গর্ভকালীন গোপনাঙ্গের যত্ন নেওয়ার ৯টি গোপন কথা ।। গর্ভকালীন বা প্রেগন্যান্সিকালীন সময় প্রতিটি মায়েদের শরীরের প্রতি সর্তক থাকা বাঞ্ছনীয়। এসময় গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে প্রচুর পরিবর্তন দেখা দেয়। ভিতরে, বাইরে সবকিছু থেকে শরীর যেন মা হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পুরোদমে। শরীরের ভিতরের সব পরিবর্তন ধরা পড়ে ডাক্তারদের অভিজ্ঞ চোখে আর আল্ট্রা সাউন্ডের পর্দায়। আর বাইরের পরিবর্তন বলে দিতে তো আয়না আর প্রিয়জনেরাই যথেষ্ট।
ওজনের হেরফের, স্পর্শকাতর ও ভারী ব্রেস্ট এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যপ্রদেশ (পেট) নিয়ে আপনি বেশ ওয়াকিবহাল, কিন্তু হবু সন্তানের পৃথিবীতে ঢোকার প্রবেশদ্বার সন্তানটি কেমন আছে বা তার দেখভাল ঠিকমতো হয় কি না সে খবর রাখেন? হেঁয়ালি না করে আগত সন্তানের মায়ের প্রতি যন্ত্রশীল হন।
আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক লক্ষণ ১০টি কি! মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন
এমনিই হবু মা হিসেবে নানারকম আদেশ, উপদেশ আর শাসনের ঠেলায় আপনি অস্থির। যাই হোক, কথা বলছি হবু মায়ের যোনিপথ বা ভ্যাজাইনা নিয়ে। (how to take care of vagina during pregnancy in bangla, gorbhabosthay vaginar jotno. How to take care of Vagina during Pregnancy in Bengali.)
গর্ভকালীন গোপনাঙ্গের যত্ন নেওয়ার ৯টি গোপন কথা
গর্ভাবস্থায় গোপনাঙ্গের যত্ন (How to Take Care of Vagina during Pregnancy in Bengali) গোপনাঙ্গ হিসেবে গোপনে থাকলেও শিশুর জন্মের ক্ষেত্রে এই ভ্যাজাইনার অবদান কতখানি তা কী আর বলতে হয়? প্রাণ সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম ও সেই প্রাণকে নিরাপদে পৃথিবীর আলো দেখানো, শুরু এবং শেষ, দুই ক্ষেত্রেই যোনিপথের গুরুত্ত্ব অনস্বীকার্য।
- আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক লক্ষণ ১০টি কি! মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন
- আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করুন ঘরে বসেই – জানুন এ টু জেড
ভাবে প্রতিটি মানুষ স্বাভাবিক প্রসবে শিশু মায়ের গর্ভ থেকে এই যোনিপথের মাধ্যমেই বেরিয়ে এসে পৃথিবীর আলোর মূখ দেখেন। একে জন্মদ্বার” বা পৃথিবীতে ঢোকার প্রবেশদ্বার” বললে কি ভুল বলা হয়?
আপনি তো ভুগবেন বটেই, পরোক্ষ প্রভাবে কষ্ট পেতে পারে গর্ভের সন্তানটিও। চোখে দেখতে না পেলেও, নিজের গোপনাঙ্গের যত্নে কোনও ক্রটি হতে দেবেন না। কীভাবে দেখভাল করবেন নিজের গোপনাঙ্গের ও কীভাবে এড়িয়ে যাবেন ইনফেকশনের রক্তচক্ষু! এই নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
চলুন একনজরে দেখে নিন
গর্ভাবস্থায় যোনিপথ বা ভ্যাজাইনায় কী কী পরিবর্তন ঘটে? (Changes in vaginal health during pregnancy)
১. ইউরিন ইনফেকশন
ইউ টি আই প্রবণ (Increased risk of UTI) গর্ভাবস্থায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (Urinary Tract Infections) হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়। বেড়ে যাওয়া জরায়ু মূত্রথলিতে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। এর পরোক্ষ প্রভাবে মূত্রথলি সবটা বর্জ্য শরীরের বাইরে বার করতে পারে না। এই কারণে ইউ টি আই বা ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। পরোক্ষ প্রভাব পরে ভ্যাজাইনার ওপরেও।
২. ভ্যারিকস ভেনস
ভ্যারিকস ভেনস-এর উঁকি (Appearance of Varicose Veins) রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ভ্যারিকস ভেনস (Varicose Veins) দেখা দিতে পারে যোনিতেও। পায়ে এদের আত্মপ্রকাশ আপনি স্বচক্ষেই দেখতে পাবেন। যোনিতেও যে এই ভেনস দেখা দিয়েছে, তা হয়তো আপনাকে জানাবেন আপনার ডাক্তার বা বিশেষ প্রিয়জন।
৩. অতিরিক্ত যোনিস্রাব
অতিরিক্ত যোনিস্রাব (Increased vaginal discharge)- গর্ভাবস্থায় যোনিস্রাব (vaginal discharge)-এর পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। হবু মায়ের শরীরে হরমোনের দাপাদাপিই এর প্রধান কারণ বলা যায়। মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় তা প্রভাব ফেলে যোনিস্রাবের পরিমাণে।
- আরো পড়ুন:প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করুন ঘরে বসেই – জানুন এ টু জেড
- আরো পড়ুন: প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক লক্ষণ ১০টি কি! মাসিক মিস হলে মিলিয়ে নিন
হবু মায়ের শরীরে রক্ত চলাচল ও রক্তের পরিমাণ দুইই বেড়ে যায়, এর ফলেও অতিরিক্ত স্রাব হয়ে থাকে। এই স্রাব সাদাটে, পাতলা দুধের মতো হয়ে থাকে। এর পোশাকি নাম লিউকোরিয়া (leukorrhea)।
এর গন্ধও একটু অন্যরকম হয়ে থাকে। তবে, তা দুর্গন্ধ নয়। ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা যোনিস্রাবের মাধ্যমে শরীর যোনিপথকে ভিতর থেকে সুস্থ ও পরিষ্কার রাখে। যদি আপনি কর্মরতা হন এবং আপনাকে বাইরে বেরোতে হয়, তা হলে এসময় আপনি উন্নত মানের নরম প্যান্টি লাইনার ব্যবহার করতে পারেন।
৪. গন্ধে পরিবর্তন
গন্ধে পরিবর্তন (Change in smell) রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে যোনিপথের গন্ধে পরিবর্তন আসে। তবে সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন থাকতে হবে আপনার। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই অপস্কিার না থাকে।
৫. ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস(Bacterial vaginosis (BV))-> গবেষকদের মতে, গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ১০-৩০%-এর এই ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। যোনিতে উপকারী ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সাম্য বজায় থাকে না বলেই, গর্ভবতী মহিলারা যোনির এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এই অসুস্থতার যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে, সময়ের আগে প্রসববেদনা ওঠা, বাচ্চার ওজন কম হওয়া, এমনকি গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
৬. রং পরিবর্তন
রং পরিবর্তন (Color change)- শরীরে হরমোনের আধিক্য এবং অতিরিক্ত রক্ত চলাচলের প্রভাবে বদল হয় যোনির রং। যোনিমুখের ঠোঁটের মতো অংশ বা লাবিয়াম (labium) এবং যোনিদ্বার বা ভাল্ভা(vulva), দুয়েরই রং বদলে যায়। তা হতে পারে ঘন নীল ঘেঁষা কোনও রং। বাচ্চার জন্মের পর যোনি আবার স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।
৭. ইস্ট ইনফেকশন
ইস্ট ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া (Increased chance of Yeast Infections)দেখা গেছে, হবু মায়েদের যোনি ইস্ট ইনফেকশন প্রবণ অঞ্চল হয়ে পড়ে। যথাযথ পরিচ্ছন্নতা এবং গোপনাঙ্গের pH ব্যালান্স নিয়ন্ত্রণে রাখলে এই ইনফেকশন রোধ করা সম্ভব।
৮. অবাঞ্ছিত চুল
অবাঞ্ছিত চুলের আধিক্য (Unwanted hair) শরীরের অভ্যন্তরে ঘটা সব কারসাজির ফলে গোপনাঙ্গে বৃদ্ধি হয় অবাঞ্ছিত চুলেরও। খেয়াল রাখতে হবে অবাঞ্ছিত চুল কেটে ফেলতে হবে।
৯. স্পর্শকাতর যোনি
স্পর্শকাতর ভ্যাজাইনা (Sensitivity in vagina) এসময় ভ্যাজাইনা বা যোনি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। ফুলে থাকা এবং ভারী হয়ে থাকার অনুভূতিও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসময় আপনি কি করবেন? কোন চিন্তা না করে প্রিয়জনের সাথে বা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিন। মনে রাখবেন গর্ভকালীন সময় কোন কিছু নিয়ে অবহেলা করা যাবে না।
আরো পড়ুন:নারীর পাঁচটি স্বাস্থ্য সমস্যা
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।