বাড়তে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি!

শিক্ষা প্রতিনিধি :: দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সাধারণ ছুটি আবারো বাড়তে পারে। শহরের পাশাপাশি মফস্বল অঞ্চলেও কোভিড-১৯ এর ‘ডেল্টা’ ধরনের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চল্লিশের কম বয়সি শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। এসব কারণে কথা থাকলেও আগামী ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাও খুলতে পারে। তবে ছুটি বাড়লে সেটা কতদিনের জন্য বাড়বে, তা জানতে আরও ২/১ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কোভিড-১৯ বিদ্যমান অবস্থায় রোববার সরকার সার্বিক চলাচল সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত আবার বাড়িয়েছে। সোমবারও দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার ছিল প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ, যা গত ৪১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান গতকাল (সোমবার ৭ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমছে না, বরং ঊর্ধ্বমুখী মনে হচ্ছে। এবার জেলাপর্যায়ে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণ বেশি। সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ আছে। সে কারণে একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে কতদিনের জন্য ছুটি বাড়ানো হবে, সে ব্যাপারে দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একদিকে একটি শিক্ষাবর্ষের পুরোটা চলে গেছে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেনি। পাশাপাশি চলতি বছরেরও ৫ মাস চলে গেছে। এছাড়া শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি সুশীলসমাজের পক্ষ থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে চাপ আছে। এ পরিস্থিতিতে ২৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির নকশা উপস্থাপনা অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

পরদিন সংবাদ সম্মেলনে পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। এরপর ২৯ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় তিনি জানান, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত নয়। কেননা সরকারের কাছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক-সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ঈদযাত্রার কারণে সংক্রমণের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে আমরা যে তারিখই নির্দিষ্ট করি না কেন, অবস্থা অনুকূলে না এলে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে অবশ্যই আমরা কোনো ঝুঁকি নেব না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইনে কোনো এলাকার সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলে সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়। চলমান দ্বিতীয় ঢেউ মে মাসের শেষের দিকে নিম্নগামী ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এটি আবারো ঊর্ধ্বমুখী। নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সবচেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো।

যেহেতু কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ছে, তাই ভারতের মতো যাতে সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। আর এ কারণেই ছুটি বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। আরেক কর্মকর্তা জানান, আগামী ১৩ জুন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা খোলার কথা থাকলেও কেবল এসএসসি ও এইচএসসি এবং পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থীরা নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে আসত। আর অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে একদিন করে নেয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। কিন্তু নতুন পরিস্থিতি এই পরিকল্পনায়ও প্রতিবন্ধক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-চল্লিশোর্ধ্ব সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী টিকা পেলেও এর কমবয়সিরা কেউই পাননি। আগে গ্রামে-গঞ্জে করোনার প্রকোপ ছিল না বললেই চলে। তাই এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাগম হলে সংক্রমণের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হতে পারে। এরপরও এ নিয়ে জাতীয় কারিগরি কমিটির সাথে মন্ত্রণালয় কথা বলছে।

তাদের মতামতের ভিত্তিতে ২/১ দিনের মধ্যে ছুটি সংক্রান্ত নতুন বক্তব্য প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়। কোভিড-১৯ এর কারণে ১৪ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯৭ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চাচ্ছেন। ওই গবেষণা অনুযায়ী, করোনাভাইরাসজনিত বন্ধের কারণে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

 

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন।

এগুলো দেখুন

আসন ২৬ লাখ, পাশ করেছে ২১ লাখ! শূন্য থাকবে কত!

আসন ২৬ লাখ, পাশ করেছে ২১ লাখ! শূন্য থাকবে কত!

আসন ২৬ লাখ, পাশ করেছে ২১ লাখ! শূন্য থাকবে কত! এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় রেকর্ড পাশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *