জেনে নিন ইউরোপে প্রবেশ করতে যেসব ভুল করা চলবে না । আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ইউরোপে আসার স্বপ্নের ঘোরে অনেকেই ভুলে যান ঠিক-ভুলের ভেদাভেদ। কোন ভুলগুলো নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত, তা আপনাদের জানাচ্ছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।
- আরো পড়ুন: যুক্তরাজ্যে কেন পড়াশোনা করবেন?
- আরো পড়ুন: ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীরা কেমন আর্থিক সুবিধা পায়?
- আরো পড়ুন: পর্তুগালে পরিবার নিতে কি প্রয়োজন
ইউরোপে আসার জন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রায়ই নানা ধরনের ভুলপথে যেতে দেখা যায়। কেউ ভুয়া নথির ভরসা করেন, আবার কেউ দালালচক্রের পাল্লায় পড়ে যান। কোন ভুলকাজ থেকে কীভাবে সতর্ক থাকবেন? ধরা পড়লে শাস্তি কেমন হবে, এইসব প্রশ্নের উত্তর এই প্রতিবেদনে।
ইউরোপে প্রবেশ করতে যেসব ভুল করা চলবে না
মানবপাচার
মানবপাচার রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে ও নির্দিষ্ট প্রকল্প গঠন করেছে। এর মধ্যে আছে তাদের ‘টুগেদার এগেনস্ট ট্রাফিকিং ইন হিউম্যান বিংস’ প্রকল্পটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রদের নিজস্ব আইন বাস্তবায়নে জড়িত আছে সরকার ছাড়াও বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও নাগরিক সংস্থারা। আছে সুশীল সমাজের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘ইইউ সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফর্ম’।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নতুন করে গঠিত হয় মানবপাচার রোধে ইইউ স্ট্র্যাটেজি, যার মূলে রয়েছে পাঁচটি উদ্দেশ্য।
১. মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা ও নিরাপত্তা দেওয়া,
২. মানবপাচার রোধে আরো সংগঠিত কাজে নামা,
৩. মানবপাচারের দায়ে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি দেয়া ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি,
৪. ইইউ সংস্থা ও রাষ্ট্রদের মধ্যে সমন্বয়ের উন্নতি,
৫. কীভাবে মানবপাচার থামানো যায়, তা নিয়ে আরো গভীর গবেষণা।
অভিবাসী পাচার
কোন কাগজপত্র ছাড়াই ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে আসে বেশ কিছু দালালচক্র। তা করতে ভুয়া কাগজ ও পাসপোর্টের সাহায্য নেয় তারা। এর ফলে নানাধরনের বিপদসৃষ্টি হতে পারে।
এই ধরনের অভিবাসন রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি চালু করেছে ইউরোপ। ইইউ পাসপোর্টধারী বা ইউরোপে বাস করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই করা হয়। আছে মুখ চেনার ‘ফেশিয়াল রিকগনিশন’ পরিষেবা। এমন পথে ইউরোপে আসতে গিয়ে ধরা পড়লে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৬ টি সদস্যরাষ্ট্রে আছে কড়াকড়ি। ডেনমার্কের জন্য নিয়ম আলাদা।
এক্ষেত্রে,
১. দালাল যদি টাকার বিনিময়ে অভিবাসন করায়, তাহলে দালালের কারাবাস হতে পারে,
২. ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করা হবে,
৩. ধরা পড়ে যাওয়ার সময়ের কাজ হারাবেন অভিবাসনপ্রত্যাশী ও দালাল।
অভিবাসনপ্রত্যাশী যদি ধরা পড়েন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। কিন্তু সাধারণত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সহানুভূতির চোখে দেখে থাকে কিছু ইইউ রাষ্ট্র। তখন অস্থায়ী থাকার অনুমতি দেয়া হয়, যদি দালালদের ধরিয়ে দিতে পুলিশ বা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে।
অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে ইউরোপে প্রবেশ
অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনও ইইউবহির্ভূত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে ইউরোপে আসতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মাথায় রাখা দরকার। নাহলে অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে চিহ্নিত হবার আশঙ্কা থাকে, যার ফলে ফিরে যেতে হতে পারে নিজের দেশে।
অপ্রাপ্তবয়স্করা ইউরোপে একা আসলে কর্তৃপক্ষের তরফে নিরাপত্তা পেতে পারেন ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না কোনও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান পাওয়া যায়। কোন সমাধানটি সঠিক তা বিবেচনা করতে মাথায় রাখা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা ঠিক কী কী। একবার তা নির্ধারিত করা গেলে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে নিজদেশে তাকে পাঠানো হবে কি না। অন্য পন্থা হচ্ছে ইউরোপে তাকে বৈধভাবে থাকার অনুমতি দেয়া ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো।
এক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্তের মূলে থাকে ২০১৭ সালে প্রণয়ন হওয়া ইইউ’র শিশু ও অভিবাসী শিশু সুরক্ষা নীতিমালা।
অবৈধভাবে ইউরোপে থেকে যাওয়া
যদি কোনো ব্যক্তির ইউরোপে থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ও তা উপেক্ষা করে তিনি থেকে যান, সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি একজন অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে গণ্য হবেন। এক্ষেত্রে ইউরোপ ছেড়ে যেতে হবে তাকে।
অবৈধভাবে যদি কোনও ব্যক্তি ইউরোপে বসবাস করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে স্বেচ্ছায় নিজের দেশে প্রত্যর্পণ করতে পারেন তিনি। বা অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশে যদি সেই ব্যক্তির থাকার অনুমতি থাকে, তাহলে সেই দেশে পাঠানো হবে তাকে।
সাধারণত দেশে ফিরে যেতে বা ইউরোপ পরিত্যাগ করতে এক থেকে চার সপ্তাহের সময় দেয়া হয় কোনো অনিয়মিত অভিবাসীকে। এর চেয়ে কম সময়েও কোনো অনিয়মিত ব্যক্তিকে দেশ ছেড়ে যেতে নির্দেশ দিতে পারে ইউরোপ।
সেক্ষেত্রে বিবেচ্য হয়
১. দেশের সাধারণ জীবন যাপন, মানুষের ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতি এই ব্যক্তি কোনও ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে কি না,
২. সেই ব্যক্তির ইউরোপের দেশে থাকার আবেদন মিথ্যার ভিত্তিতে করা হয়েছিল কি না,
৩. সেই ব্যক্তির থাকার আবেদনে কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল না,
৪. সেই ব্যক্তি দেশে না ফিরলে কর্তৃপক্ষের হাত থেকে পালিয়ে যেতে পারে কি না।
এমন ক্ষেত্রে সাত দিনেরও কম সময় দেয়া হয় দেশে ফিরে যেতে। বেশিরভাগ ইউরোপের দেশে দেশে ফিরে যেতে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য ব্যবস্থা করতে হয় নিজেকেই। কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষের তরফে প্লেনের টিকেট দেওয়া হয়। দেওয়া হয়ে থাকে দেশে ফিরে নতুন জীবন শুরু করার জন্য কিছু টাকাও।
কর্তৃপক্ষকে সহায়তা না করলে বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সরকারের তরফে আটক করে রাখা হতে পারে সেই অভিবাসীকে, যতদিন না পর্যন্ত নিজের দেশে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
সেই সময়েও একজন অনিয়মিত অভিবাসী চাইলে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা গৃহীত হলে থাকার অনুমতি মিলতে পারে।
যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন অনিয়মিত অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তিনি সরকারের কাছ থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন।
- আরো পড়ুন: আমেরিকা যাওয়ার সহজ ৮ উপায়
- আরো পড়ুন: মুসলিম শাসিত প্রথম শহর মিশিগানের হ্যামট্রামক
- আরো পড়ুন: যুক্তরাজ্যে কেন পড়াশোনা করবেন?
এই অধিকারগুলো হচ্ছে
১. আইনি সহায়তা,
২. সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার অধিকার,
৩. ভাষাগত সহায়তা,
৪. নিজের পরিবারের প্রতি সম্মানের অধিকার,
৫. প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকা ও তাদের সাথেই একসাথে দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি করার অধিকার,
৬. জরুরি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা,
৭. শিশুদের ক্ষেত্রে মৌলিক শিক্ষার অধিকার,
৮. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, গর্ভবতী নারী, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও বয়স্কদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অধিকার।
কিন্তু এই ভাবে দেশে প্রত্যর্পণের পরেও ইউরোপে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে, যদি না অনিয়মিত অভিবাসী ব্যক্তির ওপর কোনো ধরনের ‘এন্ট্রি ব্যান’ বা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়ে থাকে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।