প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা

প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে কম্পিউটার প্রোগ্রাম কি! তাহলে আমরা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে সম্পুর্ন ধারণা লাভ করতে পারবো।

কম্পিউটার প্রোগ্রাম কি?

“কম্পিউটার প্রোগ্রাম হচ্ছে কম্পিউটারে প্রদানকৃত কতগুলো ধারাবাহিক নির্দেশনার সমষ্টি, যার মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে মানুষের বাস্তব জীবনের প্রায় সকল সমস্যার সমাধান করা যায়।”

কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন- মনিটর, কী-বোর্ড ইত্যাদি হচ্ছে হার্ডওয়্যার। অপরদিকে প্রোগ্রাম হচ্ছে সফটওয়্যার।

কম্পিউটার প্রোগ্রামের উদাহরণঃ

এডোব ফটোশপ, ইলাসট্রেটর, মিডিয়া প্লেয়ার, মজিলা ফায়ারফক্স, গুগল ক্রোম, বিভিন্ন ভিডিও গেমস ইত্যাদি।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কি?

“কম্পিউটারের পরিভাষায়, কোন সমস্যা সহজে সমাধানের উদ্দেশ্যে সম্পাদনের অনুক্রমে প্রদত্ত ধারাবাহিক নির্দেশ সাজানোর কৌশল হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং”

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কি? এবার আমরা জানব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি কেন কিভাবে!

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি?

দৈনন্দিন জীবনে আমরা পরষ্পরের সাথে যোগাযোগ বা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য নানারকম ভাষা ব্যবহার করি। এসব ভাষাকে মানুষের ভাষা বলে।

যেমন- বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি।

তেমনি কম্পিউটার ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়। আর মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে বিভিন্ন ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়।

এসব ভাষাকেই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে। যদি বইয়ের ভাষায় বলি তাহলেঃ

“কম্পিউটার ব্যবহার করে কোন সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে যে ভাষা ব্যবহার করে প্রোগ্রাম রচনা করা হয়, সে ভাষাকেই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।”

যেমন- C, C++, Python, Java, Oracle, Pascal ইত্যাদি।

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর জনক কে?

অ্যাডা লাভলেস হচ্ছে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর জনক। তিনি সর্বপ্রথম ১৮৩৩ সালে “প্রোগ্রামিং” এর ধারণা নিয়ে আসেন।

এই কারনে অ্যাডা লাভলেসকে প্রোগ্রামিং ধারণার জনক বলা হয়। তার নামানুসারেই অ্যাডা নামক প্রোগ্রামিং ভাষাটির নামকরণ করা হয়।

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের প্রকারভেদ –

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সাধারণত ২ প্রকার।

  1. High Level Programming Language
  2. Low Level Programming Language

Low Level Programming Language আবার ২ প্রকার।

  1. মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ
  2. অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ

চলুন একটা ছবির মাধ্যমে আরও ভালো ভাবে দেখা যাকঃ

প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

 

লো লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝানো হয় মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ ও অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজকে।

মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ কি?

“যে ভাষায় সমস্যা সমাধানের জন্য বাইনারি সংখ্যা ০, ১ ব্যবহার করে নির্দেশ সাজিয়ে প্রোগ্রাম রচনা করা হয় তাকে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।”

মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে লিখিত প্রোগ্রামকে অবজেক্ট প্রোগ্রাম বলে।

অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ কি?

“বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংকেত বা নেমোনিক (ADD, SUB, SUM ইত্যাদি) ব্যবহার করে যে ভাষায় প্রোগ্রাম রচনা করা হয়, তাকে অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।”

এ ভাষায় লিখিত প্রোগ্রামকে সোর্স বলে।

হাই-লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ কি?

“প্রোগ্রাম রচনার জন্য সহজে বোধগম্য সার্বজনীন ভাষা যেখানে স্বাভাবিক ভাষার অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাকে হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।”

এ ভাষায় মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ ও অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজের অসুবিধাসমূহ দূর করা হয়েছে। এ ভাষায় লিখিত প্রোগ্রামকেও সোর্স প্রোগ্রাম বলে।

এর মধ্যেও আরও ৩ ধরণের ল্যাঙ্গুয়েজ বিদ্যমান, যেমনঃ

  1. Third Gen Languages.
  2. Fourth Gen Languages.
  3. Fifth Gen Languages.

প্রথম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা(First Generation of Programming Language):

মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজকে প্রথম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।

“বিভিন্ন ইনস্ট্রাকশনসমূহকে opcode এ পরিণত করে প্রোগ্রামিং করা হলে তাকে প্রথম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।”

একে লো লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ ও বলা হয়।

দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা(Second Generation of Programming Language):

অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজকে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।

“Binary opcode কে Simple symbol- এর মাধ্যমে Represent করে Instruction হিসেবে ব্যবহার করে প্রোগ্রাম ডিজাইন করা হলে, তাকে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।”

তৃতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা(Third Generation of Programming Language):

মিড লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজকে তৃতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে

“অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ ও হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজকে Closely represent করে এরূপ ভাষায় ইনস্ট্রাকশনসমূহকে ব্যবহার করে প্রোগ্রাম ডিজাইন করা হলে তাকে তৃতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা বলে।”

সি প্রোগ্রামিং কে মিড লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।

চতুর্থ প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা(4th Generation of Programming Language):

হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজকে চতুর্থ প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা বলে।

“মানুষের জন্য সহজ ও সার্বজনীন ইনস্ট্রাকশনকে ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং ডিজাইন করলে তাকে চতুর্থ প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা বলে।”

যেমন – FORTRAN, BASIC, COBOL ইত্যাদিকে হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ বলে।

পঞ্চম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা(5th Generation of Programming Language):

“Data Base Management সংক্রান্ত ল্যাঙ্গুয়েজসমূহকে পঞ্চম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ভাষা বলে।”

ডাটাসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের অপারেশন যেমন- Traversing, Searching, Shorting, Indexing, Inserting ইত্যাদি অপারেশন Effectively প্রোগ্রাম করার জন্য DBM সংক্রান্ত ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।

যেমন – Fox pro, SQL, Oracle ইত্যাদি পঞ্চম প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ।

প্রোগ্রামিং সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ

আমি ধরেই নিচ্ছি আপনি প্রোগ্রামিং জগতে একেবারেই নতুন। প্রোগ্রামিং সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই হয়তো আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ছেন।

প্রোগ্রামিং খুবই মজার জিনিস।

আপনি যদি ভাবেন প্রোগ্রামিং শিখবেন বা অলরেডি প্রোগ্রামিং শিখছেন তাহলে আপনাকে ভালো ভাবে মনোযোগের সাথে শিখতে হবে।

অনেকেই আছে যারা কয়েক দিন বা মাস খানেক পর প্রোগ্রামিং এ বোরিং ফিল করে এবং দিন শেষে প্রোগ্রামিং কন্টিনিউ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়না।

আপনি যদি সত্যিই প্রোগ্রামিং শিখতে চান তাহলে শেখার জন্য শিখবেন না মজার জন্য শিখুন।

কারন যখন আপনি মজা হারিয়ে ফেলবেন মনে রাখবেন ঠিক তখনই আপনি প্রোগ্রামিং থেকে অনেক দূরে ছিটকে যাবেন। তাই বলছি প্রোগ্রামিং মজা নিয়ে শিখুন।

চলুন দেখে নেয়া যাক,

কিভাবে আপনি প্রোগ্রামিং শেখার সময় মোটিভেটেড থাকবেন?

  • প্রোগ্রামিং করার সময় সোশ্যাল মিডিয়া একদম চেক করবেন না।
  • প্রোগ্রামিং করার মাঝে মাঝেই চা বা কফি খেতে পারেন।
  • কোন প্রবলেম বা এরোর আসলে তা সল্ভ করেই টেবিল থেকে উঠবেন।
  • সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জায়গায় বসার চেষ্টা করবেন।
  • প্রোগ্রামিং এ যেকোন একটা কাজ একবারে শিখুন।
  • বার বার প্র্যাকটিস করতে পারেন।
  • প্রোগ্রামিং করে বিভিন্ন ছোট খাটো গেইম বানিয়ে মজা নিতে পারেন।
  • কেন প্রোগ্রামিং শিখছেন? কি আপনার গোল তা মনে করবেন।
  • ১ ঘন্টা পর পর বিরতি নিবেন অবশ্য ৫ মিনিটের বেশি নয়।
  • এক টানা ৪-৫ ঘন্টা প্রোগ্রামিং করবেন না।
  • রাত জেগে প্রোগ্রামিং করবেন না।
  • অবশ্যই সকালে বা ভোরের দিকে প্রোগ্রামিং উপকারি।
  • বাস্তব জীবনে সব কিছু প্রোগ্রামিং এ করা যায় ভাববেন।

এই কয়েকটি টিপ’স ফলো করলেই আপনি প্রোগ্রামিং এ নিজের মোটিভ খুজে পাবেন এবং প্রোগ্রামিংকে পেশা হিসেবে নিতে পারবেন।

শেষ কথাঃ

আশাকরি এই লেখাটি আপনাদের উপকার করবে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এই টপিকের কোন প্রশ্ন থাকলে এবং আমাদের সর্ম্পকে যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *