জিনিসের আগে গণিমত/সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। (তাহলো)-
১. তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার পূর্বে।
২. তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও তোমার অসুস্থ হওয়ার পূর্বে।
৩. তোমার সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অসচ্ছলতার পূর্বে।
৪. তোমার অবসরকে কাজে লাগাও তোমার ব্যস্ততা আসার পূর্বে। আর
৫. তোমার হায়াতকে (জীবনকে) কাজে লাগাও তোমার মৃত্যু আসার আগে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
- আরো পড়ুন: ভালো-মন্দ কাজ বোঝার উপায়
- আরো পড়ুন: গুগল প্লে স্টোর ব্যবহারে সমস্যা হলে করণীয়
- আরো পড়ুন: শিশুর ত্বক যত্নে থাক
মনে রাখতে হবে
যৌবনকাল মানুষের জন্য এক নেয়ামত ও সুযোগ। এ নেয়ামত ও সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করা জরুরি। যৌবনে নিজেদের চরিত্রকে কুলষিত করে গোমরাহীতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে বিরত থাকার বিকল্প নেই। এ কারণেই হজরত হাফসা বিনতে সীরিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যুবকদের উদ্দেশ্য করে নসিহক পেশ করেছেন-
‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমরা (ভালো) কাজ করো; কারণ যৌবনকালই হলো (ভালো) কাজ করার উপযুক্ত সময়।’
সুতরাং বর্তমান সময়ে যুব সমাজের দুরবস্থা ও নৈতিক অধঃপতনের সময় কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে জবাবদিহিতামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা খুবই জরুরি। সব অন্যয় ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব যুবক-যবতীকে সময়ের উম্মাদনার স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন গড়ে তোলা তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা যুবকদের প্রতি বিশেষ রহমত নাজিল করুন। আমিন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।