জেনে নিন পর্তুগালে পরিবার নিতে কি প্রয়োজন । আসুন এ বিষয়ে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেনজেনভুক্ত দেশ পর্তুগাল। ইউরোপের একেবারেই পশ্চিমে আটলান্টিকের পাড়ে অবস্থান। দেশটির তিনদিকে সমুদ্র (আটলান্টিক মহাসাগর আর একদিকে স্পেনের বর্ডার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি ইমিগ্রান্ট দেশ পর্তুগাল। পর্তুগালে কীভাবে মা-বাবা, স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে আসবেন সে বিষয়ে আজকের আলোচনা।
- আরো পড়ুন: ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা
- আরো পড়ুন: যুক্তরাজ্যে কেন পড়াশোনা করবেন?
- আরো পড়ুন: আমেরিকা যাওয়ার সহজ ৮ উপায়
পর্তুগালে পরিবার নিতে কি প্রয়োজন
পর্তুগালে পরিবার আনার শর্তসমূহ
প্রথমত: পর্তুগালে বৈধভাবে বসবাস করছেন তার ডকুমেন্টস থাকতে হবে। যেমন- কেউ স্টুডেন্ট হলে তার রেসিডেন্স পারমিট বা ভিসা থাকতে হবে অর্থাৎ অবশ্যই বৈধ হতে হবে দেশটিতে।
দ্বিতীয়ত: অভিবাসন অধিদফতরের বেঁধে দেয়া বাৎসরিক আয় থাকতে হবে। যেমন- যদি কেউ স্ত্রী আনতে চায় তাহলে তার বাৎসরিক আয় আইআরএস ৯০০০ ইউরো পরিমাণ থাকতে হবে। (২০১৯ জানুয়ারি হিসাব অনুযায়ী) অথবা স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে আনতে চায় তাহলে ৩০ শতাংশ আয় বেশি দেখাতে হবে। (বাচ্চার বয়স ১২ থেকে ১৭ হলে) আর বাচ্চার বয়স ০ থেকে ১১ হলে ২৫ শতাংশ বেশি আয় দেখাতে হবে।
যদি কেউ বেসিক বেতনের কাজ করে থাকেন তাহলে প্রতি প্রাপ্ত সদস্যের জন্য ১৬৫ ইউরো ১২ মাস করে বেশি দেখাতে হবে। আর অপ্রাপ্ত বাচ্চার জন্য বেসিক বেতন ১২৫ ইউরো ১২ মাসে আয় দেখাতে হবে।
আরো সহজভাবে বলা যেতে পারে স্ত্রী আনতে শুধু ৬০০ ইউরো, ১২ মাস; ১৬৫ ইউরো যত আসে, স্ত্রী ও বাচ্চা আনতে ৬০০ ইউরো। এখন যারা ব্যবসা করেন তাদের ক্ষেত্রেও একই ১২ মাসে এই পরিমাণ টাকা আয় দেখাতে হবে। বাবা-মার জন্য আবেদন করেন তাহলে বেসিক বেতনের সাথে দু’জন প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য যত অতিরিক্ত আয় দরকার সেটা দেখাতে হবে।
ফ্যামিলি রিইউনিয়নের অনুমতির জন্য যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
আবেদনকারীর জন্য লাগবে- যার জন্য আবেদন করবেন (স্ত্রী, মা-বাবা, বাচ্চা ইত্যাদি) তার পাসপোর্টের কপি, জন্ম নিবন্ধন অরজিনাল কপি, নিকাহনামা, বিবাহের সনদ অরজিনাল (স্ত্রী হলে), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট অরজিনাল।
উপরের ডকুমেন্টসগুলো প্রথমে নোটারি ট্রান্সলেট এবং ফরেইন মিনিস্ট্রি থেকে সত্যায়িত করে পর্তুগালে আনতে হবে। এরপর পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। তারপর সেগুলো নোটারি করতে হবে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে। পরে পর্তুগিজ ফরেইন মিনিস্ট্রি থেকে সত্যায়িত করতে হবে।
যে আবেদন করবে তার যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন (সেফ থেকে পারমিশনের জন্য) আইআরএস ডিক্লেরেশনের কপি, জব কন্ট্রাক্ট; সঙ্গে ৭৫০ ইউরো বেতন কমপক্ষে, লাস্ট ৩ মাসের বেতনের স্লিপ’ অ্যাক্ট ডিক্লারেশন, বাসার কন্ট্রাক্ট নম্বর, নো ডিভিডা ফিনাসেস (যাদের ব্যবসা দেখিয়ে আবেদন করবেন), নো ডিভিডা সেগুরান্স সোশ্যাল (যাদের ব্যবসা দেখিয়ে আবেদন করবেন)।
উল্লিখিত সমস্ত ডকুমেন্টস সেফ থেকে পারমিশন নেয়ার জন্য সাবমিট করতে হবে। উল্লেখ্য, যে সেফের ফাইল সামিশনের জন্য ৪ থেকে ৫ মাস পূর্বে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখতে হবে। সেফের পারমিশন রেডি হতে ৩ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পারমিশন হাতে পেলে তার পরের স্টেপ হলো অ্যাম্বাসিতে ফাইল সাবমিট করতে হবে।
বাংলাদেশে পর্তুগালের অ্যাম্বাসি না থাকার কারণে পারমিশন নিউ দিল্লি বরাবর আবেদন করতে হবে। অ্যাম্বাসি গিয়ে ভিসার আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন-
ভিসা আবেদন ফরম, সেনজেন ভিসার সাইজের ২ কপি সদ্য তুলে ছবি, যার জন্য আবেদন করবেন (স্ত্রী, মা-বাবা, বাচ্চা ইত্যাদি) তার পাসপোর্টের কপি, জন্ম নিবন্ধন অরজিনাল কপি, নিকাহনামা, বিবাহের সনদ অরজিনাল (স্ত্রী হলে), পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট অরজিনাল, আইআরএস ডিক্লারেশনের কপি, জব কন্ট্রাক্ট সাথে ৭৫০ ইউরো বেতনের স্লিপ, লাস্ট ৩ মাসের স্লিপ, অ্যাক্ট ডিক্লারেশন, বাসার কন্ট্রাক্ট নম্বর, (পূরণ করে নোটারি করে নিতে হবে)
আর যদি কেউ স্ত্রী সাথে উপস্থিত থাকেন তাহলে নোটারির প্রয়োজন নেই। সাইন করে দিলেই হবে। গত ৩ বছরের আইআরএস-এর কপি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট কমপক্ষে ৩ মাসের অথবা ৬ মাসের স্টেটমেন্ট। সেনজেন ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স কমপক্ষে ৬ মাসের। ইন্ডিয়ান ভিসার কপি এবং পাসপোর্টের ডাটা পেজ।
ইন্ডিয়ায় যাওয়ার পর কিছু কাজ আছে সেগুলে বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে এবং নিকাহনামা বাংলাদেশ দূতাবাস ইন নিউ দিল্লি ইন্ডিয়া থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। আর বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের মেয়াদ যদি কোনোভাবে ৬ মাসের বেশি হয় তাহলে দিল্লিতে জমা দেয়ার আগে বা যাওয়ার আগে একটা নতুন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তুলে সাথে নিয়ে যাবেন।
সেগুলো বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতি ডকুমেন্টস সত্যায়িত করতে ২০০ রুপি করে নেবে। আর সেনজেন ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স চাইলে বাংলাদেশ থেকে করে নিতে পারবেন। ইন্ডিয়া থেকেও করতে পারবেন। তবে ইন্ডিয়া থেকে করলেই ভালো। বাংলাদেশ থেকে খরচ পড়বে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর নিউ দিল্লি থেকে পড়বে ৫০০০ রুপির মতো। আর নিউ দিল্লিতে অ্যাম্বাসি ফি ৯২০০ রুপির মতো (ভিএফএস এর সার্ভিস চার্জসহ)।
কীভাবে যাবেন? কোথায় সাবমিট করবেন? আগে কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয় কিনা?
নিউ দিল্লি যাওয়ার পর সাধারণত পাহাড়গঞ্জ, আরাকাশন রোড, মেইন বাজার রোডের দিকে হোটেল নিয়ে থাকে। হোটেলের খরচ প্রতি রাতে ৭০০ থেকে ১০০০ রুপি এসিসহ। নন এসি ৬০০ থেকে ৭০০ রুপি হয়ে থাকে।
নিউ দিল্লির সবকটি দেশের সম্মিলিত ভিসা সেন্টারের নাম ভিএফএস গ্লোবাল। ভিএফএস এ যাওয়ার আগে অবশ্যই ভিএফএস পর্তুগাল ইন নিউ দিল্লি সাইটে রেজিস্ট্রার করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নেবেন যেদিন আপনি যেতে চাচ্ছেন। সব দেশের দূতাবাসের ফাইল তারা জমা নেন। ওই দেশের দূতাবাসগুলোতে ফাইলগুলো তারা সাবমিট করে থাকেন। যেহেতু পর্তুগালে আপনি জমা দেবেন সেহেতু আপনাকে ভিএফএস-এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে। সরাসরি দূতাবাসে যাওয়ার দরকার নেই।
আপনি দিল্লিতে যেখানেই হোটেল নেন না কেন শিবাজী স্টেডিয়াম মেট্রো লাইন বললে যেকোনো অটো, ট্যাক্সি বা নিজে চাইলে মেট্রো দিয়ে যেতে পারেন। শিবাজী মেট্রো স্টেশনের ভিতরে হচ্ছে ভিএস এস গ্লোবাল ভিসা সেন্টারের মেইন অফিস। আপনি সাথে দরকারি ডকুমেন্টস ছাড়া কোনো প্রকার ইলেক্ট্রনিক জিনিস যেমন- ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ইত্যাদি সাথে নিতে পারবেন না। টোকেন কাউন্টার থেকে নিতে হবে। সাবমিশনের জন্য টোকেন জি সংগ্রহ করবেন।
তারপর সাবমিশন কাউন্টারে জন্য ২য় সিকিউরিটিকে আপনার টোকেন এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে ভেতরে গিয়ে বসে আপনার সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পর্তুগালের কাউন্টারে বেশি ভিড় থাকে না। আপনার সিরিয়াল ডাকলে আপনি গিয়ে জমা দিয়ে পেমেন্টের জন্য অপেক্ষা করবেন। কাউন্টার থেকে পেমেন্ট স্লিপ নিয়ে কাউন্টার যাবেন; যদি ক্যাশ পে করেন আর কার্ড হলে ডি কাউন্টার। পেমেন্ট করে পেমেন্ট স্লিপের কনফার্মেশন কপি নিয়ে আবার সাবমিশন কাউন্টারে গিয়ে তাকে পেমেন্টের এক কপি দিয়ে আপনার কাজ শেষ।
সাবমিশন কাউন্টার থেকে একটা স্লিপ দেবে। যেটাতে ট্র্যাকিং নম্বর থাকবে। আপনি চাইলে ভিএফএসের ওয়েবসাইটে ঢুকে ট্র্যাক করতে পারবেন ভিসার আপডেটের জন্য। নরমালি ভিসা রেডি হতে ১৫ থেকে ২০ কর্মদিবস সময় লাগে তবে অফিসিয়ালি কোনো কারণে দেরি হলে সেটা তারা আপনাকে মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে।
- আরো পড়ুন: খুব সহজেই নাগরিকত্ব পাবেন ৮ দেশে!
- আরো পড়ুন: দুবাই থেকে কানাডায় সরাসরি ভিসা
- আরো পড়ুন: (দামসহ)ছেলেদের সেক্সর বাড়ানোর টেবলেটের নাম
সমস্ত প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ লিংক নিচে দিয়ে দেয়া হলো। যদি কারো কোনও প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন:-
পর্তুগালের ভিসার জন্য ফরম পূরণ করবেন- https://www.vistos.mne.pt/pt/,
ভিএফএসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবেন এখান থেকে- pt.vfsglobal.co.in/
পর্তুগাল ফরেইন মিনিস্ট্রির সত্যায়িত- ministry of foreign affairs portugal,
বাংলাদেশ দূতাবাস পর্তুগালের সত্যায়িত- Embassy of Bangladesh, Lisbon, Portugal,
বাংলাদেশ দূতাবাস নিউ দিল্লির সত্যায়িত- High Commission of Bangladesh New delhi,
পর্তুগিজ বর্ডার অ্যান্ড ফরেইনার সার্ভিস- সেফ অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য- https://www.sef.pt/pt
টার্মও দে রেস্পন্সিভলিদাদে ফরম পাবেন এখানে- TERMO DE RESPONSABILIDADE
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।