জেনে নিন কুষ্ঠ রোগ কেন হয়? আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। কুষ্ঠ বা হ্যানসেন রোগটি ম্যাইকো ব্যাকটেরিয়াম লেপরের কারণে ঘটে থাকে। এটি ত্বক ও স্নায়ুর একটি সংক্রমণ। এই ব্যাধি ত্বক, শ্লৈস্মিক ঝিল্লি, পেরিফেরাল স্নায়ু, চোখ ও শ্বাসযন্ত্র প্রভাবিত করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, কুষ্ঠ সম্ভবত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। আবার অনেকেই মনে করেন, এটি ছোঁয়াচে বলে একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক এক সংস্থার মতে, দেশে এখনো বছরে নতুন করে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়।
এ রোগে আক্রান্ত হলে কেবল শারীরিক যন্ত্রণাই নয়, মানসিক ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হতে হয় রোগীকে। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে কুষ্ঠ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য একটি রোগ।
- আরো পড়ুন: হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার উপসর্গ, কী করবেন?
- আরো পড়ুন: লাল মাংসে কি কোলন ক্যান্সার হয়?
- আরো পড়ুন: আর্থ্রাইটিস রোগ হতে পারে যে ৪ কারণে
কুষ্ঠ রোগ কেন হয়?
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ কী?
১. চামড়ায় ফ্যাকাশে দাগ-ছোপ দেখা দেয়।
২. ত্বকে ছোট ছোট ফোঁড়ার মতো হয়।
৩. চামড়া শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়।
৪. পায়ের পাতার নিচের অংশে ঘা হয়।
৫. মুখের বা কানের কিছু স্থানে ফুলে ওঠে।
৬. চোখের পাপড়ি ও ভ্রু পড়ে যায়।
৭. সংক্রমিত স্থান অসাঢ়তা অনুভব ও ঘাম হয়।
৮. অনেকে পঙ্গু হয়ে যান।
৯. পেশী দুর্বল হয়ে যায়।
১০. মুখের নার্ভ বা স্নায়ুতে প্রভাব পড়ায় অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে।
কুষ্ঠ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে-
১. হাত-পা অকেজো হয়ে যায়।
২. আঙুল ও পা ছোট হয়ে যেতে পারে।
৩. পায়ের আলসার বা ঘায়ের কারণে তা কাটা পড়ে।
৪. নাক বিকৃত হয়ে যায়।
৫. চামড়ায় জ্বালা-যন্ত্রণা হয়।
কুষ্ঠরোগ হওয়ার কারণ কী?
কুষ্ঠরোগ যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, সেটি আমাদের পরিবেশেই থাকে। জিনগত পরিবর্তন ও বৈচিত্র কুষ্ঠরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে কুষ্ঠ রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া।
কুষ্ঠরোগ নির্ণয় করা হয় কীভাবে?
কুষ্ঠ রোগীর ত্বকের রং পরিবর্তন হয়। ত্বকের আসল রঙের চেয়ে বিভিন্ন স্থানে গাঢ় বা হালকা রং দেখা দেয়। এই ছোপগুলো লালচে হয়ে থাকে। এই রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসক ত্বক বা নার্ভ বায়োপসি করেন।
কুষ্ঠ রোগ একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হলেও, এটি ততটা সংক্রামক রোগ নয়। কুষ্ঠ রোগের ফলে খুব কমই মৃত্যু হতে দেখা যায়। এক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণের কারণে এই কুষ্ঠ রোগ হয়।
কুষ্ঠ রোগ কী ছোঁয়াচে?
কুষ্ঠ রোগ কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবুও এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে সীমাহীন যন্ত্রণা। কুষ্ঠ রোগী লজ্জা, ভয় ও সামাজিক বিপর্যয়ের কারণে এই ব্যাধি লুকিয়ে রাখেন।
রোগী নারী হলে এই সমস্যা আরো বেশি বেড়ে যায়। শ্বেতী রোগে আক্রান্ত নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা হয়। চিকিৎসকদের মতে, এ রোগটি সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে এমন হয়। পশ্চিমা দুনিয়ায় এ নিয়ে সমস্যা নেই। চিকিৎসাযোগ্য রোগ এটি। ওষুধে এর চিকিৎসা রয়েছে, শল্যচিকিৎসাও আছে।
- আরো পড়ুন: পায়ের যত্নে পেডিকিউর
- আরো পড়ুন: জিরা ত্বক উজ্জ্বল ও টানটানে রাখবে
- আরো পড়ন: হাত–পায়ের কালো দাগ দূর করুন ঘরোয়া উপায়
বাংলাদেশে কুষ্ঠরোগ নিয়ে কাজ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, বেশিরভাগ সমযেই একেবারে শেষ পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। এমনকি চর্মরোগ ও স্নায়ুর সমস্যা নির্ণয়েও দেরি করেন বলে আক্রান্তদের ভোগান্তি হয় অনেক বেশি।
আজ ‘আন্তর্জাতিক কুষ্ঠ দিবস’। ১৯৫৪ সাল থেকে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন রোগগুলোর একটি হলেও, দেশে এখনো এ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীর হার প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে একজনের নিচে নামিয়ে আনা। সেই বিচারে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।