রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন-ডি বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা। ভিটামিন-ডি একটি চর্বিতে দ্রবনীয়, যা শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন-ডি অস্থির কাঠামো তৈরি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধিতে প্রভূত ভূমিকা রাখে।
নাম শুনে ভিটামিন মনে হলেও ভিটামিন-ডি আসলে একটি স্টেরয়েড হরমোন। অন্যান্য ভিটামিন যেখানে এন্টি অক্সিজেন বা কো-এনজাইম হিসাবে কাজ করে, ভিটামিন-ডি (স্টেরোয়েড হরমোন) জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ দেহের প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় থাকে।
- আরো পড়ুন:যেসব খাবারে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে
- আরো পড়ুন:রক্তের অজানা কিছু তথ্য জেনে রাখুন
- আরো পড়ুন:পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধি, ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
প্রাণীজ ও উদ্ভিদজাত স্টেরল ও ফাইটোস্টেরল হতে সূর্যালোকের অতি বেগুনি রশ্মি দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে দেহে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। ভিটামিন ডি-২ ও ভিটামিন ডি-৩ মানবদেহে থাকে।
বড়দের যেমন ভিটামিন খুবই দরকার, শিশু-কিশোরদের শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি’র উপস্থিতি তাদের শরীর গঠন, রোগ প্রতিরোধ-ক্ষম সুস্বাস্থের অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠার জন্যে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
বাড়ন্তকালে শিশুদের দৈহিক কাঠামো তৈরি করার অন্যতম কাঁচামাল ক্যালসিয়াম- যা শরীরের ভিটামিন ডি দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, দৈহিক স্থূলতা সবকিছু ভিটামিন-ডি এর সাথে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই কম বয়সী শিশু-কিশোরদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস ক্রমশ বেশি মাত্রায় দেখা দেয়ার পিছনে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে। ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে কিছু কিছু ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
এটা এখন নিশ্চিতভাবে জানা গিয়েছে যে, ভিটামিন ডি’র অভাব থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর ঘাটতির সাথে তাল মিনিয়ে কমতে থাকে।
ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভিটামিন-ডি এর ভূমিকা
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অন্য আরেকটি গবেষণায় কোভিড-১৯ এর হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করার কথা বলেছেন এবং ভিটামিন-সি, ভিটামিন ডিসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, এমন খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছেন।
এর সূত্র ধরে, ডায়াবেটিস রোগী তো বটেই, অন্যদেরও এ কোভিড ১৯ মহামারীকালে অন্যান্য উপকারী খাদ্য উপাদান গ্রহণে উদ্যোগী হওয়ার সাথে সাথে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে (ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানের তালিকা যুক্ত করা হলো)।
কিন্তু বাংলাদেশে প্রচুর সূর্যালোক থাকার পরও অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন-ডি এর ঘাটতিতে ভুগছেন এবং তাদের ভিটামিন ক্যাপসুল সেবেনের পরামর্শ দিতে হচ্ছে।
ভিটামিন-ডি এর উৎস
শরীরের ভিটামিন-ডি এর চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি ত্বকে সূর্যরশ্মি পতিত হওয়ার কারণে তৈরি হয়। খাবারের মধ্যে আছে স্যালমন ফিশ, সার্ডিন, টুনা, ম্যাকারেল, মাশরুম, ডিম (সিদ্ধ), টক দই, গরুর কলিজা।
সূর্যালোক থেকে ভিটামিন-ডি পেতে হলে মার্চ-অক্টোবর মাসের (অন্যান্য মাসগুলোতে আরো বেশি সময় ধরে) প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘন্টা রোদ পোহাতে হবে যখন শরীরের ১৮ শতাংশের বেশি অংশে রোদ লাগবে।
১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৬০০ আইউ এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সিদের ৮০০ আইউ ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা দরকার।
ভিটামিন-ডি ওষুধ হিসাবে খেতে হবে কাদের
- ১। নবজাতক যারা শুধুই মায়ের দুগ্ধ পান করছে ও যারা ১০০০ মিলিলিটারের কম শিশু খাদ্য গ্রহণ করে।
- ২। শিশু-কিশোর যারা অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নগরে বা অস্বাস্থ্যকর শহরে (ঢাকা অন্যতম) বসবাস করছে।
- ৩। দৈহিক স্থূল শিশু-কিশোর যাদের ত্বকের বিভিন্ন অংশে মকমলের মতো কালো অংশ দেখা দিচ্ছে।
- ৪। ধর্মীয় বা অন্য কারণে পোশাকে প্রায় সারাদেহ আবৃত শিশু-কিশোর।
- ৫। খাদ্যনালীর সমস্যার কারণে হজম ও বিপাকীয় কার্যক্রম হ্রাস পেলে।
- ৬। প্রাতিষ্ঠানিক জীবন যাপন (হেস্টেল, হাসপাতাল বা অফিস) যাতে রোদে যাবার সুযোগ কমে যায়।
- ৭। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, এমন হলে।
- আরো পড়ুন:শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও ৬ কারণে হতে পারে এইডস
- আরো পড়ুন: জেনে রাখুন কিডনি রোগের ঘরোয়া ৮টি নিয়মে মিলবে সুরক্ষা
- আরো পড়ুন:শিশুর ডায়রিয়া হলে কি করণীয়?
ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি খুব বেশি হলে ৪০ হাজার আইউ সপ্তাহে এবং পরবর্তীতে মাসে একটি করে ভিটামিন-ডি ক্যাপসুল খেয়ে যেতে হবে। ঘাটতি কম হলে ২০ হাজার আইউ ক্যাপসুল যথেষ্ট হতে পারে।
ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি থাকলে তো বটেই, অন্য ক্ষেত্রেও সকলকে সূর্যালোকে যেতে হবে নিয়মিত।
দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহে ভিটামিন ডি’র উপস্থিতি খুবই কম, তারপরও যেসব খাদ্যে ভিটামিন-ডি এর কিছু পরিমাণে উপস্থিতি আছে (উপরের তালিকা ভুক্ত) তা যতটা সম্ভব নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সুস্থ সবল শিশু-কিশোর আগামী দিনের মেধাবী ও কর্মঠ জাতি গঠন করবে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।