ফিরোজ মাহমুদ :: নিসাব পরিমান মালের মালিক হওয়ার দিন থেকে এক বছর পুর্তির পর যাকাত ফরয হয়। যাকাতের সম্পদ সঠিকভাবে বন্টন করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই কারনে আল্লাহ তা’আলা নিজেই যাকাত ব্যয় বন্টনের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
যাকাত কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষন করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋনগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা-৬০) এ খাতের বাইরে অন্য অন্য খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
আসুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই ৮টি খাতের বিবরণ-
প্রথম খাত : ফকীর:- ফকীর হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমান সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকীর। যে সকল স্বল্প সামর্থ্যরে দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকীর। কারও মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।
দ্বিতীয় খাত : মিসকীন- মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই। যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যে সব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়ার করতে বাধ্য হয়। নিজের পেটের আহার ও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন, মিসকীন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমান অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, ফকীর বা মিসকীন যাকেই যাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক না হয়।
তৃতীয় খাত : আমলীল- ইসলামী সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উসর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান , সংরক্ষন ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো, এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়।
চতুর্থ খাত: মুআল্লাফাতুল কুলুব (চিত্তজয় করার জন্য) নতুন মুসলিম যার ঈমান এখনো পরিপক্ক হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহন করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। এ খাতের অওতায় দু:স্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের যাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহ্গন অভিমত প্রদান করেছেন।
৫ম খাত : ক্রীতদাস/ বন্দী মুক্তি এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/ বন্দী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যয় ভাবে কোন নিঃস্ব ও অসহায় বন্দী হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।
৬ষ্ঠ খাত : ঋনগ্রস্থ এ ধরনের ব্যক্তিকে তার ঋন মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে সেই ঋন গ্রস্থের ঋন পরিশোধ পরিমান সম্পদ না থাকা। আবার কোন ইমাম এ শর্তরোপও করেছেন যে, সে ঋন কোন অবৈধ কাজের জন্য যেমন মদ কিংবা নাজায়েয প্রথা অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।
৭ম খাত : আল্লাহর পথে সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/ সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে এ ছাড়া ইসলামের মহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারনে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এব যে আলিমগন দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না, তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে। প্রসঙ্গে সূরা বাকারায় মহান আল্লাহ বলেন- যাকাত এই সমস্ত লোকের জন্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফেরা করতে পারে না।
৮ম খাত : অসহায় মুসাফির- যে সমস্ত মুসাফির অর্থ কষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হওয়ার মত এবং বাড়ী ফিরে আসতে পারে এমন অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায়। আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন এবং হাদিস অনুযায়ী যাকাত আদায় করে সম্পদের পবিত্রতা অর্জনের তাওফিক দান করুন-আমীন।
চলবে…
লেখক :
মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুণ।