জেনে নিন কিভাবে ফ্রান্সের ভিসা পাওয়া যাবে। আসুন এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ফ্রান্স দূতাবাসের মাধ্যমে সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন
ভিসা বিভাগে যোগাযোগ
ফোন:(০০৮৮০২) ৮৮২৩৩২০/৮৮২৩৪৪৩
ফ্যাক্স: (০০৮৮০২) ৯৮৮৩৮৫১
ই-মেইল: webmestre.dacca-amba@diplomatie.gouv.fr
- আরো পড়ুন: ভিসা ছাড়া কীভাবে নেপাল ভ্রমণে যাবেন
- আরো পড়ুন: পরকীয়া ও গ্যাসলাইটিং..
- আরো পড়ুন: ফেসবুকে ডার্ক মোড চালু করার নিয়ম ও সুবিধা
সেনজেন (Schengen) ভিসা
অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, এবং সুইজারল্যান্ডে একক ভিসায় ভ্রমণ ব্যবস্থা হল সেনজেন ভিসা। এ ভিসা নিয়ে ইউরোপের এই ২৬ টি দেশে স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করা যায় এবং সর্বোচ্চ ৩ মাস থাকা যায়। এ ভিসার মেয়াদ ৬ মাস, অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যে যেকোনো ৩ মাস ইউরোপের দেশগুলোতে কাটানো যায়। ইউরোপে প্রবেশের প্রথম দিন থেকে দিন গণনা শুরু হয়। তবে সেনজেন ভিসার আওতায় স্থায়ীভাবে বসবাস বা কাজের অনুমতি দেওয়া হয় না।
- ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস থেকে বিজনেস ভিসা এবং ভ্রমণ ভিসা ২ ধরনের সেনজেন ভিসাই দেওয়া হয়। তবে ব্যবসা ভিসা কাজের অনুমতি দেয় না, কেবল বাণিজ্য সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য এ ভিসা।
- ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস থেকে অস্ট্রিয়া এবং পর্তুগালের জন্যও সেনজেন ভিসা ইস্যু করা হয়।
সেনজেন (Schengen) ভিসা আবেদনের নিয়ম
- যিনি ফ্রান্স যেতে ইচ্ছুক তাকেই ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করতে হবে। কোন ট্রাভেল এজেন্ট বা অন্য কেউ আবেদন করতে পারেন না।
- মূল গন্তব্য দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। আর গন্তব্য স্থির না থাকলে প্রথম গন্তব্য যে দেশ সে দেশের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। কাজেই মূল গন্তব্য বা প্রথম গন্তব্য ফ্রান্স হলেই কেবল এ ধরনের ভিসার জন্য ফ্রান্স দূতাবাসে আবেদন করা যাবে।
- ৩ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস সময় নিয়ে ভিসার আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- ভিসা পাওয়ার জন্য অন্তত ১০ কর্মদিবস অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
- ভিসা আবেদন এবং ভিসা ফি জমা দেয়া ভিসা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয় না।
- ভিসা ইস্যু হওয়ার পর ভ্রমণের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা যায় না।
- সকল কাগজপত্রের ফটোকপি এবং মূলকপি প্রদর্শন করতে হবে।
- কাগজপত্রগুলো ইংরেজি বা ফরাসী ভাষায় অনুদিত হতে হবে।
সব ধরনের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি
- ফ্রান্স দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা আবেদন ফরম ডাউনলোড করে বড় হাতের অক্ষরে পূরণ করে তারিখসহ সাক্ষর করতে হবে।
- পরিকল্পিত সফর শেষেও পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত তিন মাস থাকতে হবে।
- সাদা পটভূমিতে তোলা ৩৫×৪৫ মিমি সাইজের ২ কপি রঙিন ছবি দিতে হবে, রঙিন চশমা বা মাথায় টুপি পরে ছবি তোলা যাবে না।
- পাসপোর্টের যে পৃষ্ঠাগুলোয় তথ্য দেওয়া হয় সেগুলোর স্পষ্ট ফটোকপি।
- আবেদন প্রক্রিয়াকরণ মাশুল হিসেবে ৬০ ইউরো সমপরিমাণ অর্থ, যেটি অফেরতযোগ্য।
তবে বিজনেস ভিসার জন্য আরো কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়:
- ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রমাণের জন্য সেনজেন দেশগুলোর কোথায় যাওয়া হচ্ছে তা উল্লেখ করে সেমিনার বা ওয়ার্কশপের আমন্ত্রণপত্র দেখাতে হয়,
- আমন্ত্রণকারী ভ্রমণ ব্যয় বহন করলে তার প্রমাণপত্রও দিতে হয়,
- ব্যবসার রেজিষ্ট্রেশন এবং ট্রেড লাইসেন্সের কপি,
- হোটেল বুকিং এর কাগজ পত্রের কপি।
ভ্রমণ ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র দিতে হয়:
স্পন্সর থাকলে
- স্পন্সরের পাসপোর্ট বা আইডি কার্ডের মূলকপি এবং ফটোকপি,
- বেকার নয় এটা প্রমাণের জন্য বিগত ৩ মাসের বেতনের প্রমাণপত্র
স্পন্সর না থাকলে
- হোটেল বুকিং এর প্রমাণপত্র,
- ছুটির মেয়াদ উল্লেখ করে চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সনদ,
- বিগত ৬ মাসে ব্যাংক একাউন্টের বিবরণী,
- অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্কের প্রমাণপত্রও চাওয়া হয়।
এয়ারপোর্ট ট্রানজিট ভিসা
বিমান ভ্রমণের সময় সেনজেন দেশগুলোয় যাত্রাবিরতি করলে এ ধরনের ভিসা নিতে হয়। তবে এ ভিসার আওতায় বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকার বাইরে যাওয়া যায় না। ট্রানজিট এলাকার বাইরে গিয়ে হোটেলে থাকতে চাইলে ট্যুরিস্ট ভিসা নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- গন্তব্য দেশের ভিসা
- বিমান টিকেট
এক্ষেত্রে ভ্রমণ স্বাস্থ্য-বীমা প্রয়োজন হয় না।
বিশেষ ক্ষেত্রে
চিকিৎসা: চিকিৎসার জন্য ফ্রান্সে যেতে চাইলে প্রথম একজন বাংলাদেশী চিকিৎসকের দেয়া সনদ নিতে হবে। এরপর ফ্রান্সে যে চিকিৎসক বা হাসপাতালে দেখানো হবে সেখান থেকে প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে চিকিৎসার আনুমানিক খরচ এবং সময়ের উল্লেখ থাকবে। রোগী বা রোগী আত্মীয়ের সামর্থ্যোর প্রমাণপত্র এবং অগ্রিম চিকিৎসার ব্যয় অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে এই মর্মে প্রমাণপত্র।
শিশুদের ক্ষেত্রে: বাবা-মায়ের পাসপোর্টে শিশুরা ভ্রমণ করতে চাইলে আলাদা একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে, সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া ছুটির অনুমতিপত্র দিতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সীরা অভিভাবকের সাথে বা আলাদা যেভাবেই ভ্রমণ করুক না কেন, অভিভাবকের সম্মতিপত্র প্রয়োজন হয় ভিসা নেবার জন্য।
বিদেশী নাগরিকদের জন্য: বিদেশী নাগরিকগণও ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস থেকে ভিসা নিতে পারেন। তাদের নিয়মকানুনও একই তবে বাংলাদেশে থাকার ভিসার মেয়াদ ভ্রমণ সময় শেষ হওয়ার পর অন্তত ৩ মাস মেয়াদ থাকতে হবে।
ছাত্র ভিসা
আবেদনের শর্ত
ফ্রান্সের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এবং ভর্তির প্রমাণস্বরূপ কাগজপত্র হাতে আসতে হবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য, কাগজপত্র ও ফি:
- বৈধ পাসপোর্ট
- দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা আবেদনের ফরম পাওয়া যায় সেটি ডাউনলোড করে ২ কপি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদন ফরম দূতাবাস অফিসেও পাওয়া যায়।
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বিমান টিকেট
- ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ৯৯ ইউরো সমপরিমাণ অর্থ জমা দিতে হয়, যা অফেরতযোগ্য।
- জন্ম সনদ
- জীবনবৃত্তান্ত
- সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি
- ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চিঠি।
- ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশের কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে দেয়া স্বাস্থ্য বীমার সনদ প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকা ওয়েবসাইটে ফ্রান্স দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
- টিউশন ফি জমা দেয়া হয়ে থাকলে তার রশিদ,
- ফরাসী বা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ (যদি থাকে) হিসেবে অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ থেকে নেয়া ফরাসী ভাষার কোর্সের সনদ, কিংবা টোফেল/আইএলটিএস সনদের কপি জমা দিতে হবে।
- বাবা-মা বা যিনি খরচ বহন করবেন তার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর।
- বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চাইলে তার প্রমাণপত্র।
অন্যান্য তথ্য:
সকল কাগজপত্রের মূলকপি ও ফটোকপি জমা দিতে হবে, আর সব কাগজপত্র অবশ্যই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতে হবে।
প্রক্রিয়া
- কাগজপত্রসহ পুরো ফাইলটি প্রস্তুত করতে হবে।
- দূতাবাসের কালচারাল অ্যাটাশের সাথে ই-মেইলে (fleur.meynier@diplomatie.gouv.fr) যোগাযোগ করে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। নির্ধারিত দিনে ফাইল নিয়ে উপস্থিত হতে হবে।
- ভিসা বিভাগের জন্য আরেকটি ঐচ্ছিক এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হবে।
- পর্যালোচনা শেষে ভিসা দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে এবং মূল কাগজপত্রগুলো ফেরত দেয়া হবে।
- আরো পড়ুন: অভিবাসী ভিসা পিটিশনের স্ট্যাটাস
- আরো পড়ুন: অভিবাসী ভিসার প্রতীক্ষার সময়
- আরো পড়ুন: শিক্ষা ভিসার আবেদন নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
প্রয়োজনীয় সময়
পুরো প্রক্রিয়াটিতে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই যথাশীঘ্র সম্ভব আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়।
প্রস্তুতি:
ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে ফ্রান্সের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় দূতাবাস থেকে। এজন্য অলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ধানমন্ডি, বারিধারা বা উত্তরা শাখায় যোগাযোগ করা যেতে পারে। এখানে ফরাসী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী ও কনসার্ট আয়োজন করা হয়। ওয়েবসাইট: www.afdhaka.org
যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।