(PDF) অষ্টম শ্রেণি:‘মানবধর্ম’বাচাইকৃত সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

(PDF) অষ্টম শ্রেণি:‘মানবধর্ম’বাচাইকৃত সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

  • মানবধর্ম
  • লালন শাহ

কবি-পরিচিতি

নাম লালন শাহ্।
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ:১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দ; জন্মস্থান: ঝিনাইদহ মতান্তরে কুষ্টিয়া। শিক্ষাজীবন প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালাভ না করলেও নিজের চিন্তা ও সাধনায় তিনি হিন্দু ও মুসলমানের ধর্মীয় শাস্ত্র সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন।  এই জ্ঞানের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মিলনে তিনি নতুন এক দর্শন প্রচার করেন।

কর্মজীবন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সিরাজ শাহ্ নামক একজন বাউল সাধক তাঁকে সেবা শুশ্রƒষা করে বাঁচিয়ে তোলেন। এরপর মরমি সাধনায় আত্মনিয়োগ করে সিরাজ শাহের সাথে পালকি বহনের কাজ করে তিনি জীবনধারণ করতেন।

সাহিত্যকর্ম লালন শাহ্ রচিত গানের সংখ্যা সহস্রাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘বাড়ির কাছে আরশী নগর’,

‘আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে’, ‘নানা বরণ গাভীরে ভাই, একই বরণ দুধ’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘আর আমারে মারিস না’, ‘তিন পাগলে হলো মেলা’ প্রভৃতি।

জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ: ১৭ই অক্টোবর, ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ।

প্রশ্ন -৪  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
“শুনহ মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।”

ক. লালন শাহ্ কী ধরনের কবি? ১
খ. কবি মানুষকে জাত-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার যে দিক ফুটে উঠেছে, তার ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ.“উদ্দীপকে ফুটে উঠা দিকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয় প্রকাশ পায়নি।”বিশ্লেষণ কর। ৪

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. লালন শাহ্ মানবতাবাদী মরমি কবি।
খ. জাত-ধর্ম মানুষের আসল পরিচয় নয় বলে কবি মানুষকে জাত-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।
লালন শাহ্ মানুষের জাত-ধর্মের মিথ্যা অহংকার ও বাড়াবাড়িকে অর্থহীন মনে করেন। পৃথিবীজুড়ে জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের যে পরিচয় রয়েছে, গর্ব ও বাড়াবাড়ি করার জন্য তা ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা জাত-ধর্মের চেয়ে মানুষের মনুষ্যত্বের মূল্য অনেক বেশি। তাই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ।

গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানুষ হিসেবে মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠত্বের দিকটি ফুটে উঠেছে। পৃথিবীর সব মানুষের আদি পিতা ও আদি মাতা একজনই। তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নয়; বরং জাত-ধর্ম, শ্রেণি-বর্ণ, পেশা-সামাজিকতার ঊর্ধ্বে আমাদের এক অনন্য পরিচয় বিদ্যমান আর তা হলো আমরা মানুষ।

উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত বড়– চ-িদাসের ‘বৈষ্ণব পদাবলীর’ এক অবিনাশী অমর বাণী উচ্চারিত হয়েছে। সেটি হচ্ছে, পৃথিবীর সব মানুষকে ভাই সম্বোধন করে কবি বলছেন, জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা, জাতি-সামাজিক পরিচয় এসবের ঊর্ধ্বে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব হলো মানুষ হিসেবে আমাদের মানুষ-পরিচয়। ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবিও বলেন, মনুষ্যধর্মই মূলকথা।

জন্ম-মৃত্যুকালে কী কোনো মানুষ তসবি বা জপমালা ধারণ করে থাকে? সে সময়তো সবাই সমান। এর মাধ্যমে লালন শাহ্ মূলত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব যে তার মানুষ পরিচয়ে সেটি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। উদ্দীপকেও সেটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে ফুটে উঠা দিকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব যে মানুষ পরিচয়ে সে বিষয়টি ফুটে উঠেছে মাত্র। কবিতায় প্রকাশিত অন্য বিষয়গুলো ফুটে ওঠেনি।

সমরূপ মানবীয় বৈশিষ্ট্যে বিশ্বের মানবসমাজ এক ও অভিন্ন পরিবারভুক্ত। চিন্তা ও কর্মে, বিবেক ও শক্তিতে, হৃদয়ধর্ম ও নান্দনিকবোধে পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অজ্ঞ, স্বার্থান্বেষী ও ক্ষমতাদর্পী কিছু মানুষ হীন উদ্দেশ্যে মানুষে মানুষে সংকীর্ণ ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী। কিন্তু মানুষের আসল পরিচয় তার মনুষ্যত্বে, তার সবচেয়ে বড় ধর্ম ‘মানবধর্ম’।

উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদাবলির অন্যতম কবি বড়  চণ্ডি দাস পৃথিবীর সব মানুষকে ভাই সম্বোধন করে বলেন, জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি পেশা-সামাজিক পরিচয় এসবের ঊর্ধ্বে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব হলো মানুষ হিসেবে আমাদের মানুষ পরিচয়।

উদ্দীপকের এ অমর মর্মবাণীতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানবতাবাদী চেতনার দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ্ও বলেন, মানুষের মনুষ্যধর্মই মূলকথা। উদ্দীপকের সাথে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ এ দিকটিই একমাত্র বিষয় নয়, কবিতায় আরও অন্যান্য বিষয় রয়েছে।

উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকে ফুটে উঠা দিকটিতে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয় প্রকাশ পায়নি।

প্রশ্ন -৫ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

গনি মিয়া ও হরিপদ রাধিকাপুর গ্রামের দুই গরিব কৃষক। তাদের বউ-ঝিয়েরা একই পুকুরে থালাবাসন মাজে, কাপড় কাচে। গ্রামের সবাই একই কুয়ার পানি পান করে। এবাড়ির তরকারির বাটি ও বাড়িতে পাঠানো হয়। ঈদ-পূজোয় তারা আনন্দ ভাগাভাগি করে। আবার দুঃখ ও কষ্টেও হয় পরস্পর সমব্যথী। রাধিকাপুর সকল সম্প্রদায়ের শান্তির স্থান।

ক. লালন শাহ্-এর গুরু কে ছিলেন?
খ. ‘কূপজল’ ও ‘গঙ্গাজল’ কীভাবে অভিন্ন সত্তা? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন আদর্শবোধের পরিচয় মেলে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.“উদ্দীপকের মূলভাব ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাব যেন একই ধারায় প্রবাহিত।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ৪

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. লালন শাহের গুরু ছিলেন সিরাজ সাঁই।
খ. সব জলের মূলেই রয়েছে জল, তাই কূপজল ও গঙ্গাজল অভিন্ন সত্তা।
জল যখন কূপে থাকে, তখন তাকে কূপজল বলা হয়, যখন গঙ্গায় থাকে, তখন তাকে গঙ্গাজল বলে। আবার জলকে ঠা-া করা হয় তখন বরফ বলা হয়।

কিন্তু শত রূপভেদ সত্ত্বেও জলের ধর্মে পরিবর্তন সাধিত হয় না। জলের ধর্ম সে জল। কোনো পাত্রে কিংবা কোনো স্থানে গেলেই জলের বর্ণ, গন্ধ ও ধর্ম ভিন্ন হয়ে যায় না। শুধু পাত্র অনুসারে ভিন্ন নামকরণ হয়।

গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার মানবতাবোধের পরিচয় মেলে। জাত ও ধর্মবিভেদ আমাদের সমাজব্যবস্থার একটি ঘৃণ্য সংস্কার। এর ফলে এক জাতি বা ধর্মের মানুষ অন্য জাতি বা ধর্মের মানুষের থেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। এতে পরস্পরের মধ্যে হিংসাত্মক মানসিকতার উদ্ভব হয় যা সমাজ জাতির জন্য ক্ষতিকর।

এই ধরনের মানসিকতার বিপরীত রূপেরই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায়।
‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবধর্মের জয়গান গাওয়া হয়েছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ। তাই মানুষের সঙ্গে জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণের তুলনা করা চলে না। মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করাও উচিত নয়। কারণ মানুষ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে আর কোনো পরিচয় থাকতে পারে না।

উদ্দীপকে রাধিকাপুর গ্রামের মানুষ পরম সম্প্রীতিতে বাস করে। তাদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই। হিন্দু-মুসলিম সবাই একে অন্যের বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করে। কেউ কাউকে বৈষম্যের চোখে দেখে না। এমনকি উৎসবও মিলেমিশে পালন করে। বলা যায়, উদ্দীপকে কবিতার মানবধর্মের পরিচয় মেলে।

ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব হলো মানবতাবোধ, যা ‘মানবধর্ম’ কবিতারও মূলভাব। তাই বলা যায় মন্তব্যটি যথার্থ।
জাত ও ধর্মবিভেদ আমাদের সমাজব্যবস্থার একটি ঘৃণ্য সংস্কার। এর ফলে একজাতি বা ধর্মের মানুষ অন্য জাতি বা ধর্মের মানুষের থেকে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করে।

এতে পরস্পরের মধ্যে হিংসাত্মক মানসিকতার উদ্ভব হয়, যা সমাজ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের মানসিকতার বিপরীত রূপেরই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায়।

‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবতার কথা ধ্বনিত হয়েছে। জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণের পরিচয় কখনো বড় হতে পারে না। মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। তাই মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করা উচিত নয়। কেননা জন্ম বা মৃত্যুর সময় কারো জাতের চি‎হ্ন থাকে না। তাই মানুষে মানুষে বৈষম্য না করে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হয়। অসাম্প্রদায়িক নীতির জয়গান গাইতে হয়।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মূলভাব ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাব একই ধারায় প্রবাহিত।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

(PDF) অষ্টম শ্রেণি:মধুসূদন দত্ত‘সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

(PDF) অষ্টম শ্রেণি:মধুসূদন দত্ত‘সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

(PDF) অষ্টম শ্রেণি:মধুসূদন দত্ত‘সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর.. অষ্টম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা: আজ বাংলা ১ম পত্রের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *