দুর্বা ডেস্ক :: করোনাকালে বিদেশফেরত কর্মীদের ৪৭ শতাংশ এখনো বেকার। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির একটি জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল (শুক্রবার ৩০ এপ্রিল) অনলাইনে বিদেশফেরতদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্নেষণ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশফেরত কর্মীরা দেশে কোনো কাজ পাননি। পরিবারের অন্যদের আয় থেকে অথবা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলছে তারা। বাকি ৫৩ শতাংশ বিদেশফেরত কর্মী কৃষিকাজ, ছোট ব্যবসা বা শ্রমিকের কাজ করে পরিবার চালাচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, বিদেশফেরতদের ৯৮ শতাংশই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর বিগত ২০২০ সালের মার্চ থেকে ১৪ মাসে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছে।
ব্র্যাকের জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ৩৫ শতাংশ ছুটিতে দেশে এসে কোভিডের কারণে বিদেশ ফিরতে পারেননি। ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। ১৬ শতাংশ বলছেন তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
১২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা একেবারেই চলে এসেছে। ২ শতাংশ অসুস্থতার কারণে ফিরেছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান প্রতিবেদনটি তুলে ধরে জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর বিগত ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের ওপর জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিলো। ১ বছরে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে তা জানতেই দ্বিতীয় জরিপ করা হয়।
অভিবাসনপ্রবণ ৩০ জেলায় এই বছরের মার্চ ও এপ্রিলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। বিগত ২০২০ সালের যাদের সাথে কথা বলেছিল ব্র্যাক তারাসহ মোট এক হাজার ৩৬০ জন বিদেশফেরত কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্র্যাক। তাদের মধ্যে ২০৭ জন আবার বিদেশে ফিরে গেছেন। ৪১৭ জন বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাদের উত্তরের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
উত্তরদাতাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এবং মালয়েশিয়া থেকে ফেরত এসেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ পুরুষ। চার দশমিক ৩২ শতাংশ নারী। এর মধ্যে ৮৮ দশমিক ১ শতাংশ গ্রামে বাস করেন।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ২০২০ সালের বিদেশফেরতদের ৮৭ শতাংশ বলেছিলেন তাদের আয়ের উৎস নেই। এবার দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ কোনো না কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কৃষিকাজে, ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ দিনমজুরি বা একই ধরনের কাজ করছেন। ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছেন। বাকি ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ অন্য কাজ করছেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ জানান, গত এক বছরেও তারা কাজ জোগাড় করতে পারেননি। পরিবারের আয় বা ধারদেনা করে চলছেন। উত্তরদাতাদের ২৮ শতাংশ বলেছেন, তারা ইতোমধ্যেই ধারদেনায় জর্জরিত। ৭২ শতাংশ বলেছেন, আবার তারা বিদেশফেরত যেতে চান।
বিগত ২০২০ সালের জরিপে অংশ নেয়া ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছিলো তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এবার ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, অপর্যাপ্ত আয়, বেকারত্ব, বিদেশে ফিরে যেতে না পারা ও পারিবারিক কারণে মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন।
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুণ।