মাইগ্রেনের নিস্তার খাদ্যাভ্যাসে

জেনে নিন মাইগ্রেনের নিস্তার খাদ্যাভ্যাসে কিভাবে সম্ভব। আসুন এ বিষয়ে আলোচনা করে আজকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। মাইগ্রেন- একটু একটু করে শুরু হয়, শুরুতেই ছড়িয়ে পরে আতঙ্ক। কতক্ষণ স্থায়ী হবে এই বিকট মাথা ব্যথা, কতক্ষণ থমকে থাকবে জীবনের স্বাভাবিক গতি! আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা এই রোগে আক্রান্ত। মাথা ব্যথার সঙ্গে থাকে বমি বমি ভাব এবং অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় আলো ও বিকট শব্দের সমন্বয়ে। কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এই ব্যথা।

কারো কারো ক্ষেত্রে আবার বিশেষ কোনো খাবার, সিগারেট অথবা গাড়ির ধোঁয়া, উগ্র গন্ধ, ঘুমের ঘাটতি, অতিরিক্ত গরম অথবা ঠাণ্ডা এমনকি আবহাওয়ার পরিবর্তনেও এই মাইগ্রেন তীব্র আকার ধারণ করে। মাইগ্রেনের প্রতিটি রোগী ভিন্ন ভিন্ন কারণের সমন্বয়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এই মাইগ্রেনে আক্রান্ত হওয়ার বয়সের সীমারেখা ১০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।



তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মাইগ্রেনের নিস্তার খাদ্যাভ্যাসে কিভাবে সম্ভব:

মাইগ্রেনের সমস্যা হলে কী করবেন?

মাইগ্রেনের সমস্যা অত্যাধিক বেড়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে মাইগ্রেনের কারণ যাই হোক না কেন, তার সাথে আছে খাবারের জটিল সমীকরণ। মাইগ্রেনের ব্যথা চলাকালীন সময়ে সাধারণত দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার, চকলেট, সফট ড্রিংকস, সাইট্রাস জাতীয় টক ফল, গমের তৈরি খাবার (রুটি, নুডলস, পাস্তা) এড়িয়ে চলাই ভালো। অবশ্যই ট্যানিন এবং ক্যাফেইন যা আছে চা এবং কফিতে- তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।

মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা টেস্টিং সল্ট যে সব খাবারে আছে তা এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।এ ছাড়া খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন ও মাইগ্রেন ট্রিগার করার একটি কারণ।

তবে এসব খাদ্য উপাদান যে, সব রোগীর জন্য ক্ষতিকারক তা নয়। রোগীর নিজেকেই চিহ্নিত করতে হবে এসব খাবারের মধ্যে কোন খাবারটি তার মাইগ্রেনের ব্যথা তৈরি হওয়া বা ব্যথার লক্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ। মাইগ্রেন রোগীদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন চলাকালীন সময়ে নিরাপদ খাদ্য হতে পারে ব্রাউন রাইস, রঙিন শাকসবজি, হালকা মশলা ও হালকা লবণের খাবার, মধুযুক্ত খাবার, গ্রিন টি ইত্যাদি।

যারা খুব জটিল মাইগ্রেন রোগে আক্রান্ত তারা সন্দেহের তালিকায় থাকা খাবার পুরো দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারবেন তাদের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা। শুধুমাত্র খাদ্য নয়, খাদ্য গ্রহণের সময়ও অত্যন্ত জরুরি বিষয়। যাদের মাইগ্রেন রয়েছে, তাদের কোনোভাবেই নিয়ম বাদ দেওয়া যাবে না। ব্রেকফাস্টসহ দৈনিক ৪ থেকে ৫ ভাগে সারাদিনের খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করতে হবে। লম্বা সময় না খেয়ে থাকা অথবা একই সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া মাইগ্রেন রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।

নিষিদ্ধ খাবারগুলো যে কখনোই খাওয়া যাবে না ব্যাপারটা তা নয়। মাইগ্রেন চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে সপ্তাহে একবার অল্প পরিমাণে একটি একটি করে নিষিদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। তাতে করে ধীরে ধীরে সেই নির্দিষ্ট খাদ্যের প্রতি শরীরের সহনশীলতা বাড়তে থাকবে।এছাড়াও আদার রস, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি মাইগ্রেনের নিরাময়ে সহায়তা করে। পাশাপাশি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি আছে কি না।অনেকের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় এস্ট্রোজেন হরমোন ভারসাম্যের অভাবেও মাইগ্রেন অ্যাটাক হতে পারে।বয়সের এই সময়ে লো ফ্যাট, হাই ফাইবার যুক্ত খাবার হরমোন ব্যালেন্স করতে যথেষ্ট সহকারী।



মাইগ্রেন সমস্যা সমাধানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়-

দৈনিক পানি ও পানি জাতীয় খাবারের পরিমাণ। মাইগ্রেনের রোগী যে বয়সের হোক না কেন, কোনো বিশেষ রোগের কারণে যদি তরল খাদ্যের নিষেধাজ্ঞা না থাকে তাহলে অবশ্যই ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ২ থেকে ৩ লিটার তরল এবং তরলজাতীয় খাদ্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকেই কিছুটা স্বস্তি লাভ করতে পারে এই অসহ্য যন্ত্রনাদায়ক ব্যাধি থেকে।

সর্বোপরি, একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে মাইগ্রেনের ধরন এবং খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস অনুযায়ী একটি সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা করাই হবে সবচেয়ে ফলপ্রসূ।

যুক্ত হোন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে এখানে ক্লিক করুন। এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।

এগুলো দেখুন

পেটে গ্যাসের সমস্যায় করণীয় কি? পেটের গ্যাস দূর করার উপায়!

পেটে গ্যাসের সমস্যায় করণীয় কি? পেটের গ্যাস দূর করার উপায়!

আসসালামুয়ালাইকুম অনেক রোগীই আমাদের কাছে আসেন পেটের সমস্যা নিয়ে পেট ফেঁপে থাকে ফুলে থাকে পেটে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *